জলের পরিমাণ কমছে গঙ্গা সহ বিশ্বের একাধিক নদনদীতে। ছবি: সংগৃহীত।
গত দু’দশকে গঙ্গায় মোট জলের পরিমাণ কমেছে। শুধু গঙ্গারই নয়, নদী পার্শ্বস্থ অববাহিকা অঞ্চলে ভূগর্ভস্থ জলের পরিমাণও কমেছে উল্লেখযোগ্য ভাবে। মঙ্গলবার এই সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে রাষ্ট্রপুঞ্জের শাখা সংগঠন বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (ডব্লিউএমও)।
ডব্লিউএমও তাদের ‘স্টেট অফ গ্লোবাল ওয়াটার রিসোর্স ২০২১’ শীর্ষক রিপোর্টে জানিয়েছে, ২০০২ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে ব্যাপক হারে কমেছে গঙ্গা নদীর জলের পরিমাণ। কমেছে গঙ্গার অববাহিকা অঞ্চলের ভূগর্ভস্থ জলের পরিমাণও। শুধু গঙ্গা নয়, একই ধরন দেখা গিয়েছে দক্ষিণ আমেরিকার পাটাগনিয়ার সাও ফ্রানসিসকো নদীর অববাহিকা, সিন্ধু নদের অববাহিকা এবং দক্ষিণ-পশ্চিম আমেরিকার বিস্তীর্ণ নদী অববাহিকা অঞ্চলে। তবে এর উল্টো চিত্র দেখা গিয়েছে নাইজার নদী অববাহিকা এবং উত্তর আমাজন নদী অববাহিকায়। সেখানে ভূগর্ভস্থ জলের পরিমাণ বেড়েছে।
ডব্লিউএমও-র ওই রিপোর্ট অনুযায়ী, জলবায়ু পরিবর্তন পৃথিবীর উপরি ভাগের ব্যবহারযোগ্য জলের উৎসগুলিকে প্রভাবিত করছে। বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে হিমবাহের বরফ গলে নদীতে জলের পরিমাণ বাড়াচ্ছে ঠিকই, কিন্তু একটা সময়ের পর তা হ্রাস পেতে শুরু করে। হিমবাহ গলনের প্রভাব এখনই টের পাওয়া যাচ্ছে সিন্ধু অববাহিকা এবং গঙ্গা নদীর অববাহিকা অঞ্চলগুলিতে। হিমবাহের বরফ ক্রমাগত কমতে থাকায় একটা সময়ের পর সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হবে উত্তরাখণ্ডের মতো এলাকা। অন্য দিকে, নীচের দিকে এলাকা অর্থাৎ পঞ্জাব, উত্তরপ্রদেশের মতো রাজ্যগুলিতে চাষবাস এবং দৈনন্দিন জীবনযাপনের জন্য অত্যাধিক ভূগর্ভস্থ জলের উত্তোলনের ফলে তার পরিমাণও কমছে দ্রুতগতিতে। পরিবেশ বিজ্ঞানী এবং কেন্দ্রীয় ভূ-বিজ্ঞান মন্ত্রকের সচিব এম. রাজীবন মনে করেন, সরকারের উচিত এখনই ভূগর্ভস্থ জলের অত্যধিক ব্যবহার কমানোর জন্য পদক্ষেপ করা। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে নদীর জলস্তর বৃদ্ধি পেলেও এই সব অঞ্চলে তাপমাত্রা বেশি হওয়ায় জল বাষ্পে পরিণত হচ্ছে দ্রুত। যা পরবর্তী কালে আরও মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে বলেই দাবি করা হয়েছে রিপোর্টে।
মাটিতে কত পরিমাণ জল সঞ্চিত রয়েছে, তার উপর ভিত্তি করেই এই রিপোর্টটি তৈরি করেছে ডব্লিউএমও। হিসাবে রাখা হয়েছে মাটিতে আর্দ্রতার পরিমাণ, ভূগর্ভস্থ জল, বরফ, গাছপালায় সঞ্চিত জল, নদী ও হ্রদের জলের পরিমাণ। রিপোর্ট অনুযায়ী, পাটাগনিয়া, উত্তর আফ্রিকা, মাদাগাস্কার, মধ্য এবং দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চল, দক্ষিণ আমেরিকার মধ্য ভাগ, পাকিস্তান এবং উত্তর ভারতে সঞ্চিত ওই জলের পরিমাণ স্বাভাবিকের থেকে কম। কোনও কোনও অঞ্চলে তা অনেকটাই কম স্বাভাবিকের থেকে। আবার আফ্রিকার কেন্দ্রীয় অঞ্চল, দক্ষিণ আমেরিকার উত্তরাংশ বিশেষত অ্যামাজন অববাহিকা এবং চিনের উত্তরাংশে সঞ্চিত জলের পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে অনেকটাই বেশি। যে সব অঞ্চলে জলের পরিমাণ বেশি, তার কারণ হিসাবে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে হিমবাহের গলনের কথা। অন্য দিকে, যে সব অঞ্চলে মাটিতে সঞ্চিত জলের পরিমাণ কম রয়েছে তাঁর মূল কারণ হিসাবে নদী এবং ভূগর্ভস্থ জলের অত্যধিক ব্যবহারকে চিহ্নিত করা হয়েছে ওই রিপোর্টে।
ওই রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, ২০২১ সালে বিশ্বের অনেক জায়গাতেই বৃষ্টিপাত স্বাভাবিকের চেয়ে কম হয়েছে। এর কারণ লা নিনা এবং জলবায়ু পরিবর্তন। লা নিনার কারণে নিরক্ষীয় প্রশান্ত মহাসাগরের উপরি ভাগের তাপমাত্রা হ্রাস পায়। একই সঙ্গে ক্রান্তীয় জলবায়ুতে পরিবর্তন ঘটায় লা নিনা। এর ফলে বৃষ্টিপাতের তারতম্য ঘটে। কোথাও কমে যায় বৃষ্টির পরিমাণ। কোথাও বা স্বাভাবিকের চেয়ে বৃষ্টি বেশি হয়। লা নিনার কারণেই ভারতের মহারাষ্ট্র, কর্নাটক, অন্ধ্রপ্রদেশ, কেরল, পশ্চিমবঙ্গ প্রভৃতি রাজ্যকে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে হয়েছে। রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২১-এ সারা বিশ্বে চারশোরও বেশি প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয়েছে। মোট ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ২৫ হাজার কোটি ডলারেরও বেশি। প্রাণ গিয়েছে প্রায় ১০ হাজার। বিশ্বের ১০ কোটি জনবসতি এর ফলে ব্যাপক ভাবে প্রভাবিত হয়েছে।
গত বছর পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বেড়েছে এক ডিগ্রিরও বেশি। ২০২১ সালকে ইতিহাসের সপ্তম উষ্ণতম বর্ষ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। লা নিনার বিপরীত হল এল নিনো। এর ফলে নিরক্ষীয় প্রশান্ত মহাসাগরের উপরের ভাগের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। এর ফলে স্বাভাবিকের থেকে বৃষ্টিপাত কম হয়। বন্যা এবং খরার প্রাদুর্ভাবও বেশি হয়। ভারতে যেমন এল নিনোর প্রভাবে খরার পরিমাণ বেড়ে যায়। উল্টো দিকে, লা নিনার প্রভাবে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় এবং শীতও চলে লম্বা সময় ধরে।
এই প্রথম বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা এমন সমীক্ষা করে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। ডব্লিউএমও-র দাবি, নাসার গ্রেস মিশন থেকেই মূলত তারা তথ্য সংগ্রহ করেছে। এই পরিস্থিতি সামলাতে বিশ্বের সব দেশের কী কী করণীয় সে ব্যাপারে পরামর্শও দেওয়া হয়েছে ওই রিপোর্টে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy