(বাঁ দিকে) দীপ্সিতা ধর। নরেন চট্টোপাধ্যায় (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
রাজ্য বামফ্রন্টের এক শীর্ষনেতার পাড়াতেই ফ্রন্টে এবং ফ্রন্টের নির্বাচনী জোটে ফাটলের ছবি। কংগ্রেসের লোকজনকে পতাকা-সহ দেখেই শ্রীরামপুরের বাম প্রার্থী দীপ্সিতা ধরের প্রচার মিছিল ‘বয়কট’ করে চলে গেল ফরওয়ার্ড ব্লক। এই ‘ব্যাকওয়ার্ড মুভ’-এর নেতৃত্বে ফরওয়ার্ড ব্লকের রাজ্য সম্পাদক নরেন চট্টোপাধ্যায়। শনিবার সন্ধ্যায় ঘটনাটি ঘটেছে হুগলির বৈদ্যবাটিতে জোড়া অশ্বত্থতলা এলাকায়। অদূরে বেণি ব্যানার্জি লেনে নরেনের বাড়ি।
স্থানীয় সিপিএম সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার বৈদ্যবাটি পুর এলাকার তিনটি ওয়ার্ডে দীপ্সিতার প্রচার কর্মসূচি ছিল। সেই মতো সিপিএম জমায়েত করেছিল। যে ১৮ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে, সেখানে সিপিএমের এখনও নজরে পড়ার মতো সাংগঠনিক শক্তি রয়েছে। আবার পুরসভার এই ওয়ার্ড দীর্ঘ দিন ছিল ফরওয়ার্ড ব্লকের দখলে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, জমায়েতের শুরুতে সিপিএমের কর্মীদের সঙ্গে ফরওয়ার্ড ব্লকও যোগ দেয়। ছিলেন নরেনও। খানিক ক্ষণ পর জনা কয়েক কংগ্রেস কর্মী হাত চিহ্ন আঁকা পতাকা নিয়ে উপস্থিত হন। তা দেখেই হঠাৎ জমায়েত ছেড়ে বেরিয়ে উল্টো দিকে হাঁটা দেন নরেন। নেতার পিছু পিছু হাঁটতে শুরু করেন ফরওয়ার্ড ব্লকের কর্মীরাও।
কেন এমন করলেন? আনন্দবাজার অনলাইনকে ফরওয়ার্ড ব্লক রাজ্য সম্পাদক নরেন বলেন, “আমরা বামফ্রন্টের কর্মসূচি জেনে গিয়েছিলাম। কিন্তু কংগ্রেস থাকলে আমরা কোনও কর্মসূচিতে থাকব না, এটা আমাদের পার্টির সিদ্ধান্ত। তাই চলে এসেছি।” স্থানীয় সিপিএম নেতা তথা এরিয়া কমিটির সদস্য অবনী ভট্টাচার্য বলেন, “ফরওয়ার্ড ব্লকের রাজ্য সম্পাদক আমায় এসে জিজ্ঞেস করেন কংগ্রেসের কথা। আমি তাঁকে জানাই, আমরা এলাকাগত ভাবে কংগ্রেসকে কিছু জানাইনি। কেন্দ্রীয় ভাবে কংগ্রেসকে জানানো হয়ে থাকলেও থাকতে পারে।” ফরওয়ার্ড ব্লক বেরিয়ে গেলেও সিপিএম নিজের সাংগঠনিক শক্তি দিয়েই শনিবার দীপ্সিতাকে নিয়ে প্রচার করেছে। সূত্রের খবর, সেখানে কংগ্রেসকে খুব একটা প্রথম সারিতে ঘেঁষতে দেওয়া হয়নি। স্থানীয় সূত্রে এ-ও জানা গিয়েছে, সিপিএমের জমায়েতে তরুণ প্রজন্মের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। দীর্ঘ দিন ‘ঘরে ঢুকে থাকা’ অনেক বাম কর্মী-সমর্থক নতুন করে ভোটের প্রচারে বেরিয়েছেন বলেও দাবি স্থানীয় সিপিএমের যুব নেতৃত্বের।
সিপিএম সূত্রে জানা গিয়েছে, তাদের কর্মী-সমর্থকেরাও জানতেন না যে কংগ্রেস থাকবে। কী ভাবে ওটা হল তা নিয়ে ধন্দ রয়েছে। তবে কংগ্রেসের প্রতি হেমন্ত বসু ভবনের অ্যালার্জি নিয়ে তোপ দেগেছে বিধান ভবন। প্রদেশ কংগ্রেসের অন্যতম মুখপাত্র সুমন রায়চৌধুরী বৈদ্যবাটির ঘটনা প্রসঙ্গে বলেন, “ফরওয়ার্ড ব্লক আদৌ বামফ্রন্টে আছে কি না তা নিয়েই সন্দেহ রয়েছে। ওরা তো ফ্রন্টের সিদ্ধান্তই মানে না। আর তার চেয়ে বড় কথা ফরওয়ার্ড ব্লক প্রান্তিক শক্তি। এ সব করে বাংলায় তৃণমূল এবং বিজেপি-বিরোধী পরিসরে আরও নিজেদের অপ্রাসঙ্গিক করে দিচ্ছে।”
প্রার্থী দেওয়া নিয়ে বামফ্রন্টের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সুর চড়িয়েছিল ফরওয়ার্ড ব্লক। পুরুলিয়ায় কংগ্রেসের প্রার্থী নেপাল মাহাতোর বিরুদ্ধেও প্রার্থী দিয়েছে তারা। যদিও সেই প্রার্থীকে আনুষ্ঠানিক ভাবে বামফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে স্বীকৃতি দেননি বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু। পুরুলিয়ায় সিপিএমের যা শক্তি রয়েছে, তা নিয়ে তারা কংগ্রেসের প্রার্থীর হয়েই ময়দানে নেমেছে। আবার ফরওয়ার্ড ব্লক যে ফ্রন্টে নেই তেমন কোনও ঘোষণাও আলিমুদ্দিন স্ট্রিট করেনি। তবে ইদের আগের দিন সিপিএম রাজ্য দফতরের সাংবাদিক সম্মেলনে খানিকটা আগ্রাসী ভঙ্গিতেই রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেছিলেন, “আমরা ফরওয়ার্ড ব্লককে বেশি কথা বলতে বারণ করেছি।”
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, একটা সময় বৈদ্যবাটি-শেওড়াফুলি এলাকায় পাঁচ-ছ’টি ওয়ার্ডে ফরওয়ার্ড ব্লকের শক্তি ছিল। পুরসভায় বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডে জিততও তারা। তবে সবটাই মূলত সিপিএমের ঘাড়ে চেপে। আবার সিপিএমের নেতারা ঘনিষ্ঠ আলোচনায় বলেন, পুরসভায় ফরওয়ার্ড ব্লকের যতটা গরজ দেখা যায়, লোকসভা-বিধানসভায় তা দেখা যায় না। কারণ সেই ভোটে কাস্তে-হাতুড়ি-তারার প্রার্থী থাকেন। ফলে স্থানীয় স্তরে শরিক দলের সঙ্গে সিপিএমের যে খুব মধুর সম্পর্ক, তা নয়। আবার কংগ্রেস নিয়েও ধোঁয়াশা রয়েছে। সব মিলিয়ে বামকর্মীদের বক্তব্য, নেতৃত্ব স্তরে সমন্বয়ের অভাবের কারণেই ফলিত স্তরে ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছে। যা ভোটের সময়ে কাঙ্ক্ষিত নয়।