রাজা শ্রেয়াংশ ঋষভদেবকে ইক্ষুরস দান করছেন। সূত্র: উইকিপিডিয়া
অক্ষয় তৃতীয়াকে মূলত হিন্দু বা সনাতন ধর্মে বিশ্বাসীদের কাছে পালনীয় এক পবিত্র দিন হিসেবে দেখা হলেও অন্য এক ধর্মে এই দিনটির বিশেষ মাহাত্ম্য রয়েছে। সেটি জৈন ধর্ম। জৈন বিশ্বাস অনুসারে বৈশাখ মাসের শুক্লপক্ষের তৃতীয়া তিথির গুরুত্ব অপরিসীম।
জৈন মতে, ২৪ জন তীর্থঙ্কর মানুষকে সত্যের পথ দেখিয়েছেন। তাঁদের দেখানো পথেই মানুষ জন্ম ও মৃত্যুর অতীত ‘তীর্থে’ পৌঁছতে সক্ষম। এই ২৪ তীর্থঙ্করের প্রথম হলেন ঋষভদেব এবং শেষ ব্যক্তি মহাবীর। জৈন শাস্ত্র থেকে জানা যায়, ঋষভদেব ছিলেন ইক্ষ্বাকু বংশের প্রতিষ্ঠাতা নৃপতি। তাঁর রাজত্বে কোনও দুঃখ ছিল না। পৃথিবী সেই সময়ে ছিল অগণিত কল্পবৃক্ষে পূর্ণ। এই বৃক্ষের কাছে যা চাওয়া যায়, তা-ই লাভ করা যায়। কিন্তু কালের সঙ্গে সঙ্গে ওই সব কল্পতরুর গুণাবলি হ্রাস পেতে থাকে। মানুষও শারীরিক এবং আধ্যাত্মিক সঙ্কটে পড়তে শুরু করে। সেই অবস্থায় তাঁর প্রজাদের ক্লেশ নিবারণের জন্য ঋষভদেব ছ’টি বৃত্তি অবলম্বনের নির্দেশ দেন। এগুলি অবলম্বন করলে মানুষ জাগতিক ক্লেশ থেকে দূরে থাকবে বলে তিনি বর্ণনা করেন। এগুলি হল— অসি (রণজীবী, যাঁরা দুর্বলকে রক্ষা করবেন), মসী (কলমজীবী, অর্থাৎ কবি, দার্শনিক, চিন্তকরা), কৃষি (যাঁরা খাদ্য উৎপাদন করবেন), বিদ্যা (অন্যকে যাঁরা শিক্ষিত করে তুলবেন), বাণিজ্য এবং শিল্প।
কিন্তু এ সব ছিল জাগতিক ক্লেশ নিবারণের বন্দোবস্ত। পারত্রিক ক্লেশের বিষয়ে কী হবে? ঋষভদেব এক বার দেবরাজ ইন্দ্রের সভায় এক অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রিত হন। সেখানে নৃত্যগীত চলাকালে এক অপ্সরা মারা যান। প্রাণচাঞ্চল্যে ভরপুর নৃত্যরতা অপ্সরার আকস্মিক মৃত্যু তাঁকে বিহ্বল করে তোলে। তিনি প্রব্রজ্যা গ্রহণ করে বিভিন্ন স্থান পরিভ্রমণ করেন। এবং ১৩ মাস নির্জলা উপবাসে থেকে সত্যানুসন্ধান করে জন্ম-মৃত্যুর অনিত্যতা এবং আত্মার অবিনশ্বরতা সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান লাভ করেন। ১৩ মাস অতিক্রান্ত হলে তিনি তাঁর প্রপৌত্র রাজা শ্রেয়াংশের হাত থেকে অঞ্জলি ভরে ইক্ষুরস পান করে উপবাস ভঙ্গ করেন। সেই দিনটি ছিল অক্ষয় তৃতীয়া। সেই কারণে এই দিনটি জৈনরা গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে পালন করে থাকেন গৃহীরা এ দিন সন্ন্যাসীদের আহার্য দান করেন।