পাশে: হাউডি মোদীর মঞ্চে মোদী ও ট্রাম্প। ফাইল চিত্র
‘হাউডি মোদী’-র এক মাস অতিক্রান্ত। কূটনৈতিক শিবিরে প্রশ্ন উঠছে, টেক্সাসের ওই মঞ্চে ভারত-আমেরিকা ‘মহা ঐক্যের’ যে ছবি প্রচার করা হল, তাতে বাস্তবে চিঁড়ে ভিজল কতটা ?
প্রাথমিক খতিয়ানে দেখা যাচ্ছে, প্রথমত, বহু প্রতীক্ষিত বাণিজ্য চুক্তি (যা সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল নরেন্দ্র মোদীর সেপ্টেম্বরের নিউ ইয়র্ক সফরেই) এখনও সেই তিমিরে। দ্বিতীয়ত, পাকিস্তানের পাশ থেকে সরে যাওয়ার এতটুকু ইঙ্গিত ট্রাম্প সরকার দেখায়নি। বরং ‘হাউডি’-র পরেই পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সঙ্গে বৈঠক করে ভারতকে কাশ্মীর নিয়ে বার্তা দিয়েছেন। কাশ্মীর নিয়ে তৃতীয় দেশের মধ্যস্থতা যে ভারত চায় না তা মোদী স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়ার পর, আজও সেই একই কথা
বলেছে ট্রাম্প প্রশাসন। তৃতীয়ত, দু’দিন আগেই কাশ্মীর থেকে এনআরসি — মোদী সরকারের নীতির কড়া সমালোচনা করে রিপোর্ট দিয়েছে ট্রাম্প সরকারের বিদেশ মন্ত্রক।
পাশাপাশি, মার্কিন কংগ্রেসের অনেক সদস্যই কমিটির বৈঠকে সুর চড়িয়েছেন কাশ্মীরে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ নিয়ে। উল্লেখ্য, ‘হাউডি মোদী’-র অনুষ্ঠানে উপস্থিত কংগ্রেস সদস্যও কিন্তু সরব কাশ্মীরের সরকারি অবদমনের অভিযোগ নিয়ে। কংগ্রেস সদস্যদের মতামতকে ‘ব্যক্তিগত’ বলে অভিহিত করলেও মার্কিন বিদেশ মন্ত্রক এনআরসি, দলিত ও সংখ্যালঘু অত্যাচার নিয়ে লিখিত রিপোর্ট কেন তৈরি করল, ভারত-মার্কিন ঐক্যের ছবিকে ম্লান করে দিয়ে— তার সদুত্তর দিতে পারেনি সাউথ ব্লক। বরং অস্বস্তি বেড়েছে।
কূটনৈতিক সূত্রের বক্তব্য, এটা ঠিকই যে আমেরিকা বাণিজ্যিক এবং কৌশলগত স্বার্থ অনুসারে, হিসেব কষে ক্ষেত্র বিশেষে ভিন্ন অবস্থান নেয় এবং নিজেদের নীতিতে ভারসাম্য বজায় রাখে। এ ক্ষেত্রেও তা-ই ঘটেছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় চিনের একাধিপত্য ঠেকাতে ভারতের মতো দেশের প্রয়োজন রয়েছে ওয়াশিংটনের। পাশাপাশি ভারতের বিপুল বাজার মার্কিন বাণিজ্যিক সংস্থাগুলির কাছে পরম লোভনীয়। নিজেদের শর্তে ভারতে বিনিয়োগ এবং পণ্য রফতানির জন্য উঠে পড়ে লেগেছে সে দেশের বাণিজ্য মন্ত্রক। তাই ‘হাউডি মোদীকে’ সফল করে নয়াদিল্লির প্রতি ইতিবাচক সংকেত দেওয়া প্রয়োজন ছিল ট্রাম্পের।
টেক্সাসের বিশাল ভারতীয়-আমেরিকান ডেমোক্র্যাট ভোটব্যাঙ্ককে প্রভাবিত করতেও হাউডি-মঞ্চের চিত্রনাট্য ট্রাম্পের জন্য জরুরি ছিল বলেই মনে করা হচ্ছে। অন্য দিকে, আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার করার ক্ষেত্রে শেষ পর্যন্ত ইসলামাবাদকে যে প্রয়োজন হবে, তাও হিসাবের মধ্যে রেখে চলছে হোয়াইট হাউস। এফএটিএফ-এ পাকিস্তানকে বাঁচার শেষ সুযোগ দেওয়ার পিছনে আমেরিকাও সক্রিয় ছিল বলে সূত্রের খবর।
কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর থেকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারবার বলে চলেছেন যে তিনি ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে মধ্যস্থতা করতে প্রস্তুত। আজ তিনি নিজে না বললেও মার্কিন বিদেশ দফতরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে একই কথা। বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের মতে, নিজেদের শর্তে ভারতকে বাণিজ্যিক চুক্তিতে রাজি করাতে ভারতকে চাপের মধ্যে রাখা আমেরিকার জাতীয় স্বার্থের মধ্যে পড়ে। সেই চাপ বাড়াতে বারবার পাকিস্তান বা কাশ্মীরের তাস খেলা তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। দ্বিতীয়ত, আমেরিকায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে ঘরোয়া স্তরে মানবাধিকার রক্ষায় নিজেদের ভূমিকা তুলে ধরার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে রিপাবলিকান এবং ডেমোক্র্যাট— উভয় পক্ষেরই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy