India Lok Sabha Election Results 2024

২৮ বছরের এনডিএর সঙ্গে টক্কর দিল এক বছর আগে গড়া ‘ইন্ডিয়া’! সহযোগী বাড়াতে আসরে পওয়ার?

ভোটের ফল এবং প্রবণতা বলছে বিজেপি একক ভাবে আসনসংখ্যা ২৪০-এর আশপাশে হতে চলেছে। ৫৪৫ আসনের (দু’টি মনোনীত আসন-সহ) লোকসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজন ২৭৩টি।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০২৪ ২০:২৩
Share:

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

অষ্টাদশ লোকসভা নির্বাচনে দৌড়ে ছিল মূলত দু’টি গোষ্ঠী বা জোট। প্রথমত, বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ। দ্বিতীয়ত, কংগ্রেস, তৃণমূল, বাম-সহ বিভিন্ন আঞ্চলিক শক্তির যৌথমঞ্চ ‘ইন্ডিয়া’ (ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টাল ইনক্লুসিভ অ্যালায়েন্স)। ফল বলছে, শেষ পর্যন্ত বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোটকে হারাতে না পারলেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দলের নিরঙ্কুশ গরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গড়ার সম্ভাবনায় ইতি টেনে দিয়েছে বিরোধী জোট। সাড়ে ১১ মাস আগে গড়ে ওঠা যে জোটের নামকরণে তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।

Advertisement

ভোটের ফল এবং প্রবণতা বলছে বিজেপির একক ভাবে আসনসংখ্যা ২৪০-এর আশপাশে হতে চলেছে। ৫৪৩ আসনের লোকসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজন ২৭৩টি। অর্থাৎ, কেন্দ্রে সরকার গড়ার জন্য টিম মোদীকে নির্ভর করতে হবে এনডিএর দুই শরিক, চন্দ্রবাবু নায়ডুর তেলুগু দেশম পার্টি (টিডিপি) এবং নীতীশ কুমারের জেডিইউ-এর উপর। এরই মধ্যে একটি সূত্রের খবর, এনসিপি(এস) প্রধান শরদ পওয়ার ‘ইন্ডিয়া’য় কলেবর বাড়াতে সক্রিয় হয়েছেন। এনডিএর বেশ কয়েক জন শরিক নেতার সঙ্গেও তাঁর মঙ্গলবার ‘যোগাযোগ’ হয়েছে। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে মমতাও আশাপ্রকাশ করেছেন, আরও কিছু দল অদূর ভবিষ্যতে ‘ইন্ডিয়া’য় শামিল হবে।

গত ১৯ জুলাই বেঙ্গালুরুতে বিজেপি বিরোধী নেতাদের দ্বিতীয় বৈঠকে ‘ইন্ডিয়া’র আবির্ভাবের সঙ্গেই ইতিহাসের পাতায় চলে গিয়েছিল ১৯ বছর আগে গড়ে ওঠা কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ (ইউনাইটেড প্রোগ্রেসিভ অ্যালায়েন্স)। ইউপিএ-র যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০০৪ সালে। তৎকালীন কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গান্ধীর নেতৃত্বে ওই বছর লোকসভা ভোটের আগেই অভিন্ন ন্যূনতম কর্মসূচির ভিত্তিতে গড়ে ওঠে এই জোট। সেই জোটের নেতৃত্বেই পর পর দু’বার ২০০৪ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত কেন্দ্রে সরকার গঠিত হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন মনমোহন সিংহ।

Advertisement

এ বার ‘ইন্ডিয়া’র শরিক দলগুলির মধ্যে অনেক ক্ষেত্রেই সম্পূর্ণ বা আংশিক আসন সমঝোতা হয়েছিল। বাংলায় তৃণমূল, কেরলে বাম, পঞ্জাবে আম আদমি পার্টি (আপ), জম্মু ও কাশ্মীরে পিডিপির মতো কেউ আবার কংগ্রেসের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। ভোটের পর জোটের প্রতিশ্রুতিতে নিজেদের রাজ্যে আলাদা করে লড়েছেন। ২০২৩ সালের ২৩ জুন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী তথা জেডিইউ প্রধান নীতীশ কুমারের ডাকে পটনার বিরোধী জোটের বৈঠকে ১৫টি দল ছিল। জুলাইয়ে বেঙ্গালুরুতে সেই তালিকা বেড়ে হয় ২৬। কিন্তু চলতি বছরের জানুয়ারিতে নীতীশ সদলবলে ফিরে গিয়েছিলেন বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ-তে। মার্চে বিজেপির সহযোগী হয়েছিলেন চন্দ্রবাবু।

লোকসভা ভোট ২০২৪

গত জুলাইয়ে নতুন জোট ‘ইন্ডিয়া’ ঘোষণার সময় যে দলগুলি ছিল সেগুলি হল— কংগ্রেস তৃণমূল, ডিএমকে, আম আদমি পার্টি (আপ), জেডিইউ, রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি), ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা (জেএমএম), এনসিপি (শরদ), শিবসেনা (উদ্ধব), সমাজবাদী পার্টি, রাষ্ট্রীয় লোকদল, আপনা দল (কে), ন্যাশনাল কনফারেন্স, পিডিপি, সিপিএম, সিপিআই, সিপিআই (এমএল) লিবারেশন, আরএসপি, ফরওয়ার্ড ব্লক, এমডিএমকে, ভিসিকে, কেডিএমকে, এমএমকে, ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন মুসলিম লিগ, কেরল কংগ্রেস (মণি) এবং কেরল কংগ্রেস (জোসেফ)। জেডিইউ-র পাশাপাশি উত্তরপ্রদেশের আপনা দল (কে)-ও এখন জোটের বাইরে।

প্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীর নেতৃত্বে ১৯৯৬ সালে গড়ে উঠেছিল এনডিএ। ১৯৯৮ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত বাজপেয়ীর প্রধানমন্ত্রিত্বে এই জোটের সরকার ছিল। তার পর ২০১৪ এবং ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে জিতে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে ফের সরকার গঠন করে এই জোট। তবে গত এক বছরে অন্যতম শরিক পঞ্জাবের শিরোমণি অকালি দল, তামিলনাড়ুর এডিএমকে, জম্মু ও কাশ্মীরে পিডিপি, হরিয়ানায় জেজেপি, রাজস্থানের রাষ্ট্রীয় লোকতান্ত্রিক পার্টি মোদীর সঙ্গ ছেড়েছেন। সহযোগী পাওয়ার জন্য উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনা এবং শরদ পওয়ারের এনসিপি ভেঙে প্রতীক দখলের অভিযোগ উঠেছে বিজেপির বিরুদ্ধে।

আবার জেডিইউর পাশাপাশি এনডিএ ছাড়ার পরেও ফেরত এসেছে অন্ধ্রের তেলুগু দেশম পার্টি, তামিলনাড়ুর পিএমকে, অসমের অসম গণ পরিষদ, এমনকি এলজেপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রামবিলাস পাসোয়ানের পুত্র চিরাগ। উত্তরপ্রদেশের রাষ্ট্রীয় লোকদল, কর্নাটকে জেডিএস, অন্ধ্রে জনসেনা ত্রিপুরায় তিপ্রা মথার মতো নতুন সহযোগীও পেয়েছে তারা। মায়াবতীর বিএসপি, নবীন পট্টনায়কের বিজেডি বা জগন্মোহন রেড্ডির ওয়াইএসআর কংগ্রেস কোনও শিবিরে না থাকলেও ‘সঙ্কটের মুহূর্তে’ মোদীর পাশে দাঁড়াতে পারে বলেও ভোটের আগে মনে করছিলেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনেকেই। কিন্তু উত্তরপ্রদেশে শূন্য হয়ে গিয়েছেন মায়াবতী। নবীন ও জগন নিজেদের রাজ্যে বিজেপি এবং তার জোটসঙ্গীর কাছে পর্যদুস্ত হওয়ায় তাঁদের এনডিএকে সমর্থনের সম্ভাবনা ক্ষীণ। ওড়িশায় বিজেডি পেয়েছে মাত্র একটি লোকসভা আসন। অন্ধ্রে ওয়াইএসআরসিপির প্রাপ্ত আসন চার।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement