Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Yemen

Well of Barhout : ‘নরকের কূপে’ বন্দি থাকে জিন! রহস্যোদ্ঘাটনে হাজির গুহাবিদরা

আলাদিনের জিন প্রদীপে বন্দি ছিল। তবে ইয়েমেনের উপকথার দুষ্ট জিনরা এই অন্ধকূপের বন্দি। যেখানে সাধারণ মানুষ ঢুকলে তাঁর বেঁচে ফেরা অসম্ভব।

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১৫:৩৮
Share: Save:
০১ ১৭
একটি কূপ। বিশাল তার হাঁ-মুখ। গভীর। তবে জলহীন। অথচ তাকে জুজুর মতো ভয় পান ইয়েমেনের মানুষ।

একটি কূপ। বিশাল তার হাঁ-মুখ। গভীর। তবে জলহীন। অথচ তাকে জুজুর মতো ভয় পান ইয়েমেনের মানুষ।

০২ ১৭
ঠিকানা ইয়েমেনের আল-মাহার প্রদেশের একটি মরুভূমিতে। প্রায় ১০০ ফুট চওড়া কূপটির গভীরতা ১১২ মিটার বা ৩৬৭ ফুট। একটি প্রমাণ মাপের ৩০ তলা বাড়ি অনায়াসে ঢুকে যাবে এই কূপের ভিতরে।

ঠিকানা ইয়েমেনের আল-মাহার প্রদেশের একটি মরুভূমিতে। প্রায় ১০০ ফুট চওড়া কূপটির গভীরতা ১১২ মিটার বা ৩৬৭ ফুট। একটি প্রমাণ মাপের ৩০ তলা বাড়ি অনায়াসে ঢুকে যাবে এই কূপের ভিতরে।

০৩ ১৭
ইয়েমেনিরা অবশ্য এই কূপের ধারে ঘেঁষেন না। নাম করতেও ভয় পান। তাঁদের ধারণা, নাম উচ্চারণ করলে অভিশাপ নেমে আসতে পারে। কাছে গেলে কুয়োর বিশাল হাঁ-মুখ চোখের নিমেষে ভিতরে টেনে নেবে তাঁদের।

ইয়েমেনিরা অবশ্য এই কূপের ধারে ঘেঁষেন না। নাম করতেও ভয় পান। তাঁদের ধারণা, নাম উচ্চারণ করলে অভিশাপ নেমে আসতে পারে। কাছে গেলে কুয়োর বিশাল হাঁ-মুখ চোখের নিমেষে ভিতরে টেনে নেবে তাঁদের।

০৪ ১৭
নাম বারহুট কূপ। তবে ইয়েমেনের মানুষ ওই নাম মুখেও আনেন না। বারহুটকে তাঁরা ডাকেন ‘ওয়েল অফ হেল’ বা 'নরকের কূপ' বলে ডাকেন। বাকি বিশ্বেও বারহুটের এই নামটিই জনপ্রিয় বেশি।

নাম বারহুট কূপ। তবে ইয়েমেনের মানুষ ওই নাম মুখেও আনেন না। বারহুটকে তাঁরা ডাকেন ‘ওয়েল অফ হেল’ বা 'নরকের কূপ' বলে ডাকেন। বাকি বিশ্বেও বারহুটের এই নামটিই জনপ্রিয় বেশি।

০৫ ১৭
বারহুটকে ঘিরে তৈরি হওয়া অতিপ্রাকৃত ধারণার অবশ্য একটি ভিত্তি আছে। তা হল কয়েকশো বছর ধরে প্রচলিত ইয়েমেনের কিছু উপকথা। যেখানে বারবার এই কূপের উল্লেখ করা হয়েছে 'জিনদের কারাগার' হিসেবে।

বারহুটকে ঘিরে তৈরি হওয়া অতিপ্রাকৃত ধারণার অবশ্য একটি ভিত্তি আছে। তা হল কয়েকশো বছর ধরে প্রচলিত ইয়েমেনের কিছু উপকথা। যেখানে বারবার এই কূপের উল্লেখ করা হয়েছে 'জিনদের কারাগার' হিসেবে।

০৬ ১৭
এ প্রসঙ্গে 'আরব্য রজনী'র আখ্যানে আলাদিনের ‘বন্ধু’ জিনের কথাও মনে পড়ে। আলাদিনের জিন যদিও প্রদীপে বন্দি ছিল। ইয়েমেনের উপকথায় দাবি, দুষ্ট জিনদের বন্দি করতেই এই অন্ধকূপ তৈরি হয়েছিল। এখানে এক বার ঢুকলে সাধারণ মানুষের বেঁচে ফেরা অসম্ভব।

এ প্রসঙ্গে 'আরব্য রজনী'র আখ্যানে আলাদিনের ‘বন্ধু’ জিনের কথাও মনে পড়ে। আলাদিনের জিন যদিও প্রদীপে বন্দি ছিল। ইয়েমেনের উপকথায় দাবি, দুষ্ট জিনদের বন্দি করতেই এই অন্ধকূপ তৈরি হয়েছিল। এখানে এক বার ঢুকলে সাধারণ মানুষের বেঁচে ফেরা অসম্ভব।

০৭ ১৭
এমনই নানা সংস্কার এবং ভয়ে বারহুটের রহস্যোদ্ঘাটন এত দিন হয়ে ওঠেনি। ইয়েমেনিদের সাহসে কুলোয়নি। তবে মরুভূমির মাঝখানে ওই গর্তের ভিতর কী আছে, তা জানতে ভূতাত্ত্বিকেরা বরাবরই আগ্রহী ছিলেন।

এমনই নানা সংস্কার এবং ভয়ে বারহুটের রহস্যোদ্ঘাটন এত দিন হয়ে ওঠেনি। ইয়েমেনিদের সাহসে কুলোয়নি। তবে মরুভূমির মাঝখানে ওই গর্তের ভিতর কী আছে, তা জানতে ভূতাত্ত্বিকেরা বরাবরই আগ্রহী ছিলেন।

০৮ ১৭
সম্প্রতি সেই আগ্রহ মেটানোর সুযোগও হল। ওমানের ১০ জন গুহাবিদ যাবতীয় সংস্কারকে শিকেয় তুলে বারহুট অভিযানে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এঁদের মধ্যে আট জন কূপের ভিতর প্রবেশ করেছিলেন। বাকিরা তাঁদের জন্য অপেক্ষা করছিলেন বাইরে।

সম্প্রতি সেই আগ্রহ মেটানোর সুযোগও হল। ওমানের ১০ জন গুহাবিদ যাবতীয় সংস্কারকে শিকেয় তুলে বারহুট অভিযানে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এঁদের মধ্যে আট জন কূপের ভিতর প্রবেশ করেছিলেন। বাকিরা তাঁদের জন্য অপেক্ষা করছিলেন বাইরে।

০৯ ১৭
ভূপৃষ্ঠ থেকে ৩৬৭ ফুট গভীরে বারহুটের তলদেশ। দিনের সব সময় ভাল করে আলোও পৌঁছয় না সেখানে। ওমানি গুহা বিশেষজ্ঞদের বারহুটের তলদেশ স্পর্শ করতে প্রায় অর্ধেক দিন লেগে যায়। তবে যে তথ্য তাঁরা সংগ্রহ করেন, তার কাছে ওই পরিশ্রম লাঘব হয়ে যায়।

ভূপৃষ্ঠ থেকে ৩৬৭ ফুট গভীরে বারহুটের তলদেশ। দিনের সব সময় ভাল করে আলোও পৌঁছয় না সেখানে। ওমানি গুহা বিশেষজ্ঞদের বারহুটের তলদেশ স্পর্শ করতে প্রায় অর্ধেক দিন লেগে যায়। তবে যে তথ্য তাঁরা সংগ্রহ করেন, তার কাছে ওই পরিশ্রম লাঘব হয়ে যায়।

১০ ১৭
বারহুটে কোনও ‘জিন’ বা দৈত্যের দেখা পাননি তাঁরা। কোনও লোহার শলাকা গাঁথা কারাগারেরও নয়। তবে অদ্ভুত একটা গন্ধ পেয়েছেন।

বারহুটে কোনও ‘জিন’ বা দৈত্যের দেখা পাননি তাঁরা। কোনও লোহার শলাকা গাঁথা কারাগারেরও নয়। তবে অদ্ভুত একটা গন্ধ পেয়েছেন।

১১ ১৭
গুহার ভিতরে বহু পশু পাখির মৃতদেহ পড়েছিল। গন্ধটি তার থেকেই তৈরি হয়েছে বলে প্রাথমিক অনুমান গুহা বিশেষজ্ঞদের। তাঁরা জানিয়েছেন, গন্ধটি পচনের নয়। অসহনীয়ও নয়। গন্ধের কারণ জানতে মৃত পশুপাখির দেহগুলি  সংগ্রহ করে এনেছেন তাঁরা। আর এনেছেন গুহার মাটি, পাথর, বৃষ্টির জমা জলের নমুনা।

গুহার ভিতরে বহু পশু পাখির মৃতদেহ পড়েছিল। গন্ধটি তার থেকেই তৈরি হয়েছে বলে প্রাথমিক অনুমান গুহা বিশেষজ্ঞদের। তাঁরা জানিয়েছেন, গন্ধটি পচনের নয়। অসহনীয়ও নয়। গন্ধের কারণ জানতে মৃত পশুপাখির দেহগুলি সংগ্রহ করে এনেছেন তাঁরা। আর এনেছেন গুহার মাটি, পাথর, বৃষ্টির জমা জলের নমুনা।

১২ ১৭
গুহার নীচে এক ধরনের উজ্জ্বল সবুজ নিটোল গোল পাথরেরও সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। এক ঝলকে দেখে মনে হতে পারে, পাতিলেবুর রঙের এবং আকারের মুক্তা। তবে আসলে সেগুলি মুক্তা নয়। গুহার ভিতর চুঁইয়ে পড়া বৃষ্টির জলের ক্যালসিয়াম থেকে এই ধরনের পাথর তৈরি হয়। নাম ‘কেভ পার্ল’ বা 'গুহা-মুক্তা'।

গুহার নীচে এক ধরনের উজ্জ্বল সবুজ নিটোল গোল পাথরেরও সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। এক ঝলকে দেখে মনে হতে পারে, পাতিলেবুর রঙের এবং আকারের মুক্তা। তবে আসলে সেগুলি মুক্তা নয়। গুহার ভিতর চুঁইয়ে পড়া বৃষ্টির জলের ক্যালসিয়াম থেকে এই ধরনের পাথর তৈরি হয়। নাম ‘কেভ পার্ল’ বা 'গুহা-মুক্তা'।

১৩ ১৭
গুহার ভিতর চুনাপাথরও পেয়েছেন ওমানিরা। তবে এ-সব কিছুর থেকে গুরুত্বপূর্ণ এবং মূল্যবান যে বিষয়টি তাঁরা আবিষ্কার করেছেন, তা হল—সত্যি।

গুহার ভিতর চুনাপাথরও পেয়েছেন ওমানিরা। তবে এ-সব কিছুর থেকে গুরুত্বপূর্ণ এবং মূল্যবান যে বিষয়টি তাঁরা আবিষ্কার করেছেন, তা হল—সত্যি।

১৪ ১৭
এত দিন ধরে যে ভয় ইয়েমেনিদের কাবু করে রেখেছিল, তা যে আদতে ভিত্তিহীন তা প্রমাণ করে দিয়েছেন ওমানের এই গুহা বিশেষজ্ঞরা। বারহুটের কূপের সঙ্গে যে আর পাঁচটা প্রাকৃতিক ভাবে তৈরি গহ্বরের গঠনগত তেমন তফাৎ নেই,  তা স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন।

এত দিন ধরে যে ভয় ইয়েমেনিদের কাবু করে রেখেছিল, তা যে আদতে ভিত্তিহীন তা প্রমাণ করে দিয়েছেন ওমানের এই গুহা বিশেষজ্ঞরা। বারহুটের কূপের সঙ্গে যে আর পাঁচটা প্রাকৃতিক ভাবে তৈরি গহ্বরের গঠনগত তেমন তফাৎ নেই, তা স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন।

১৫ ১৭
গুহাবিদদের কথায়, এই ধরনের গহ্বরকে বলা হয় 'সিঙ্কহোল'। ভূপৃষ্ঠের নিচে জমে থাকা জলে পাথর ধীরে ধীরে দ্রবীভূত হয়ে গেলে এমন গর্ত তৈরি হয়। বাহরুটের মতো কূপ তৈরি হতে লক্ষাধিক বছর সময় লেগে থাকতে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের অনুমান। তাঁরা জানিয়েছেন, এর সঙ্গে দুর্ভাগ্য, বিপদ বা আতঙ্কের কোনও সম্পর্ক নেই।

গুহাবিদদের কথায়, এই ধরনের গহ্বরকে বলা হয় 'সিঙ্কহোল'। ভূপৃষ্ঠের নিচে জমে থাকা জলে পাথর ধীরে ধীরে দ্রবীভূত হয়ে গেলে এমন গর্ত তৈরি হয়। বাহরুটের মতো কূপ তৈরি হতে লক্ষাধিক বছর সময় লেগে থাকতে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের অনুমান। তাঁরা জানিয়েছেন, এর সঙ্গে দুর্ভাগ্য, বিপদ বা আতঙ্কের কোনও সম্পর্ক নেই।

১৬ ১৭
কিছুদিন আগেই ইয়েমেন সরকার জানিয়েছিল, তারা বারহুটে ৫০ মিটারের নীচে নামতে পারেননি। যাঁরা নামছিলেন, তাঁরা ভয় পেয়েছিলেন।

কিছুদিন আগেই ইয়েমেন সরকার জানিয়েছিল, তারা বারহুটে ৫০ মিটারের নীচে নামতে পারেননি। যাঁরা নামছিলেন, তাঁরা ভয় পেয়েছিলেন।

১৭ ১৭
ওমানি গুহাবিদরা অবশ্য জানিয়েছেন, তাঁরা কোনও রকম ভয়কে গুরুত্বই দেননি। অজানাকে জানার অদম্য ইচ্ছেই 'নরকের কূপে'র মাটি স্পর্শ করতে তাঁদের সাহায্য করেছে। তবে শেষ পর্যন্ত সত্যিটা জানতে এবং জানাতে পেরে তাঁরা গর্বিত। গুহাবিদদের ধারণা, হয়তো কোনও উপকথায় কোনও দিন তাঁদের এই আবিষ্কারের কথাও লেখা হবে। আর সেটাই হবে তাঁদের পুরস্কার।

ওমানি গুহাবিদরা অবশ্য জানিয়েছেন, তাঁরা কোনও রকম ভয়কে গুরুত্বই দেননি। অজানাকে জানার অদম্য ইচ্ছেই 'নরকের কূপে'র মাটি স্পর্শ করতে তাঁদের সাহায্য করেছে। তবে শেষ পর্যন্ত সত্যিটা জানতে এবং জানাতে পেরে তাঁরা গর্বিত। গুহাবিদদের ধারণা, হয়তো কোনও উপকথায় কোনও দিন তাঁদের এই আবিষ্কারের কথাও লেখা হবে। আর সেটাই হবে তাঁদের পুরস্কার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy