একজোট: প্যারিসে সিএএ-বিরোধী সমাবেশ। ফাইল চিত্র
আইফেল টাওয়ারের সামনে ‘আমরা করব জয়’ শুনে শাসানি দিয়ে গিয়েছিল বিজেপির বেশ কিছু স্থানীয় সমর্থক। সরাসরি হুমকি দিয়েছিল, ‘ইমিগ্রেশনের সময় দেখে নেব।’ তবু গান থামাননি সিএএ-বিক্ষোভকারীরা।
গত ৪ জানুয়ারির ওই সমাবেশ নিয়ে আনন্দবাজারের জন্য লিখেছিলেন কলকাতার ছেলে ঋভু সরকার (নাম পরিবর্তিত)। ঋভুর সঙ্গে সে দিন এক ফ্রেমে দেখা গিয়েছিল আমদাবাদ থেকে পড়তে যাওয়া বছর বাইশের তরুণী রুচি ত্রিবেদীকে। হাতে প্ল্যাকার্ড ছিল— ‘ইন্ডিয়া মোদী-ফায়েড এগেনস্ট মুসলিম’। তাঁর অভিযোগ, মিছিলে যাওয়া নিয়ে এখনও তাঁকে ঘুরিয়ে শাসাচ্ছে ফ্রান্সের গেরুয়া শিবির। তাঁকে বলা হচ্ছে, লন্ডনের মতো প্যারিসেও ওই মিছিলে অর্থ দিয়েছে আইএস জঙ্গি গোষ্ঠী! আর মিছিলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন হয় শ্রীলঙ্কার বংশোদ্ভূত, না হয় পাকিস্তানি! ওরা কেউ ভারতের নন।
প্যারিসে ফ্যাশন ডিজ়াইনিং পড়তে যাওয়া রুচি কিন্তু দমেননি। জনৈক নরেশ কুমারের বিরুদ্ধে লিখেছেন ফেসবুকে। ফ্রান্সের যে কোনও প্রতিবাদেরই মঞ্চ আইফেল টাওয়ারের সামনে ‘পারভিস্ দো ত্রোকাদেরো’। সোশ্যাল মিডিয়ায় খবর পেয়ে ৪ জানুয়ারি সেখানে পৌঁছে গিয়েছিলেন রুচি। গানে-স্লোগানে ওই সমাবেশ চলে ঘণ্টা দুয়েক। এক ঘণ্টার বিরতি নিয়ে ভারতে নয়া নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) প্রত্যাহারের দাবিতে তাঁদের ভারতীয় দূতাবাস যাওয়ার কথা ছিল বিকেল ৩টে নাগাদ। ব্যক্তিগত কাজের জন্য দূতাবাসে যেতে পারেননি রুচি। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ায় আপডেট নিয়েছেন— কখন, কী হচ্ছে?
আরও পড়ুন: ৩৭০ নিেয় আমেরিকার মন পেতে এখনও চেষ্টায় দিল্লি
রুচির দাবি, রাতে বাড়ি ফেরার পরেই পূর্ব পরিচিত নরেশ তাঁকে মেসেঞ্জার কল করেন। অভিযোগ, মামুলি দু'-চার কথা সেরেই তিনি বলেন, ‘দূতাবাসের সামনে তোমায় দেখলাম না তো! না-গিয়ে অবশ্য ভাল করেছো। বিদেশ মন্ত্রক সব নজর রাখছে। ঘর কি বাত ঘর মে রাখো। গুজরাতের মেয়ে হয়ে আবার এ সব মিছিলে কেন?’ কোন বিদেশ মন্ত্রক নজর রাখছে! ভারত, না ফ্রান্সের? নরেশ উত্তর দেননি। ভায়া ফেসবুক আনন্দবাজারের তরফে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও উত্তর নেই নরেশের। অথচ নিজের ওয়ালে তিনি সক্রিয়― আরএসএসে মুগ্ধ পোস্টও রয়েছে। আর নিজের প্রোফাইলে লিখে রেখেছেন, ‘ট্রাভেলিং ইউরোপ।’
আরও পড়ুন: ‘বদলের সময়কালে’ সায় দিলেন রানি
রুচির দাবি, ‘‘দলে টানতে গোটা ইউরোপ জুড়ে প্রবাসী ভারতীয়দের ভয় দেখানোর খেলা চলছে।’’ তা বলে আইএস জুজু! ঋভুর দাবি, ‘‘যত সব আজগুবি। অবশ্য এটাই ট্রেন্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে ইউরোপে। তবে সে দিন ভারতীয় দূতাবাসের সামনে ওরা আমাদের ছবি তুলে নিয়ে গিয়েছিল?’’ ওরা কারা? দু’জনেরই দাবি, ‘‘ফ্রান্সের বিজেপি।’’
চিহ্নিত হয়ে যাওয়ার ভয়েই যে পরের দিন আনন্দবাজারে লেখার সময়ে তাঁকে অন্য নামের আড়াল নিতে হয়েছিল, তা মানলেন কলকাতার ছেলে। বললেন, ‘‘মনে হয়েছিল, তাই সমাবেশে গিয়েছিলাম। আর লেখার সময় মনে হল, আমার নামটা নয়, আমাদের সম্মিলিত প্রতিবাদটা গুরুত্বপূর্ণ।’’ আবার সিএএবিরোধী সমাবেশে যাবেন? ঋভুর উত্তর― ‘‘দেখা যাক।’’
রুচিও কি চিহ্নিত হওয়ার ভয় পাচ্ছেন? পরের বার কি মুখ ঢেকে পথে নামবেন? আমদাবাদের তরুণীর সাফ জবাব, ‘‘সে আমরা পরে বুঝে নেব। আগে ওদের মুখোশ তো খুলুক।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy