বিপর্যয়: সিডনির অদূরেই দাবানল। ছবি: এএফপি।
নভেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহ তখন। খবরের কাগজে চোখ বোলাতেই প্রথম হেডলাইন— দাবানলে সাড়ে তিনশো কোয়ালা মৃত (ক্রমশ সংখ্যাটা দু’হাজার পেরিয়েছে)। কুইন্সল্যান্ড এবং নিউ সাউথ ওয়েলসের সীমানায় আগুন লেগেছে, তা শুনেছিলাম। তবে সেই দাবানল এতটা ভয়াবহ আকার নিয়েছে তা টের পাইনি।
টের পেতে অবশ্য বেশি দিন সময় লাগল না। দু’দিনের মধ্যেই সিডনির আশেপাশে আগুন লাগা শুরু হল। তার সঙ্গে পাল্টাতে শুরু করল আকাশের রং। নিঃশ্বাস নিতে গেলে সব সময়ে পোড়া গন্ধ আসছে। শহরের কেন্দ্রীয় এলাকায় এক দিন গিয়ে দেখা গেল, অবস্থা খারাপ। সন্ধে নামতে পরিষ্কার ভাবে সামনের গাড়িগুলো দেখা যাচ্ছে না। চারিদিকে ধোঁয়াশা। সে দিন বাড়ি ফিরে খেয়াল করলাম, জামা থেকে তখনও পোড়া গন্ধ বেরোচ্ছে।
এই কয়েক দিনের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা হয়েছিল গত কাল সকালে। যখন ঘুম ভাঙল, খেয়াল করলাম গলা শুকিয়ে গিয়েছে। জল খেতে খেতে বাইরে তাকাতেই দেখলাম, এই গরমের মধ্যেও চারপাশটা ঢেকে গিয়েছে ঘন কুয়াশায়। বাইরে বেরোনোর সময়ে ভেজা রুমাল দিয়ে তার উপরে মুখোশ পরে রওনা দিলাম। গত তিন-চার দিনে বহু মানুষ মুখোশ পরা শুরু করে দিয়েছে। রাস্তায় চলার সময়ে রীতিমতো গলার কাছটা জমাট বেঁধে আসছিল। শ্বাসকষ্টের সঙ্গে বমি-বমি ভাব আর মাথা ঝিমঝিম।
এত দিনে এই প্রথম বার রীতিমতো ভয় পেয়ে গিয়ে অনলাইনে ‘এয়ার কোয়ালিটি ইন্ডেক্স’ (বাতাসের গুণমানের সূচক) দেখলাম। তাতে ভয় আরও বেড়ে গেল। আমার কর্মস্থলের এলাকায় সূচক তখন ২২০০, যা বিপদসীমার (২০০) ১১ গুণ! কোনও কোনও জায়গায় সেটা ২৫০০ পেরিয়েছে। দিল্লি-গাজ়িয়াবাদে এই সূচক ২২৯ থেকে ৬৮৬-র মধ্যে রয়েছে আজ। তার ফল আমরা সবাই দেখছি। সেখানে ২২০০! অথচ সরকারের তরফ থেকে কোনো সতর্কবার্তা নেই। সহকর্মীদের সঙ্গে এই সব আলোচনাই করছিলাম। হঠাৎ বেজে উঠল বিল্ডিংয়ের ফায়ার অ্যালার্ম! দমকল এসে বলল, আগুন লাগেনি। গরম বাতাস আর ধোঁয়ার ছোঁয়াতেই বেজে গিয়েছে অ্যালার্ম। আগের দিন এ রকম ছ’শোরও বেশি ‘ফল্স অ্যালার্ম’ বেজেছে নানা জায়গায়। দমকল আবার বিল্ডিং খুলে দিয়ে গেলেও বেশি ক্ষণ বসে কাজ করা গেল না। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অফিসে বসেও দম বন্ধ হয়ে আসছে দেখে বেরিয়ে আমরা কয়েক জন শহরের অন্য প্রান্তে চলে গেলাম।
দীর্ঘ কয়েক সপ্তাহ কেটে যাওয়া সত্ত্বেও সরকার এই আগুন রুখতে অপারগ। বহু মানুষ ঘরছাড়া। আমাজনের থেকেও বেশি জঙ্গল ইতিমধ্যেই পুড়ে গিয়েছে অস্ট্রেলিয়ায়। পরিবেশের রীতিমতো বেহাল অবস্থা। উড়ানে দেরি হচ্ছে। ফেরি চলাচল বন্ধ। সমুদ্রতটে ভেসে আসছে ছাই। হাসপাতালে রোগী বেড়েছে। এই বিপদে পড়ে জানা গেল, দমকলের সে রকম পরিকাঠামোই নেই যে, আগুন আয়ত্তে আনতে পারবে। আগামী কয়েক সপ্তাহে বৃষ্টির সম্ভাবনাও নেই। তা সত্ত্বেও অস্ট্রেলিয়া সরকারকে ‘ঢিমে তালে’ চলতে দেখে আজ হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে পড়েছেন। ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন পরিবেশকর্মীরা। দাবি একটাই—সরকারকে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে হবে এবং আগামী দিনে পরিবেশ-বিরোধী কোন আইন পাশ করা যাবে না। শিশু কোলে বাবা-মায়েরাও ছিলেন আজকের মিছিলে। তাঁরা বলেছেন, ‘‘পৃথিবীটা যেন আগামী প্রজন্মের কাছে বাসযোগ্য হয়। তাই হাঁটছি আমরা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy