উত্তর কলকাতার মুক্তারাম বাবু স্ট্রিট। শুনলেই প্রথমে মাথায় আসে রসিক সাহিত্যিক শিবরাম চক্রবর্তীর নাম। এই এলাকার এক মেস বাড়িতেই যাঁর আজীবন কেটেছে। এ হেন মুক্তারাম বাবু স্ট্রিটেই রয়েছে আর এক আকর্ষণ। মার্বেল প্যালেসের ঠিক কাছেই কলকাতার সিদ্ধিবিনায়ক মন্দির। গণেশজননীর দর্শনে উত্তর কলকাতামুখী হলে এক ফাঁকে দেখে আসতেই পারেন তাঁর এই সুযোগ্য পুত্রকে।
বিরাট পুরনো বাড়ির মন্দিরে সিদ্ধিবিনায়ক বিরাজমান। ঠাকুরদালানে রয়েছে বিরাট এক ঝাড়বাতি। গবেষকদের মতে, পূর্ব ভারতের একমাত্র সিদ্ধিবিনায়ক মন্দির এটি। মুম্বাইয়ের জাগ্রত সিদ্ধিবিনায়ক গণেশের মতো এখানকার সিদ্ধিদাতা গণেশের শুঁড়টির অবস্থানও ডান দিকে।
পুরাণ অনুযায়ী, পার্বতী অন্নপূর্ণা সংসারে সুখ-শান্তির প্রতীক আর শিব বৈরাগ্যের প্রতীক এক ত্যাগী পুরুষ। গণেশের মধ্যে পিতা-মাতা দু’জনের গুণই বিদ্যমান। মূর্তি তত্ত্ব অনুসারে, পার্বতীর স্থান শিবের বাম দিকে। আর গণেশের স্থান শিব ও পার্বতীর ঠিক মধ্যস্থলে। সে কারণে গণেশের শুঁড় যদি বাম দিকে থাকে, তবে তিনি মা পার্বতীর গুণাবলির দিকে ইঙ্গিত করছেন আশীর্বাদ কালে। আর গণেশের শুঁড় যদি ডান দিকে থাকে, তবে তিনি সিদ্ধিবিনায়ক, মোক্ষদানকারী। অর্থাৎ, তিনি শিবের গুণগুলি ধারণ করছেন এবং শিবভক্তদের আশীর্বাদ করছেন। এই মন্দিরে পুজো দেন মূলত ব্যবসায়ীরা। স্থানীয়দের বিশ্বাস, এক বছর ধরে সিদ্ধিবিনায়কের লাগাতার পুজো করলে মনের সমস্ত ইচ্ছে পূরণ করেন সিদ্ধিদাতা।
ইমামি গ্রুপের তত্ত্বাবধানে কলকাতার এই সিদ্ধিবিনায়ক মন্দিরটি সদ্য সংস্করণ করা হয়েছে। আদতে এই মন্দিরটি কলকাতার বিখ্যাত মল্লিক পরিবারের। দুই অভিন্নহৃদয় বন্ধু আর এস গোয়েনকা এবং আর এস অগ্রবাল এই মন্দির সংস্কার করেন। তাঁদের ছবি বাড়ির একটি দেওয়ালে দেখতে পাবেন। মন্দিরে ভোর ৫টা ৪৫ মিনিটে শুরু হয় মঙ্গলারতি। মহাআরতি হয় সকাল ৭টা নাগাদ। খিচুড়ি ভোগ এবং মহাভোগ দেওয়া হয় তারপর। মন্দির বন্ধ থাকে দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টে পর্যন্ত। তারপর বিকেল সাড়ে ৪টে থেকে রাত ৯টা অবধি খোলা থাকে মন্দির।
কী ভাবে যাবেন: মহাত্মা গাঁধী রোড মেট্রো স্টেশন থেকে দশ মিনিট হাঁটাপথে এই মন্দির। উত্তর কলকাতার বিখ্যাত মার্বেল প্যালেস এর পাশেই।
এই প্রতিবেদনটি 'আনন্দ উৎসব' ফিচারের একটি অংশ।