বইয়ের প্রচ্ছদ
লেডি মাউন্টব্যাটেনের (এডুইনা) প্রেমের সম্পর্ক নিয়ে অনেক কিছু শোনা যায়। কিন্তু ততটা প্রচারে আসেনি লর্ড মাউন্টব্যাটেনের ব্যক্তিগত জীবন। সম্প্রতি একটি বই ভারতের প্রাক্তন ভাইসরয় লর্ড লুই মাউন্টব্যাটেনের জীবনের অন্দরমহলে আলোকপাত করতে চলেছে, যাতে দাবি, মাউন্টব্যাটেন উভকামী ছিলেন।
সম্প্রতি মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইয়ের কিছু গোপন ফাইল ঘেঁটে গবেষক এবং ‘রয়্যাল হিস্টোরিকাল সোসাইটির’ ফেলো অ্যান্ড্রু লোনি একটি বই লিখেছেন। সেটির নাম, ‘দ্য মাউন্টব্যাটেনস: দেয়ার লাইভস অ্যান্ড লাভস।’ প্রকাশিত হচ্ছে আগামী বৃহস্পতিবার।
এ বিষয়টিও সর্বজনবিদিত যে, মাউন্টব্যাটেন এবং তাঁর স্ত্রীর বিয়েটা কোনও ‘নিয়মের’ বেড়াজালে আবদ্ধ ছিল না। দু’জনেরই একাধিক প্রেমের সম্পর্ক ছিল। মাউন্টব্যাটেনদের কন্যারা— প্যাট্রিশিয়া এবং পামেলা, দু’জনেই প্রকাশ্যে বলেছেন, তাঁদের মায়ের বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক ছিল। পামেলা তাঁর লেখা বইয়ে জওহরলাল নেহরুর সঙ্গে এডুইনার বিশেষ সম্পর্কের কথা স্বীকারও করেছেন। কিন্তু লুই মাউন্টব্যাটেন নিয়ে সে ভাবে কেউই কিছু বলেননি। যদিও মাউন্টব্যাটেন নিজেই এক সময় বলেছিলেন, ‘‘এডুইনা আর আমার গোটা বিবাহিত জীবনটা অন্যের শয্যাসঙ্গী হয়েই কেটে গেল!’’ ৪০ বছর আগে আইরিশ রিপাবলিকান আর্মি-র হাতে মাউন্টব্যাটেনের হত্যার পরে তাঁর ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে নানা গুজব ছড়াতে শুরু করে।
তবে ডিউক অব এডিনবরা, প্রিন্স ফিলিপের সম্পর্কিত ভাই মাউন্টব্যাটেনকে খুবই পছন্দ করতেন ব্রিটেনের যুবরাজ চার্লস। ‘আঙ্কল ডিকি’ ছিলেন তাঁর খুবই প্রিয়— বিভিন্ন জায়গায় বহুবার যুবরাজ চার্লস তা বলেওছেন।
মোটামুটি তিন দশকের তথ্য ছিল এফবিআইয়ের গোপন ফাইলে। মাউন্টব্যাটেন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কমান্ডার হওয়ার পরে ১৯৪৪ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে অনেক তথ্যই জমা ছিল। লোনি এফবিআই রিপোর্টে এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির মন্তব্য খুঁজে পেয়েছেন, যা থেকে বোঝা গিয়েছে, ‘নৈতিকতা’ নিয়ে কোনও মাথাব্যথা ছিল না মাউন্টব্যাটেনদের। কমবয়েসি ছেলেদের পছন্দ করতেন লর্ড মাউন্টব্যাটেন। এক জনের বক্তব্য থেকে উঠে এসেছে, মাউন্টব্যাটেনের এই স্বভাবের জন্য তাঁর অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। লেডি মাউন্টব্যাটেনও খামখেয়ালি ব্যবহারের জন্য পরিচিত ছিলেন। তবে এফবিআইয়ের এই সব ফাইল ব্রিটিশ সরকারের হাতে পৌঁছেছিল কি না, সেটা স্পষ্ট নয়।
মাউন্টব্যাটেনের গাড়ির চালক রন পার্কসের কথাও বইয়ে রয়েছে। ১৯৪৮ সালে মাল্টায় তিনি মাউন্টব্যাটেনের গাড়ি চালাতেন। মরক্কোর রাজধানী রাবাতের কাছে ‘রেড হাউস’ নামে একটি জায়গায় প্রায়শই যেতেন মাউন্টব্যাটেন। মূলত সমকামীদের যৌনপল্লি হিসেবে ব্যবহার হত জায়গাটি। সে সময়ে বিষয়টি নিয়ে যথেষ্ট রাখঢাক ছিল। প্রায় ৭০ বছর পরে রন এ তথ্য প্রকাশ্যে আনেন।
১৯৫৬ সালে সুয়েজ সঙ্কটের সময়ে মাউন্টব্যাটেন সম্পর্কে আমেরিকায় উৎসাহ বাড়ে। সমকামী মাউন্টব্যাটেনকে নিয়ে এফবিআইয়ের বহু ফাইল নষ্ট করে দেওয়া হয়েছিল। ১৯৫৬ সালের এপ্রিল-জুলাইয়ের ফাইল নষ্ট করা হয় ২০১৭ সালের মে মাসে। লোনি ওই ফাইলটি সম্পর্কে খোঁজ করার পরেই ওই পদক্ষেপ করা হয় বলে দাবি।
১৯৫০-এর মাঝামাঝি তৎকালীন ভারতীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী কৃষ্ণ মেননের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার সুবাদে এডুইনাকে নিয়ে জোর চর্চা শুরু হয়। শুধু তিনি নন, মার্কিন নাগরিক অধিকার রক্ষার আন্দোলনের বহু ব্যক্তির সঙ্গেই জড়িয়ে পড়েন এডুইনা। এফবিআই এই সময়ে রিপোর্ট তৈরি করছে মাউন্টব্যাটেনের সমকামিতা নিয়ে, আর সে রিপোর্ট পাঠানো হচ্ছে মার্কিন বিচার বিভাগে। ১৯৫৭ সালের এপ্রিলে এফবিআই একটি মেমো আনে, যাতে গায়ক পল রোবসনের সঙ্গে এডুইনার সম্পর্ক নিয়ে অভিযোগ ওঠে। এই পর্বে এডুইনার সঙ্গে বেশ কয়েক জন কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তির সম্পর্ক তৈরি হয়। যাঁর মধ্যে ছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের গায়ক এবং পিয়ানোবাদক লেসলি হাচিনসন। লেফটেন্যান্ট কর্নেল হ্যারল্ড ফিলিপসের সঙ্গেও জড়িয়েছিলেন এডুইনা। আর লর্ড মাউন্টব্যাটেন এ সময়ে ছিলেন ফরাসি মহিলা ইয়োলা লুতেলিয়ের সঙ্গে।
পামেলা তাঁর স্মৃতিকথায় লিখেছিলেন, ‘‘মায়ের প্রেমিক রয়েছে জানার পরে প্রাথমিক ভাবে ধসে গিয়েছিলেন বাবা। তবে ধীরে ধীরে পরস্পরের প্রতি গভীর স্নেহ থেকে এই সঙ্কটের সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের উপায় বার করেছিলেন ওঁরা।’’
১৯৬৮ সালে এফবিআইয়ের মে মাসের ফাইল থেকে দেখা যাচ্ছে, সুয়েজ সঙ্কটের সময়ে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টনি ইডেন, মাউন্টব্যাটেন এবং কূটনীতিক অ্যান্টনি নাটিংয়ের সমকামী সম্পর্ক নিয়ে চর্চা চলেছে। নায়কোচিত চেহারা এবং নজর কাড়ার ক্ষমতার জোরে বেশ কিছু বিখ্যাত সমকামী ব্যক্তির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয় মাউন্টব্যাটেনের। নাট্যকার নোয়েল কোয়ার্ড, টেরেন্স রাটিগান এবং অভিনেতা আইভর নোভেলো ছিলেন এর মধ্যে। আর এঁরা মাউন্টব্যাটেনকে ডাকতেন ‘মাউন্টবটম’ বলে! সাংবাদিক এবং এমপি টম ড্রিবার্গের সঙ্গেও নাম জড়িয়েছিল মাউন্টব্যাটেনের। এঁরা দু’জনেই নাকি আবার উর্দিধারী সুন্দর যুবক এবং স্কুল ইউনিফর্ম পরা ছেলেদের প্রতি আকৃষ্ট ছিলেন।
ফ্রান্সিস হুইন নামে আর এক জীবনীকারের দাবি, তাঁর হাতে একটি চিঠি ছিল (যেটি পরে নষ্ট হয়ে যায়) যাতে লেখা, মাত্র ১৭ বছর বয়সে মাউন্টব্যাটেন যৌন প্রলোভন দেখিয়েছিলেন চিঠির লেখককে। লোনি আবার প্রমাণ পেয়েছেন, ১৩ বছরের লুই মাউন্টব্যাটেন ডরসেটে থাকাকালীন হুপিং কাশিতে ভুগছিলেন। তখন তাঁকে পড়াতেন ফ্রেডরিক লরেন্স লং নামে বছর তিরিশের অবিবাহিত এক যুবক। লংয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল কিশোর মাউন্টব্যাটেনের। পরবর্তীকালে এডুইনার সঙ্গে তাঁর বিয়ে দিয়েছিলেন এই লং-ই। যদিও এ ব্যাপারে এডুইনাকে একটি শব্দও কখনও জানাননি মাউন্টব্যাটেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy