আমেরিকার হবু প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। —ফাইল ছবি।
বাংলাদেশে মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে চরমপন্থার বাড়বাড়ন্ত এবং সংখ্যালঘুদের উপরে নির্যাতন নিয়ে ফের গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করল আমেরিকার হবু প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শিবির। প্রথম দফায় দক্ষিণ এশিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তা লিসা কার্টিস মন্তব্য করেছেন, শেখ হাসিনাকে উৎখাতের ফলে বাংলাদেশ ‘গুরুত্বপূর্ণ একটি সন্ধিক্ষণে এসে দাঁড়িয়েছে, যা তাদের ভবিষ্যৎকে নিয়ন্ত্রণ করবে’। চরমপন্থী, মৌলবাদী এবং জঙ্গিদের নিয়ন্ত্রণে শেখ হাসিনা ‘প্রশংসনীয়’ দায়িত্ব পালন করেছিলেন বলেও সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মন্তব্য করেছেন কার্টিস।
বাংলাদেশ নিয়ে আমেরিকার বাইডেন সরকার এবং ট্রাম্পের মধ্যে গুরুতর মতভেদের বিষয়টি আগেও সামনে এসেছে। শেখ হাসিনা অভিযোগ করেছেন, বাইডেন প্রশাসনই গণঅভ্যুত্থান ঘটিয়ে তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশের আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটিয়েছে। হাসিনার দাবি অনুযায়ী— সেন্ট মার্টিন দ্বীপ ছেড়ে দিতে রাজি না-হওয়াতেই বাইডেন প্রশাসনের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক কর্মকর্তা ডোনাল্ড লু পরিকল্পনা করে তাঁকে উচ্ছেদ করেছেন। ঢাকায় নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বাইডেন প্রশাসনের সখ্য যথেষ্ট। কিন্তু প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের অব্যবহিত আগে দেওয়ালির শুভেচ্ছা বার্তায় ট্রাম্প বাংলাদেশে সাম্প্রতিক ‘হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানের মতো ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপরে হত্যা ও নির্যাতন’-এর উল্লেখ করে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তার পরে এই পরিস্থিতির জন্য তিনি বাইডেনকে দায়ী করেন। বাংলাদেশের রাজনৈতিক শিবিরের একাংশ ট্রাম্পের এই মন্তব্যকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন, কারণ তাঁদের মতে বাংলাদেশ পরিস্থিতির জন্য বাইডেনকে দায়ী করে তিনি ঢাকায় শাসক পরিবর্তনের নীতির সমালোচনাই করেছেন।
ট্রাম্পের ঘনিষ্ট হিসাবে পরিচিত লিসা কার্টিস এ দিন বলেন, “বলা হয়েছিল শেখ হাসিনার উৎখাতে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া শক্তিশালী হবে। কিন্তু এখন পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। বেশ কিছু জঙ্গি নেতাকে জেল থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানদের উপরে আক্রমণের ঘটনা ঘটছে।” ২০১৭ থেকে ২০২১ পর্যন্ত জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদে দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া সংক্রান্ত ডিরেক্টরের দায়িত্বে থাকা কার্টিস বলেন, “বাংলাদেশে জঙ্গি হামলার ইতিহাস আছে। ২০১৬ সালে হোলি আর্টিজানে হামলা ভয়ঙ্কর ঘটনা। এ দেশে আইএস প্রভাবিত কিছু শক্তি রয়েছে। হাসিনা জঙ্গি শক্তিকে নিয়ন্ত্রণে প্রশংসনীয় কাজ করেছিলেন। রাজনীতির ময়দানে এই শক্তির ফিরে আসার বিষয়টি সত্যিই উদ্বেগের।” কার্টিসের কথায়, এই ঘটনা কারও পক্ষেই ভাল হতে পারে না। তিনি বলেন, “গুরুত্বপূর্ণ সময়ে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ। যদিও এটা অগ্রাধিকারের প্রথম স্থানে নেই, তবু ভাবী প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা দল বাংলাদেশকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেবে।”
অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিনের কাজকর্ম নিয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে ব্রাসেলসের সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ। তাতে বলা হয়েছে, দীর্ঘদিন ক্ষমতা ধরে রাখতে চেয়ে গণবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল শেখ হাসিনা সরকার। তাদের উচ্ছেদের পরে ইউনূস সরকারের উপরে দেশের মানুষের অগাধ প্রত্যাশার চাপ। তবে রাজনীতি, অর্থনীতি, নির্বাচন ব্যবস্থা ও দুর্নীতি প্রতিরোধের মতো ক্ষেত্রে সংস্কারের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু এই রিপোর্টেই বলা হয়েছে, নতুন সরকারের পক্ষে এই সুযোগ সদ্ব্যবহার করা খুবই কঠিন।
এ দিনই সরকার সমর্থক বৃহত্তম দল বিএনপির একটি দল ঢাকায় আমেরিকার রাষ্ট্রদূত মেগান বোল্ডিনের সঙ্গে দেখা করেন। ট্রাম্প সরকারের আস্থা অর্জনের জন্যই তাদের এই পদক্ষেপ বলে মনে করা হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy