অপরাধজগতের শীর্ষে থাকাকালীন চার্লস শোভরাজ ভারতে এক কন্যাসন্তানের জন্ম দেয়। সেই মেয়ে এখন কোথায়, কেমন আছেন এবং কী করছেন জানেন?
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৮ মে ২০২১ ১০:০২
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৯
সাতের দশকে তাইল্যান্ডে পর্যটকদের মাদক খাইয়ে খুন করে সর্বস্ব লুট করত সে। সেই ‘বিকিনি কিলার’ চার্লস শোভরাজকে নিয়ে বিবিসি-র ড্রামা সিরিজ় ‘দ্য সার্পেন্ট’-এর সম্প্রচার শুরু হয় গত ১ জানুয়ারি। এখন সেটিই রমরমিয়ে চলছে নেটফ্লিক্সে।
০২১৯
নেপালের কারাগারে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে বন্দি কুখ্যাত চার্লস শোভরাজ। ইতিমধ্যেই একাধিক বার ওপেন হার্ট সার্জারি হয়েছে তার। গোয়েন্দাদের দাবি, অন্তত ১২টি খুনের ঘটনা সে স্বীকার করেছে।
০৩১৯
একাধিক ভাষায় পারদর্শী শোভরাজ তার সুদর্শন চেহারা এবং আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বকে কাজে লাগাত টোপ হিসেবে। বিশ্বের বড় অংশের গোয়েন্দা ও পুলিশের চোখে ধুলো দেওয়া ছিল তার কাছে জলভাত।
০৪১৯
খুনের ধরন দেখে তাকে বলা হত ‘দ্য স্প্লিটিং কিলার’। হত্যাকাণ্ডের পরে সরীসৃপের মতো মসৃণ পথে পালানোর কায়দা তাকে নাম দিয়েছিল ‘দ্য সারপেন্ট’। বিশ্বের আপরাধ মানচিত্রে অন্যতম কুখ্যাত সে।
০৫১৯
বিভিন্ন টেলিভিশন সিরিজের সৌজন্যে চার্লস শোভরাজের জীবনীর বেশির ভাগটাই উন্মুক্ত বিশ্ববাসীর কাছে। অপরাধজগতের শীর্ষে থাকাকালীন সে ভারতে এক কন্যাসন্তানের জন্ম দেয়। সেই মেয়ে এখন কোথায়, কেমন আছেন এবং কী করছেন জানেন?
০৬১৯
নেটফ্লিক্সে ‘দ্য সারপেন্ট’ স্ট্রিমিং শুরু হওয়ার পর থেকেই চার্লস শোভরাজের পাশাপাশি আরও একটি নাম গুগল ট্রেন্ড-এ উঠে এসেছে। তিনি হলেন ঊষা সটলিফ।
০৭১৯
এই ঊষাই হলেন ‘বিকিনি কিলার’ চার্লস এবং তাঁর স্ত্রী প্যারিসের রক্ষণশীল অভিজাত পরিবারের তরুণী শাঁতাল কোম্পাগ্যাননের একমাত্র মেয়ে। অপরাধ জগতের সঙ্গে যুক্ত থাকাকালীনই শাঁতালের সঙ্গে প্রেম হয় চার্লসের। চার্লসের অপরাধের কথা সমস্ত জেনেই তাঁকে বিয়ে করেছিলেন শাঁতাল।
০৮১৯
‘দ্য সারপেন্ট’ বানানোর আগে ৫০ বছরের ঊষার কাছেও গিয়েছিলেন এই সিরিজের লেখক। চার্লসকে আরও কাছ থেকে জানার জন্যই তাঁর দ্বারস্থ হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ঊষা তাঁর সঙ্গে দেখা করতেই চাননি।
০৯১৯
ঊষা আসলে কোনও দিনই চার্লসকে বাবা হিসাবে মানেননি। তাঁর এই অতীত বরাবরই তিনি ভুলে থাকতে চেয়েছিলেন। এমনকি জ্ঞান হওয়ার পর থেকে চার্লসের মুখও দেখেননি তিনি।
১০১৯
পরবর্তীকালে যখন জেনেছেন মা শাঁতাল অপরাধী বাবার সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছেন, ঊষা মায়ের সঙ্গেও সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করে দিয়েছেন।
১১১৯
ঊষার জন্ম মু্ম্বইয়ে ১৯৭০ সালে। সস্ত্রীক চার্লস তখন পুলিশের খাতায় ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’। ওই বছর গ্রেফতারি এড়াতে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে নিয়ে ফ্রান্স ছেড়ে এশিয়ার উদ্দেশে রওনা দেয় শোভরাজ। নকল নথিপত্র নিয়ে পূর্ব ইউরোপ ঘুরে মুম্বই পৌঁছয় তারা। সেখানেই জন্ম ঊষার।
১২১৯
সেখান থেকে স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে কাবুলে চলে যায় চার্লস। ১৯৭৩ সালে কাবুলেই সন্ত্রীক ধরা পড়ে চার্লস। ছোট মেয়েকে পাঠানো হয় ফ্রান্সে তাঁর ঠাকুরদা-ঠাকুমার কাছে।
১৩১৯
তখন থেকেই বাবার সঙ্গে কোনও সম্পর্ক ছিল না তাঁর। পরবর্তীকালে ১৯৭৫ সালে তাঁর মা শাঁতাল বিয়ে করেন লিওন হ্যারিস নামে এক ব্যক্তিকে। কাবুলে জেলবন্দি থাকাকালীনই লিওনের সঙ্গে পরিচয় তাঁর। লিওন ঊষাকে দত্তক নেন। তখন থেকেই তাঁর কাছে লিওনই বাবা হয়ে ওঠেন।
১৪১৯
স্ত্রীর অন্য পুরুষের সঙ্গে বিয়ে, মেয়েকে তাঁর দত্তক নেওয়া সমস্ত খবরই রাখতেন চার্লস। কারণ শাঁতালের সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিলই। তবে নিজের অপরাধজগতে এতটাই বুঁদ ছিল সে যে এ সব নিয়ে মাথা ঘামাত না।
১৫১৯
ক্রমে বড় হতে থাকে তার অপরাধ চক্র। অজয় চৌধুরি নামে এক ভারতীয় বংশোদ্ভূত ছিল তার অপরাধের মূল সঙ্গী। ১৯৭৫ সালে প্রথম খুনের অভিযোগ উঠে আসে তাদের নামে। গোয়েন্দাদের খাতায় শোভরাজের প্রথম শিকার সিয়াটলের এক তরুণী। তাইল্যান্ডের সমুদ্রখাঁড়িতে তাঁকে ডুবিয়ে হত্যা করা হয়েছিল। নিথর তরুণীর পরনে ছিল বিকিনি।
১৬১৯
সারা বিশ্বের কাছে কুখ্যাত ‘সিরিয়াল কিলার’ হয়ে ওঠে সে। অন্তত ১২টি খুন করেছে চার্লস। অথচ মা-বাবার অপরাধ থেকে শতগুণ দূরে তাঁদেরই একমাত্র মেয়ে ঊষা। উল্টে অপরাধদমনে লাগাতার কাজ করে চলেছেন তিনি।
১৭১৯
পড়াশোনা শেষ করে দীর্ঘ সময় লস অ্যাঞ্জেলেস পুলিশের রিজার্ভ অফিসার হিসাবে কাজ করে গিয়েছেন।
১৮১৯
ম্যানহাটন ইনস্টিটিউড অব পলিসি রিসার্চের সেন্টার ফর পলিসিং টেরোরিজম-এর সঙ্গেও কাজ করেছেন তিনি।
১৯১৯
৫০ বছরের ঊষা এই মুহূর্তে অপরাধদমনে আমেরিকা প্রশাসনের সঙ্গে কাজ করে চলেছেন। তিনি আমেরিকার কাউন্টার-টেররিজম অ্যান্ড হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিশেষজ্ঞ।