Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Xi Jinping

মাওকে ছাপিয়ে যাওয়ার সম্মেলন শুরু জিনপিংয়ের

১৬ অক্টোবর থেকে শুরু হতে চলেছে চিনা কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিসি)-র সম্মেলন। তার ঠিক প্রাক্-মুহূর্তে খাস রাজধানীতেই চিন সরকারের কড়া এবং সতর্ক নজর এড়িয়ে ছড়িয়ে পড়েছে একাধিক বিক্ষোভের পোস্টার।

পার্টি কংগ্রেসের মুখে প্রতিবাদী ব্যানার বেজিংয়ের সিটং সেতুতে। রয়টার্স

পার্টি কংগ্রেসের মুখে প্রতিবাদী ব্যানার বেজিংয়ের সিটং সেতুতে। রয়টার্স ফাইল ছবি

সংবাদ সংস্থা
বেজিং শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০২২ ০৮:০৯
Share: Save:

একনায়কতন্ত্রের পথে আরও এক পা। তবে তা সর্বহারার একনায়কতন্ত্র নয়, শি জিনপিংয়ের একনায়কতন্ত্র।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, করোনা-উত্তর আন্তর্জাতিক অর্থনীতির বদলে, ইটালি-সহ বেশ কিছু দেশে অতি দক্ষিণপন্থীদের উত্থানের আবহেই আগামিকাল, ১৬ অক্টোবর থেকে শুরু হতে চলেছে চিনা কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিসি)-র সম্মেলন। তার ঠিক প্রাক্-মুহূর্তে খাস রাজধানীতেই চিন সরকারের কড়া এবং সতর্ক নজর এড়িয়ে ছড়িয়ে পড়েছে একাধিক বিক্ষোভের পোস্টার। কোভিড নিয়ন্ত্রণের নামে কড়াকড়ি, উইঘুর মুসলিমদের উপরে নির্যাতন, নাগরিক পরিসরে সরকারি হস্তক্ষেপ-সহ একগুচ্ছ বিষয় নিয়ে ক্ষোভের আঁচ মিলেছে তাতে। বেজিং-সহ বহু জায়গাতেই একাধিক প্রতিবাদী ব্যানার দেখা গিয়েছে, যার কোনওটাতে লেখা, ‘চাই না মহান নেতা, চাই ভোটের অধিকার’, আবার কোনওটায় লেখা, ‘মিথ্যা নয়, চাই সম্মান’, ‘কোভিড পরীক্ষা নয়, চাই খাদ্য’, ‘লকডাউন নয়, চাই স্বাধীনতা’। আর বিক্ষোভের এমন ভাষাতেই সিঁদুরে মেঘ দেখেছে চিন সরকার। রাতারাতি সেই সব পোস্টার উধাও করা শুধু না, ‘মহান নেতা’র বিড়ম্বনা যাতে আর না বাড়ে সে দিকেও কড়া নজর রেখেছে তারা। সমাজমাধ্যম থেকে শুরু করে সর্বত্র চলছে কড়া নজরদারি। শি বা সিপিসি, সরকার, সেনা বিরোধী কোনও শব্দ যাতে ফুটে না ওঠে, কোনও হ্যাশট্যাগ যাতে না ছড়ায়, সে দিকে নজর রয়েছে পুরোমাত্রায়।

এই সম্মেলনেই শি ছাপিয়ে যেতে চান সবাইকে, এমনকি মাও জে দংকেও। তারই প্রস্তুতি চলছে গত চার বছর ধরে, তিল তিল করে। প্রস্তুতি নিয়েছেন শি নিজেই। সিপিসি-র গত তিন দশকের সব নিয়ম হেলায় উড়িয়ে। মাওয়ের মৃত্যুর পর থেকে চলে আসা পরপর দু’বার পাঁচ বছরের জন্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার নিয়ম বদলাতে সংবিধানেও বদল আনা হয়েছে শি-র নির্দেশেই। দলের অন্দরে কোনও বিক্ষুব্ধ সুর যাতে মাথা চাড়া না দেয়, সে দিকে প্রথম থেকেই ছিল কড়া নজর। যার জেরে তৃতীয় বারের জন্য চিনা কমিউনিস্ট পার্টির সর্বোচ্চ আসনে শি-র ‘নির্বাচিত’ হওয়া এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা।

প্রেসিডেন্ট এবং সিপিসি-র প্রধান হিসেবে শি-র দ্বিতীয় দফাতেই বোঝা গিয়েছিল, তিনি মাও-কে ছাপিয়ে যেতে চান। দেশের ‘মহানতম নেতা’ হয়ে উঠতে মরিয়া শি-র হাতে অস্ত্র ছিল শক্ত অর্থনৈতিক ভিত আর সেনা। তাতে ভর করেই এগিয়েছেন তিনি।

তবে একটি জায়গায় শি-র সব সমালোচককেই মুখে কুলুপ আঁটতে হয়েছে। প্রেসিডেন্ট পদে বসা ইস্তক দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে কোনও আপস করেননি শি। একাধিক শীর্ষ কর্তার পাশাপাশি প্রাক্তন বিচারপতিকেও মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে চিন। দুর্নীতি দমনের এই চেষ্টার জন্যই আম চিনা নাগরিকের মনে অন্য রকম ভাবমূর্তি তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন তিনি।

১৬ অক্টোবর থেকে শুরু হয়ে ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত চলা সপ্তাহব্যাপী এই সম্মেলনের বেশির ভাগটাই হবে রুদ্ধদ্বার বৈঠক। সেখানেই শি-র অঙ্গুলিহেলনে বাদ যেতে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী লি খ্যচিয়াং-সহ সকলেই। এমনকি যাঁকে শি-র প্রশাসনে অন্যতম সফল বিদেশমন্ত্রী বলা হয়, সে ই ওয়াং ই-কেও সরতে হবে বলে জানা গিয়েছে। বেছে নেওয়া হবে শি অনুগামী একঝাঁক নতুন নেতাকে। সম্মেলনের শেষ দিনে দেশ-বিদেশের সাংবাদিকদের বাছাই করা প্রশ্নের উত্তর দেবেন শীর্ষ নেতৃত্ব।

‘বেড়াল সাদা না কালো দেখার দরকার নেই, ইঁদুর ধরতে পারলেই হল’, মাওয়ের মৃত্যুর দু’বছরের মধ্যে মাওবাদী অর্থনীতিকে সরিয়ে বাজারভিত্তিক অর্থনীতির হাত ধরতে গিয়ে বলেছিলেন তৎকালীন চিনা প্রেসিডেন্ট দেং শিয়াওপিং। সেই শুরু চিনা অর্থনীতির অগ্রগতির। সেই ধারাকেই বজায় রেখে চিনা সমাজতন্ত্রের ধারণাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা বারবার বুঝিয়েছেন শি। আসন্ন সম্মেলনে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশে নিজের সেই তত্ত্বকেই আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই লক্ষ্য তাঁর।

অন্য বিষয়গুলি:

Xi Jinping China
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy