গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
এনডিএ ছেড়ে কি আবার কাকা শরদ পওয়ারের ‘ঘরে’ ফিরতে চলেছেন ভাইপো অজিত? বুধবার দিল্লিতে এনডিএর বৈঠকে মহারাষ্ট্রের ‘মহাদ্যুতি’ (বাংলা তর্জমায় মহাজুটি) সরকারের উপমুখ্যমন্ত্রী তথা এনসিপি প্রধান অজিতের অনুপস্থিতির পরে শুরু হয়েছে এই জল্পনা।
রবিবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাড়িতে বৈঠকে বসেছিলেন এনডিএ শিবিরের নেতারা। প্রধানমন্ত্রীর ঠিক পাশে টিডিপি প্রধান চন্দ্রবাবু নায়ডুকে বসে থাকতে দেখা যায়। তাঁর পাশে বসেছিলেন নীতীশ কুমার। অমিত শাহ, রাজনাথ সিংহ, জেপি নড্ডার মতো বিজেপি নেতারা ছাড়াও শরিক দলের প্রধান নেতারা— শিবসেনার একনাথ শিন্ডে, এলজেপির চিরাগ পাসোয়ান, আরএলডির জয়ন্ত চৌধরি, জনসেনা দলের পবন কল্যাণ, ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু ছিলেন না এনসিপি প্রধান অজিত। তাঁর গোষ্ঠীর তরফে বৈঠকে গিয়েছিলেন প্রফুল্ল পটেল। যাঁর বিজেপি-ঘনিষ্ঠতা নিয়ে দলেরই একাংশ ক্ষুদ্ধ বলে মহারাষ্ট্র রাজনীতিতে জল্পনা রয়েছে।
এনসিপি প্রধান শরদের নির্বাচনী প্রতীক ঘড়ি এবং উদ্ধব ঠাকরের নেতৃত্বাধীন শিবসেনার প্রতীক তির-ধনুক ‘চুরি’ করেছেন যথাক্রমে অজিত এবং একনাথ শিন্ডে— এই অভিযোগের তরঙ্গ ছিল ভোটের মহারাষ্ট্রের সর্বত্র। ভোটের ফল বুঝিয়ে দিয়েছে, উদ্ধব এবং শরদের প্রতি সহানুভূতি আছড়ে পড়েছে ভোটযন্ত্রে। গত বারের লোকসভায় মহারাষ্ট্রে এনডিএ-র চেহারা ছিল ভিন্ন। উদ্ধব ঠাকরের নেতৃত্বাধীন শিবসেনার সঙ্গে সে বার জোট গড়ে লড়ে এনডিএ মহারাষ্ট্রের মোট ৪৮টি আসনের মধ্যে পেয়েছিল ৪১টি আসন। এ বার বিরোধী জোট মহাবিকাশ আগাডী তথা ইন্ডিয়া মঞ্চ পেয়েছে ৩০টি আসন। তার মধ্যে কংগ্রেস ১৩টি, শরদ পওয়ারের এনসিপি আটটি এবং উদ্ধবের শিবসেনা ন’টি আসন পেয়েছে। অন্য দিকে, বিজেপির নেতৃত্বাধীন মহাদ্যুতি জোট (বিজেপি, অজিত পওয়ারপন্থী এনসিপি, একনাথ শিন্ডেপন্থী শিবসেনা) পেয়েছে ১৭টি আসন। একটি পেয়েছেন নির্দল প্রার্থী তথা প্রাক্তন কংগ্রেস নেতা বিশাল পাটিল। অজিতপন্থী এনসিপি পেয়েছে মাত্র একটি আসন।
২০২৩ সালের ২ জুলাই অজিতের বিদ্রোহের পরেই এনসিপির অন্দরের সমীকরণ বদলে গিয়েছিল। অজিত-সহ ন’জন বিদ্রোহী এনসিপি বিধায়কের মন্ত্রিত্ব এবং ভাল দফতর লাভের পরে পরিষদীয় দলের অন্দরে ক্রমশ তাঁর শিবিরের পাল্লা ভারী হতে থাকে। সাংসদদের একাংশও তাঁর দিকে যান। শেষ পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে দলের নিয়ন্ত্রণ যায় অজিতের হাতেই। কমিশনের রায়ের পরেই মহারাষ্ট্র বিধানসভার স্পিকার, বিজেপি বিধায়ক রাহুল নরভেকর অজিত গোষ্ঠীকে ‘এনসিপি পরিষদীয় দল’ হিসাবে মর্যাদা দেন। তবে তিনি জানান, শরদ অনুগত বিধায়কদের পদ খারিজ করা হবে না।
এর পরে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে বিচারপতি সূর্য কান্ত এবং বিচারপতি কেভি বিশ্বনাথনকে নিয়ে গঠিত সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ জানায়, লোকসভা নির্বাচনে অজিত গোষ্ঠীর হাতেই থাকল ‘এনসিপি’ নাম এবং নির্বাচনী প্রতীক ‘ঘড়ি’ ব্যবহারের অধিকার। এ বারের ভোটে ‘ঘড়ি’ চিহ্ন নিয়ে বিজেপি এবং শিন্ডেসেনার সঙ্গে জোট বেঁধে লড়ে মাত্র একটি আসনে জিতেছে অজিতের দল। অন্য দিকে, নির্বাচন কমিশনের বরাদ্দ করা নতুন প্রতীক তূর্যবাদক (শিঙাবাদক) নিয়ে লড়ে জিতেছে আটটি আসনে।
১৯৯৯ সালের জুন মাসে সনিয়া গান্ধীর নেতৃত্ব এবং ‘বিদেশে জন্ম’ নিয়ে প্রশ্ন তুলে কংগ্রেস ছেড়েছিলেন শরদ। গড়েছিলেন নতুন দল এনসিপি। সে সময় ভাইপো অজিত ছিলেন তাঁর পাশে। আড়াই দশক পরে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে সেই দলই তাঁর হাতছাড়া হয়। কমিশনের তরফে জানানো হয়, শরদগোষ্ঠীর নতুন নাম হবে ‘ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টি (শরদচন্দ্র পওয়ার) বা এনসিপি (এস)।
লোকসভা ভোটে অজিত এবং একনাথ শিন্ডের বিরুদ্ধে ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ এবং ‘ষড়যন্ত্রের’ ধারাবাহিক অভিযোগ এনে প্রচার করে গিয়েছিলেন কংগ্রেসের মল্লিকার্জুন খড়্গে, পওয়ার এবং উদ্ধব। মরাঠা সমাজে সবচেয়ে বড় সংস্কার সবচেয়ে বৃদ্ধ মানুষটির প্রতি বাড়তি যত্নআত্তি, তাঁকে সব সময়ে আগলে রাখা। কিন্তু ‘দাদা’ (ভাইপো অজিত পওয়ার) ‘সাহেবের’ (শরদ) ঘরে বড় হয়ে তাঁরই লোক, নাম ভাঙিয়ে নিলেন, দলের এত বছরের ঐতিহ্যের ঘড়িকেও (এনসিপি-র আদি প্রতীকচিহ্ন) ‘চুরি’ করে নিলেন। এটা মেনে নিতে পারেনি মানুষ।