CAA Controversy

গান্ধী, নেহরুর দেওয়া প্রতিশ্রুতিই বাস্তবে করে দেখাচ্ছে বিজেপি, সিএএ-র পক্ষে লিখলেন তরুণজ্যোতি

২৫ নভেম্বর, ১৯৪৭। কংগ্রেস জানাল, পাকিস্তান থেকে অত্যাচারিত হয়ে ভারতে আসা অমুসলিমদের জীবনের সুরক্ষা, সম্মানের জন্য তারা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। কেন তারা চলে আসা অমুসলিমদের নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলেছিল?

Advertisement

তরুণজ্যোতি তিওয়ারি

শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০২৪ ০৮:৫৯
Share:

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ)-কে ২০১৯ সালে পাশ হওয়া একটি আইন অথবা ২০২৪ সালের নির্বাচনের আগে একটা রাজনৈতিক ঘটনা হিসাবে ধরলে ভুল হবে। এ জন্য একটু ইতিহাস স্মরণ করা দরকার।

Advertisement

ভারত ভাগ হয়েছিল দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে। মুসলিম লিগের ২১তম বার্ষিক সম্মেলনে (১৯৩০ সালের ২৯ ডিসেম্বর) দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে দেশভাগের কথা তোলেন মহম্মদ ইকবাল। পরবর্তী কালে মহম্মদ আলি জিন্না তার সব থেকে বড় প্রচারক হন। এর অনেক কিছুর পর ভারত স্বাধীনতা পায় তার একটা বড় অংশ খুইয়ে। মুসলিমদের একাংশ দাবি করেছিলেন, নিজেদের জন্য তাঁরা আলাদা দেশ চান। তাই জন্ম নেয় পাকিস্তান। মোহনদাস কর্মচন্দ গান্ধী এই ঘটনাপ্রবাহ অনেকটাই আঁচ করতে পেরেছিলেন। ১৯৪৭ সালের ১৬ জুলাই দিল্লিতে হওয়া এক প্রার্থনাসভায় তিনি বলেছিলেন, ‘‘অনেককে হয়তো পাকিস্তান থেকে নিজের ঘরবাড়ি ছেড়ে আসতে হবে। ভারত তৈরি আছে তাঁদের ভারতে রাখার জন্য।’’

পরবর্তী কালে দেশভাগ হয়। দেশভাগের সময় সকলকে কী যন্ত্রণা ভোগ করতে হয়েছিল, সেটা সবাই জানেন। সেই যন্ত্রণা দেখেই গান্ধীজি বলেছিলেন, ‘‘হিন্দু ও শিখ, যাঁরা পাকিস্তানে আছেন, তাঁরা যদি ভারতে আসতে চান, তা হলে ভারতের সরকার প্রতিজ্ঞাবদ্ধ তাঁদেরকে নাগরিকত্ব, চাকরি এবং অন্যান্য সুবিধা দেওয়ার জন্য।’’ জওহরলাল নেহরুও প্রায় একই কথাই বলেছিলেন। তাঁর মন্তব্য, ‘‘রাজনৈতিক কারণে আমাদের যে ভাইবোনেরা পাকিস্তানে আছেন, তাঁরা যদি ভারতে আসতে চান, তা হলে আমরা তাঁদের স্বাগত জানাব।’’

Advertisement

২৫ নভেম্বর, ১৯৪৭। কংগ্রেস জানাল, পাকিস্তান থেকে অত্যাচারিত হয়ে ভারতে আসা অমুসলিমদের জীবনের সুরক্ষা এবং সম্মান দেওয়ার জন্য তারা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। তৎকালীন সময়ে বার বার কংগ্রেস কেন পাকিস্তান থেকে আসা অমুসলিমদের নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলেছিল? গান্ধীজি, নেহরু এবং তৎকালীন কংগ্রেস নেতারা বার বার একই কথা কেন বলছিলেন? তার একমাত্র কারণ, অত্যাচার। পাকিস্তান এবং পূর্ব পাকিস্তানে অমুসলিমদের উপর অত্যাচার।

তার পর এল ৮ এপ্রিল, ১৯৫০। নেহরু-লিয়াকত চুক্তি। প্রায় ১০ লক্ষ মানুষ পূর্ব পাকিস্তান ছেড়ে পশ্চিমবঙ্গে চলে এলেন। এই চুক্তির মাধ্যমে একটা ‘গ্যারান্টি’ প্রদান করা হয়েছিল দু’দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অধিকার বজায় রাখার জন্য। ভারত সেই চুক্তি মেনে চলেছে। কিন্তু পাকিস্তান সেই চুক্তি মানেনি। এমনকি, পরবর্তী কালে ভারতের সাহায্যে স্বাধীনতা পাওয়া বাংলাদেশও সংখ্যালঘু হিন্দুদের সুরক্ষা দিতে পারেনি। অন্য দিকে, ভারতে মুসলিমদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। আর পাকিস্তান এবং বাংলাদেশে হিন্দুদের সংখ্যা কমে গিয়েছে। বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন সময়ে অত্যাচারিত হয়ে হিন্দুদের চলে আসতে হয়েছে এই দেশে। তাঁদের নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল শুধুমাত্র ‘খেলা’ করে গিয়েছে। একের পর এক মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়নি।

বাংলাদেশ থেকে আসা শরণার্থীদের নিয়ে কথা বলতে গেলে মরিচঝাঁপি প্রসঙ্গ উঠবেই। বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই জানেন না যে, মরিচঝাঁপিতে কী হয়েছিল! মরিচঝাঁপি সুন্দরবনের একটা দ্বীপ। মূল ভূখণ্ডের অনেকটাই বাইরে। চার দিকে নোনা জল দিয়ে ঘেরা। দেশভাগ এবং সাম্প্রদায়িক অশান্তির ফলে বহু বাঙালি হিন্দু শরণার্থী তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমান বাংলাদেশ) ছেড়ে পশ্চিমবঙ্গে চলে আসেন। প্রথম সারির উচ্চ ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির বাঙালি হিন্দু শরণার্থীরা সহজেই কলকাতা ও পশ্চিমবঙ্গের অন্যান্য এলাকায় নিজেদের অবস্থান নিশ্চিত করতে পারলেও পরবর্তী সারির বিশাল জনসংখ্যার নিম্নবিত্ত শ্রেণির নমঃশূদ্র হিন্দুদের পশ্চিমবঙ্গে থাকতে দেওয়া হয়নি। বলপূর্বক তাঁদের পশ্চিমবঙ্গের বাইরে দণ্ডকারণ্যের (বেশির ভাগই ওড়িশা এবং মধ্যপ্রদেশ রাজ্যভুক্ত) শিলাময় এবং আতিথেয়তাশূন্য অঞ্চলে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়।

১৯৭৭ সালে বামফ্রন্ট এ রাজ্যে ক্ষমতায় আসে। তদানীন্তন মন্ত্রী রাম চট্টোপাধ্যায় দণ্ডকারণ্যের শরণার্থী শিবির পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। তিনি সেখানে ওই শরণার্থীদের পশ্চিমবঙ্গে ফিরিয়ে আনার মিথ্যা আশ্বাসও দিয়েছিলেন। বামপন্থীদের বিশ্বাস করে ১৯৭৮ সালে বিপুল সংখ্যক শরণার্থী বাংলায় ফিরতে শুরু করেন। কিন্তু তৎকালীন ক্ষমতাসীন বামফ্রন্ট সরকার রাজ্য শাসনপ্রণালীতে পরিবর্তন এনে ওই শরণার্থীদের নাগরিকত্ব প্রদানে অস্বীকৃতি প্রকাশ করে।

প্রায় দেড় লাখ শরণার্থী দণ্ডকারণ্য ছেড়ে পশ্চিমবঙ্গে ফিরে এলে তাঁদের কয়েক জনকে আটক ও বিতাড়িত করা হয়। অনেকেই পশ্চিমবঙ্গে ঢুকতে পেরেছিলেন অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে। আর যাঁরা পশ্চিমবঙ্গে ঢুকতে পারেননি, সেই ফেরত আসা শরণার্থীরাই মরিচঝাঁপিতে আশ্রয় নেন। নিজ উদ্যোগে সেখানকার জঙ্গল পরিষ্কার করে বন্যা থেকে বাঁচার জন্য বাঁধ নির্মাণ, মাছচাষ ও অন্যান্য চাষাবাদের ব্যবস্থা করে ওই দ্বীপে পাকাপাকি ভাবে বসবাস করতে শুরু করেন।

নিজের দেশ থেকে বিতাড়িত হয়ে, ভারতে ঠিক মতো আশ্রয় না পেয়ে শরণার্থীরা সুন্দরবনের প্রতিকূল এলাকায় কোনও ভাবে বেঁচে ছিলেন। কিন্তু এটা তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকারের সহ্য হল না। ১৯৭৯ সালের ২৬ জানুয়ারি তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু মরিচঝাঁপিতে সম্পূর্ণ অর্থনৈতিক বয়কটের নির্দেশ দিলেন।

বসুর নেতৃত্বাধীন বামফ্রন্ট সরকার মরিচঝাঁপি দ্বীপের বাঙালি হিন্দু উদ্বাস্তুদের উচ্ছেদ করার ব্যবস্থা নিতে শুরু করে। নদীতে পুলিশি অবরোধ বসানো হয়, যাতে মরিচঝাঁপি দ্বীপের শরণার্থীরা নদী পার হয়ে পাশের কুমিরখালি গ্রামে ওষুধ, খাদ্যশস্য ও জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় অন্যান্য জিনিস কিনতে যেতে না পারেন।

ওই বছরেরই ৩১ জানুয়ারি দুপুরের দিকে পুলিশ দ্বীপের মধ্যে ঢুকে উদ্বাস্তুদের ‘খুন’ করার জন্য লাগাতার গুলিবর্ষণ শুরু করে। সংবাদমাধ্যমের কর্মীদের ওই দ্বীপে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। পুলিশের সহায়তায় দলীয় ‘ক্যাডার’রা ১৬ মে ৩০০ পরিবারের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়। হত্যাকাণ্ডের ঘটনার পর দ্বীপে পড়ে থাকা অবশিষ্ট শরণার্থীদের পুনরায় মালকানগিরি (ওড়িশা), মানা, কুরুত (মধ্যপ্রদেশ) এবং আদিলাবাদে (উত্তরপ্রদেশ) জোর করে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কিছু শরণার্থী পালিয়ে পশ্চিমবঙ্গের কদম্বগাছি, মালতিপুর, বারাসত, বর্ধমান, ঘুটিয়াশরিফ, হিঙ্গলগঞ্জ এবং ক্যানিংয়ে আশ্রয় নেন। বামফ্রন্ট সরকার মৃতের হিসাব না দিলেও, বেসরকারি ভাবে জানা যায়— পাঁচ হাজারের উপর নিরীহ মানুষ মারা গিয়েছিলেন। এই ঘটনা নিয়ে কেউ খুব একটা মাথা ঘামাননি। শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেওয়া নিয়ে কারও কিছু যায়-আসে না।

বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল বামফ্রন্ট সরকার। পরবর্তী কালে একাধিক বামপন্থী নেতা বাংলাদেশ থেকে লোটাকম্বল তুলে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছিলেন ধর্মীয় উৎপীড়নের ফলে। বিভিন্ন সময়ে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখে তাঁরা জানিয়েছিলেন বাংলাদেশ থেকে আসা শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেওয়ার জন্য। আজ এই নাগরিকত্ব আইন নিয়ে সেই তাঁদেরই প্রচুর অসুবিধা হচ্ছে!

দেশভাগের যন্ত্রণা, অত্যাচার, নিজের ভিটেমাটি হারানো, লাঞ্ছনা ইত্যাদি সহ্য করে বেঁচে ছিলেন বাংলাদেশ থেকে আসা শরণার্থীরা। নজরুল লিখলেন, ‘একই বৃন্তে দু’টি কুসুম হিন্দু মুসলমান’। তা সত্ত্বেও ভাঙল ভারত। জন্ম নিল পাকিস্তান।

ইকবাল লিখলেন, ‘সারে জাহা সে আচ্ছা, মজহব নহি শিখাতা আপস মেঁ বৈর রখনা, হিন্দি হ্যাঁয় হম, বতন হ্যাঁয় হিন্দোসতাঁ হমারা…’ সম্প্রীতির বার্তা ছিল। কিন্তু এই ইকবালই পরবর্তী কালে পাকিস্তান গঠনের জন্য সরব হন। বলেন, ‘‘মুসলমানেরা ভারতে হিন্দুদের সঙ্গে থাকতে পারবে না।’’

দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে দেশভাগ হল। কিন্তু জন-বিনিময় সঠিক ভাবে হল না। ফলস্বরূপ পাকিস্তানে হিন্দুদের সংখ্যা প্রায় শূন্য হয়ে গেল। পরবর্তী কালে পূর্ব পাকিস্তান এবং এখনকার বাংলাদেশে হিন্দুদের সংখ্যা দিন দিন কমে গেল। বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানের হিন্দু সংখ্যালঘুদের উপর অকথ্য অত্যাচার শুরু হল। যাঁদের পক্ষে সম্ভব হয়েছিল, তাঁরা সব ছেড়ে দিয়ে এ দেশে চলে এসেছিলেন। যাঁরা আসতে পারেননি তাঁরা এখন অত্যাচারিত হচ্ছেন।

সিএএ অবশ্যই বিজেপির নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল। বিজেপি বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান থেকে আসা হিন্দুদের নাগরিকত্ব দেওয়ার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। এ তো শুধু বিজেপির প্রতিশ্রুতি নয়! এ প্রতিশ্রুতি তো দিয়েছিলেন গান্ধীজি। নেহরু। আজ তা হলে এত বিরোধ কিসের?

সিএএ পাশ হওয়ার পর প্রতিবাদের নামে ভারত যেটা দেখেছিল, তা বর্বরতা। বাম, কংগ্রেস এবং তৃণমূলের প্রচেষ্টায় দেশের বিভিন্ন জায়গায় এই আইনের প্রতিবাদে আগুন লাগানো হল। মুসলিম সমাজকে বোঝানো হল যে, এই আইনের মাধ্যমে তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হবে। যদিও সিএএ নাগরিকত্ব দেওয়ার আইন। এখানে নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার কোনও কথাই বলা হয়নি। গরিব মুসলমান সমাজকে ভয় দেখানো হল এবং রীতিমতো একটা ধ্বংসাত্মক আন্দোলন করানো হল। সিএএ-র বিরোধিতায় আওয়াজ উঠল, ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’! ভারতের কিছু সংগঠন কয়েকটা রাজনৈতিক দলের মদতে শুধুমাত্র রাজনৈতিক ফায়দা তোলার জন্য দেশে আগুন জ্বালাল!

এঁরা কি সত্যিই ভারতীয়? আমার বিশ্বাস, ভারতীয়েরা জানেন যে, সিএএ-তে তাঁদের কোনও অসুবিধা হবে না। তা হলে কাদের অসুবিধা হচ্ছে? এই ভয়ের রাজনীতি করার কারণ কী? এই হিংসার পিছনে স্বনামধন্য আইনজীবীদের অবদানও ছোট করা যায় না। বামপন্থী নেতা এবং কলকাতা হাইকোর্টের এক আইনজীবী তাঁর সামাজিকমাধ্যমে একটা পোস্ট করলেন যে, দিল্লিতে একটা মসজিদ ভেঙে দেওয়া হয়েছে। ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২০তে দিল্লি পুলিশের ডিসি (উত্তর) প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছিলেন, ও রকম কোনও ঘটনা ঘটেনি। এই মিথ্যাচারটা কেন হয়েছিল সেটা নিশ্চয়ই বোঝা যাচ্ছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা দায়িত্বজ্ঞান হারিয়ে এ রকম মিথ্যাচার কেন করেছিলেন তার জবাব তাঁদের কোনও না কোনও এক দিন দিতেই হবে। কারণ, ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করে না।

শত বিরোধিতার পরেও সিএএ চালু হল। তৈরি হল তার নিয়মাবলি। নিয়মাবলি আসার পর আরও বিপত্তি। মানুষকে বোঝানো শুরু হল, এই আইন অনুযায়ী কেউ যদি নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেন তা হলে তাঁর নাগরিকত্ব হারাবেন। তিনি সব সরকারি সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবেন। গরিব অর্ধশিক্ষিত বা অশিক্ষিত মানুষকে বোঝানো খুব সোজা। আসলে ঘর পোড়া গরু, সিঁদুরে মেঘ দেখলে ভয় তো পাবেই।

সিএএ-তে খুব সোজা ভাবে কতগুলি কথা বলা আছে। আইনের ৬বি (৩) ধারায় পরিষ্কার ভাবে বলা আছে, নাগরিকত্বের আবেদনের দিন পর্যন্ত তিনি যে যে সুযোগসুবিধা ভোগ করছিলেন, আবেদন করার জন্য তিনি তার কোনও কিছু থেকেই বঞ্চিত হবেন না। সিএএ নাগরিকত্ব দেওয়ার আইন, নেওয়ার নয়। সাম্যের অধিকার লঙ্ঘন করে না। কারণ অত্যাচারিত এবং অত্যাচারী একই গোত্রে পড়তে পারে না।

আরও পড়ুন:

যারা মুসলমান সমাজকে নিয়ে চিন্তিত তাঁদের বলি, নাগরিকত্ব আইনের ৩, ৪, ৫ এবং ৬ নম্বর ধারা অনুযায়ী মুসলমানরাও নাগরিকত্ব পেতে পারেন। জন্ম সূত্রে, উত্তরাধিকার সূত্রে, নিবন্ধীকরণ সূত্রে এবং স্বাভাবিক পদ্ধতিতে। এ সব এখনও রয়েছে। তার সঙ্গে এখন যোগ হয়েছে সিএএ। ধর্মীয় কারণে অত্যাচারিত হয়ে হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পারসি এবং খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী মানুষেরা যাঁরা ভারতে আসতে বাধ্য হয়েছিলেন তাঁদের নাগরিকত্ব দেওয়ার জন্য এই আইন। যাঁরা বলার চেষ্টা করছেন যে, এটা ভারতের সংবিধানের ১৪ নম্বর অনুচ্ছেদকে লঙ্ঘন করছে, তাঁরা ‘রিজ়নেবল ডিফারেনশিয়া’ একটু পড়ে নেবেন।

সিএএ নাগরিকত্ব দেওয়ার আইন। এই আইনে কারও নাগরিকত্ব যাবে না। বাম, কংগ্রেস এবং তৃণমূল-সহ অন্য যে দলগুলো মুসলমান সমাজকে বোঝানোর চেষ্টা করছে যে, এই আইনের ফলে নাগরিকত্ব চলে যাবে, তাদের অনুরোধ করব আইনটা একটু পড়ে দেখার জন্য। আইনটা পড়ে সাধারণ মানুষের সামনে গিয়ে তাঁদেরকে বলার জন্য। কারণ, আইন খুবই পরিষ্কার। বিরোধীরা আইনটা সম্পর্কে বলতে চায় না। তারা শুধু মানুষকে ভুল বোঝাতে চায়।

ভারতের কোনও মুসলমানের ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই। স্বাধীনতার সময় যাঁরা দ্বিজাতি তত্ত্বকে না-মেনে এই দেশে থেকে গিয়েছিলেন এই দেশটা তাঁদেরও। যাঁরা এই দেশটাকে আপন মনে করেন এই দেশটা তাঁদেরই।

সিএএ-কে সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ করেছিল বিরোধীরা। কিন্তু কোনও রকমের স্থগিতাদেশ পায়নি। কয়েক দিন আগেই মুসলিম লিগ এবং ডিওয়াইএফআই এই আইনের নিয়মাবলিকে চ্যালেঞ্জ করে। সেখানেও কোনও স্থগিতাদেশ পায়নি। বাম, কংগ্রেস, তৃণমূল এবং অন্যান্য দল, যারা এক সময় শরণার্থীদের জন্য দিনরাত কান্নাকাটি করত, তারা আজ এই আইনের বিরোধিতা কেন করছে? কোনটা আগে? রাজনীতি না মানুষের জীবন? বাম, কংগ্রেস এবং তৃণমূল মতুয়া সমাজকে কী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ভুলে গিয়েছে নাকি? অত্যাচারিত অমুসলিমদের নাগরিকত্ব দেবে ভারত। বিজেপি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

(লেখক আইনজীবী এবং বিজেপি নেতা। মতামত নিজস্ব)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement