জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। —ফাইল চিত্র।
রাজ্যে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার আগে থেকেই উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের হাতে দলীয় সংগঠন দেখার দায়িত্ব কার্যত ছেড়ে রেখেছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এক সময়ে মতুয়াদের সঙ্গে তৃণমূল নেত্রীর সখ্য গড়ে তোলার পিছনেও জ্যোতিপ্রিয়ের ভূমিকা ছিল বলে দলের অন্দরে শোনা যায়।
তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে এই জেলায় জ্যোতিপ্রিয়ই এক রকম দলের মুখ হয়ে ওঠেন। নেতা-কর্মী, পুলিশ-প্রশাসনের কাছে তিনিই ছিলেন দলের তরফে শেষকথা। জেলার তৃণমূল নেতাদের মধ্যে এমনও শোনা যেত, ‘‘দিদি (মুখ্যমন্ত্রী) বালুদার চোখ দিয়েই জেলাটা দেখেন।’’ যে কোনও প্রশাসনিক বৈঠকে জেলার সমস্যা নিয়ে কথা হলে মুখ্যমন্ত্রীকে হামেশাই বলতে শোনা যেত, ‘‘বালু ব্যাপারটা দেখে নিস।’’ দীর্ঘ দিন ধরে দলের জেলা সভাপতির দায়িত্ব দাপটের সঙ্গেই সামলেছেন জ্যোতিপ্রিয়।
রেশন দুর্নীতি কাণ্ডে তাঁর গ্রেফতারির ফলে স্বাভাবিক ভাবেই বিরোধীরা লোকসভা ভোটে অক্সিজেন পেল বলে রাজনৈতিক মহলের মত।
জেলা জুড়ে ইদানীং সক্রিয় ভাবে সংগঠন দেখাশোনা করছিলেন না জ্যোতিপ্রিয়। দলের জাতীয় কর্মসমিতির সদস্য হয়েছিলেন। কিছু দিন আগে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব উত্তর ২৪ পরগনার সংগঠন ভেঙে বনগাঁ, বারাসত, ব্যারাকপুর বসিরহাট— চারটি আলাদা সাংগঠনিক জেলা তৈরি করেন। সব সাংগঠনিক জেলায় পৃথক সভাপতি নিয়োগ হয়। এর ফলে সরাসরি বালু সংগঠনের কাজ করছিলেন না। গত পঞ্চায়েত ভোটেও তাঁকে জেলা জুড়ে সক্রিয় ভাবে প্রচার করতে দেখা যায়নি। তা নিয়ে অনেকের খটকা লেগেছিল। তাঁদের অনেকে এখন বলছেন, ‘‘বালুদা হয় তো কোনও বিপদ আঁচ করে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলেন।’’
তবে এখনও দলের ভিতরকার কোনও সমস্যায় ‘বালুদা’র শরণাপন্ন হতেন নেতানেত্রীরা। যে কোনও ভোটে রণনীতি ঠিক করা, প্রচার কর্মসূচি ঠিক করার কাজ তিনিই পেতেন।
গত লোকসভা ভোটে বনগাঁয় জয়ী হয়েছিল বিজেপি। লোকসভা ভোটে হাবড়া সহ জেলায় বেশ কিছু বিধানসভা আসনে বিজেপি এগিয়েছিল।
তবে তারপর থেকে বিজেপি এই জেলায় কিছুটা ব্যাকফুটে। বনগাঁয় দল গোষ্ঠীকোন্দলে জেরবার। পঞ্চায়েত ভোটেও ফলাফল আশানুরূপ হয়নি বলে স্বীকার করেন বিজেপি নেতাদের একাংশ। সিএএ চালু না হওয়ায় মতুয়াদের বড় অংশের সমর্থন বিজেপির দিক থেকে সরে গিয়েছে বলে রাজনৈতিক মহলের মত। এই পরিস্থিতিতে জ্যোতিপ্রিয়ের গ্রেফতারি বিজেপিকে অক্সিজেন জোগাতে পারে বলে মনে করছেন অনেকেই।
রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘আমাদের লড়াই কোনও ব্যক্তিবিশেষের বিরুদ্ধে নয়। আমাদের লড়াই, এই ব্যবস্থার বিরুদ্ধে। এই ব্যবস্থার কারণেই জ্যোতিপ্রিয় গ্রেফতার হয়েছেন। ২০১১ সাল থেকে তৃণমূল যে সংস্কৃতি চালু করেছে, মানুষ তা নিয়ে সচেতন। লোকসভা ভোটে মানুষ তৃণমূলকে বিসর্জন দিতে মুখিয়ে আছে।’’ তাঁর মতে, রেশন দুর্নীতি কেবল উত্তর ২৪ পরগনা বা নদিয়ায় সীমাবদ্ধ নয়। গোটা রাজ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। বিজেপির বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি দেবদাস মণ্ডলের কথায়, ‘‘চোর ধরা পড়েছে। মানুষ চোরেদের বিরুদ্ধে লোকসভায় বিজেপিকে ভোট দিতে মুখিয়ে আছেন।’’
সিপিএমের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক মৃণাল চক্রবর্তী আবার বলেন, ‘‘রেশন দুর্নীতিতে অনেক আগেই জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের গ্রেফতার হওয়া উচিত ছিল। এই গ্রেফতারে লোকসভা ভোটের উপরে যথেষ্টই পড়া উচিত। আমি আশাবাদী।’’ হাবড়ার সিপিএম নেতা আশুতোষ রায়চৌধুরীর মতে, ‘‘রেশন দুর্নীতি নিয়ে আগেই আমরা মানুষকে বলেছিলাম। এখন সেটা সত্যি হল। এখন সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার মানুষের।’’
হাবড়ার প্রাক্তন পুরপ্রধান তৃণমূলের নীলিমেশ দাস অবশ্য বলেন, ‘‘বালুদার গ্রেফতারের ঘটনায় কর্মীরা হতাশ হলেও তাঁরা জানেন এটা বিজেপির রাজনৈতিক চক্রান্ত। ফলে মানুষ এর বদলা ভোটে বিজেপি হারিয়ে অবশ্যই নেবেন।’’ তৃণমূলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি বিশ্বজিৎ দাসের কথায়, ‘‘লোকসভা ভোটের আগে বিজেপি চক্রান্ত করে বালুদাকে গ্রেফতার করাল কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলিকে ব্যবহার করে। তবে লোকসভা ভোটে এর প্রভাব পড়বে না। কারণ, মানুষ তৃণমূলকে ভোট দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখে।’’
উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের সভাধিপতি নারায়ণ গোস্বামী জানিয়েছে, শনিবার জেলার সমস্ত
ব্লক এবং শহরে তৃণমূল প্রতিবাদ মিছিল করবে। জ্যোতিপ্রিয়ের গ্রেফতারি বিজেপির ষড়যন্ত্র বলে তাঁরও মত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy