ফুলবদল: বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগদান মেদিনীপুরে। —নিজস্ব চিত্র।
লোকসভা ভোটের মাত্র ২০ দিন আগে মেদিনীপুরে বিজেপিতে ভাঙন। প্রদীপ পট্টনায়েক, বঙ্কিম মাইতির মতো বিজেপি নেতারা যোগ দিলেন তৃণমূলে। রবিবার পশ্চিম মেদিনীপুরের তৃণমূলের জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা, রাজ্য সহ-সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার, মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী জুন মালিয়া তাঁদের হাতে দলীয় পতাকা তুলে দেন।
খড়্গপুর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে পাঁচ বার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন প্রদীপ। তা ছাড়াও অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলায় বিজেপির প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই দল করে আসছেন তিনি। এক বার লোকসভা নির্বাচনে মেদিনীপুর আসন থেকেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন প্রদীপ। ১৯৭৫ সাল থেকে খড়্গপুর কলেজে ছাত্র রাজনীতি শুরু করেন এবিভিপি দিয়ে। তার পর জনতা পার্টি এবং বিজেপিতে যোগদান। সেই প্রদীপের তৃণমূলে যোগদান নিয়ে বিস্মিত স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্বের একাংশও। তৃণমূল নেতা জয়প্রকাশ বলেন, ‘‘অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলার বিজেপির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য প্রদীপ পট্টনায়েক বিজেপির নীতি ছেড়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরতে এসেছেন। বিজেপির ছাত্র সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন উনি।’’ বিজেপিত্যাগী ওই তৃণমূল নেতা আরও বলেন, ‘‘বিজেপির সংগঠনের কোমর ভেঙে যাবে প্রদীপের যোগদানে। আসলে কেন্দ্রীয় বঞ্চনা আর বাংলা মেনে নেবে না।’’
তৃণমূলে যোগ দিয়ে প্রদীপের মন্তব্য, ‘‘যে আদর্শ নিয়ে বিজেপি করেছি, তা এখন আর নেই। খড়্গপুর কলেজে প্রথম এবিভিপি করেছি। আমি চাইনি যে আমাকে ভোটে লড়ার টিকিট দিন। কিন্তু, মেদিনীপুর আসন নিয়ে শুধু পরীক্ষানিরীক্ষা করেছে ওরা। দিলীপবাবু (বিদায়ী সাংসদ) জিতেছিলেন। কেন তাঁকে সরিয়ে অন্য কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হল? ২০১৯ সালের উপনির্বাচনে বিরোধিতা করেছিলাম। বলেছিলাম, খড়্গপুরে শিক্ষিত কাউকে প্রার্থী করতে। তখন আমাকে বহিষ্কার করবে বলেছিল। দিলীপ ঘোষ ২০২১ সালে অনুরোধ করেছিলেন বিরোধিতা না করার জন্য।’’ এর পর তিনি ঘাটাল কেন্দ্রে প্রার্থী বাছা নিয়েও বিজেপিকে নিশানা করেন। প্রদীপের কটাক্ষ, ‘‘শুভেন্দুকে (অধিকারী) ধরে ঘাটালের লোকসভা প্রার্থী হয়ে গেল হিরণ। আর মেদিনীপুরের যিনি বিজেপি প্রার্থী হয়েছেন (অগ্নিমিত্রা পাল), তাঁকে চিনি না।’’
বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে আসা বঙ্কিম ছিলেন কেশিয়াড়িতে বিজেপির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। এ ছাড়াও ফুটবলার মুক্তিপ্রসাদ মান্না, সমাজসেবী ইতু গঙ্গোপাধ্যায় প্রমুখ যোগ দিয়েছেন তৃণমূলে। এই যোগদান নিয়ে তৃণমল নেতা সুজয় বলেন, ‘‘দিদির (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) আদর্শ মেনে যোগদান করতে চেয়েছিলেন ওঁরা। তাই যোগদান করানো হল। তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় নিশ্চয় দলের লাভ হবে।’’
আর এ নিয়ে বিজেপির জেলা মুখপাত্র অরূপ দাসের বক্তব্য, ‘‘প্রদীপ পট্টনায়েক বিগত ছয়-সাত বছর বিজেপির কোনও কর্মসূচিতে তেমন ভাবে ছিলেন না। এত দিন বিজেপিতে থেকে সমস্ত সুযোগ-সুবিধা নেওয়ার পর এখন দলের বিরুদ্ধে কথা বলে যদি তৃণমূলে যোগদান করতে চান, তাহলে করতেই পারেন।’’