ফাইল চিত্র।
আমেরিকায় ভোট থেকে ক্যাপিটলে তাণ্ডব—এই ৬৪ দিনে কী ছিল সংবাদমাধ্যম ও তার দর্শকদের অবস্থান। এই নিয়ে দুই বাঙালি গবেষকের গবেষণায় উঠে এসেছে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। ওই তাণ্ডবের জন্য অনেকেই ফক্স নিউজের সম্প্রচারকে দায়ী করলেও আষিক খুদাবখস ও রূপক সরকারের গবেষণায় দেখা গিয়েছে, স্বল্পখ্যাত তিন টেলিভিশন চ্যানেল এ ক্ষেত্রে অনেক বড় ভূমিকা নিয়েছিল। এ-ও দেখা গিয়েছে, ইন্টারনেটে দাবানলের মতো ছড়াতে পারে সন্দেহের বীজ। এই পরিস্থিতিতে গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ কী? আষিকদের উত্তর, ‘‘মহাবিশ্বের মতো ইন্টারনেটও শূন্য স্থান পছন্দ করে না। মনে সন্দেহ বাসা বাঁধলে সে এক বিকল্প সূত্র থেকে যাবে আর এক বিকল্পে, যতক্ষণ না সে তার মনের মতো বাস্তব পাচ্ছে।
কয়েক মাস আগে, সোশ্যাল মিডিয়ায় মন্তব্য থেকে রাজনৈতিক মেরুকরণ পরিমাপের এক নতুন পদ্ধতি নিয়ে গবেষণা শেষ করেছিলেন আষিকরা। দু'জনেই কল্যাণী গভর্নমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের প্রাক্তনী। আষিক কার্নেগি মেলন বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণারত। পিটসবার্গের আষিক ও দমদমের রূপক এই কাজে পাশে পেয়েছেন কার্নেগি মেলন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মার্ক ক্যামলেট ও টম মিচেলকে।
৬ জানুয়ারি ক্যাপিটলে তাণ্ডবের পরেই বন্ধ করে দেওয়া হয় তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দশটি সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট। আষিক বলেন, ‘‘ট্রাম্পের ইউটিউব চ্যানেল নিষিদ্ধ হওয়ার মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে, আমরা সংগ্রহ করতে পেরেছিলাম ২০২০ সালের আপলোড করা চার হাজারের কাছাকাছি ভিডিয়োয় সাতাশ লক্ষেরও বেশি কমেন্ট।’’ তিনি জানালেন, গবেষণায় তাঁরা সিএনএন, ফক্স নিউজ এবং এমএসএনবিসির ইউটিউব চ্যানেল ছাড়াও তিন কট্টর ডানপন্থী সংবাদমাধ্যমকে বেছেছেন, যারা ‘ভোট জালিয়াতির’ বিভ্রান্তিকর 'খবর' সব থেকে বেশি পরিবেশন করেছে। এরা হল, নিউজম্যাক্স, ওয়ান আমেরিকা নিউজ নেটওয়ার্ক (ওএএনএন ) ও ব্লেজ় টিভি।
ঘটনার সূত্রপাত ৩ নভেম্বর, রাত ১১টা। ৭৮% ভোটগণনার পরেই, রিপাবলিকানদের এক নম্বর পছন্দের ফক্স নিউজ অ্যারিজোনায় বিজয়ী হিসেবে বাইডেনের নাম ঘোষণা করে দেয়। শুরু হয় দলবদল। ট্রাম্প ক্রমাগত টুইট করতে থাকেন যে ভোটের ঠিক খবর পেতে সকলে যেন ফক্স নিউজের বদলে নিউজম্যাক্স, ওএএনএন দেখে। তখন সে দিকেই ঝুঁকে পড়েন ফক্সের দর্শক। ‘‘মাত্র আড়াই লক্ষ থেকে এই চৌষট্টি দিনে নিউজম্যাক্সের ইউটিউব চ্যানেলের সাবস্ক্রাইবারের সংখ্যা বেড়ে ১৭ লক্ষতে দাঁড়ায়।’’বললেন রূপক। কেবল সাবস্ক্রাইবারই নয়— ভিডিও ডিজ়লাইক আর লাইকের নিরিখেও ফক্সের জনপ্রিয়তা হ্রাস চোখে পড়ার মতো। আর গবেষণা অনুযায়ী, ওই তিন চ্যানেল ‘অবৈধ’ ভোট নিয়ে ‘খবর’ পরিবেশন করে দর্শকদের টেনে নিয়ে গেছে এক ‘কাল্পনিক জগতে’।
মেরুকরণ কোন পর্যায়ে পৌঁছেছিল, তার নজির মিলেছে কৃত্রিম মেধাভিত্তিক প্রযুক্তি— মাস্কড ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল ‘বার্ট’- এর ব্যবহারে। বার্টকে হাজার হাজার বাক্য ফিড করার পর, মডেলটিকে শূন্যস্থান পূরণ করতে দিলে, বার্ট সম্ভাব্য উত্তরের তালিকা পেশ করে। যেমন বার্টকে ওই সংবাদমাধ্যমগুলির ভিডিয়োর লক্ষ লক্ষ মন্তব্য ফিড করার পরে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, ‘‘আমেরিকার সব থেকে বড় সমস্যা হল _?’’ অতিবাম এমএসনবিসিতে যেখানে প্রথম তিনটি উত্তরে রয়েছে ‘ট্রাম্প’, ‘কোভিড’ আর ‘বেরোজগারি’, নিউজম্যাক্স-এর কমেন্ট ফিড করলে সেই উত্তর পাল্টে হয়ে যায় ‘সাম্যবাদ’, ‘দুর্নীতি’ আর ‘সমাজতন্ত্র’। ‘‘নির্বাচন জিতেছেন _’’ শূন্যস্থান পূরণেও ট্রাম্পের দিকে পাল্লা ভারী ছিল কট্টর ডানপন্থী চ্যানেলে। মেশিন-ট্রান্সলেশন পদ্ধতি কাজে লাগিয়ে দেখা গিয়েছে, কট্টর ডানপন্থী সংবাদমাধ্যমগুলির সঙ্গে ট্রাম্পের সমর্থকদের ভাষাগত মিল মূল স্রোতের সংবাদমাধ্যমের থেকে অনেক বেশি। ভোট নিয়ে সন্দেহপ্রবণতাও এই চ্যানেলগুলির দর্শকদের মধ্যেই সবথেকে বেশি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy