রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘর্ষ থামাতে আমেরিকার প্রস্তাবিত ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, যদিও বেশ কিছু শর্ত রেখেছেন তিনি। এ সব শুনে ‘অসন্তুষ্ট’ আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘‘পুতিনের বিবৃতি আশাপ্রদ, কিন্তু সম্পূর্ণ নয়। আমার মনে হয় না, আমেরিকার বন্ধুদের উপরে হামলা চালাবে রাশিয়া।’’ এর পরেই আজ সরাসরি আমেরিকান প্রেসিডেন্টের ভূয়সী প্রশংসা করলেন পুতিন। ‘কৃতজ্ঞতা’ প্রকাশ করলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নাম করেও। যুদ্ধ থামাতে ‘মহৎ’ কাজ করছেন দুই রাষ্ট্রনেতা, মনে করিয়ে দিলেন সে কথা।
বেলারুসের প্রেসিডেন্ট আলেজ়ান্ডার লুকাশেঙ্কোকে সঙ্গে নিয়ে একটি যুগ্ম সাংবাদিক বৈঠক করেছেন পুতিন। সেখানে রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, যুদ্ধ থামাতে যে সব রাষ্ট্রনেতা এত চেষ্টা করছেন, তাঁদের সকলের কাছে তিনি ‘কৃতজ্ঞ’। পুতিন বলেন, ‘‘যুদ্ধবিরতির জন্য ইউক্রেন প্রস্তুত। বিষয়টিকে আমি কী ভাবে দেখছি, সে নিয়ে অবশ্যই কথা বলব। কিন্তু তার আগে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানাব। আমাদের প্রত্যেকেরই নিজেদের দেশে অনেক সমস্যা রয়েছে। তার পরেও ইউক্রেনে শান্তি ও স্থিতাবস্থা ফেরানোয় উনি যে ভাবে বিষয়টির উপর নজর দিচ্ছেন, তার জন্য ধন্যবাদ।’’ এর পরেই ভারত ও চিনের নাম উল্লেখ করেন পুতিন। তাঁর কথায়, ‘‘আরও অনেক রাষ্ট্রপ্রধান, যেমন চিনের প্রেসিডেন্ট, ভারতের প্রধানমন্ত্রী, ব্রাজ়িল ও দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট ইউক্রেনের যুদ্ধ নিয়ে কথা বলছেন, নিজেদের সময় ব্যয় করছেন। এঁদের সকলের কাছে আমি কৃতজ্ঞ, কারণ এর মূল উদ্দেশ্য মহৎ— যুদ্ধ থামানো ও প্রাণহানি বন্ধ করা।’’
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কির অবশ্য বক্তব্য, পুতিন সরাসরি ট্রাম্পকে না বলতে পারছেন না, তাই ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে নানা ধরনের কথা বলছেন। পরিস্থিতি নিজের নিয়ন্ত্রণে আনতে সবই কৌশল, কখনও ট্রাম্পের প্রশংসা করছেন, কখনও বিভিন্ন শর্ত দিচ্ছেন, নানাবিধ প্রশ্ন তুলছেন। পুতিন যেমন জানতে চেয়েছেন, সংঘাত থামানোর নির্দেশ কে দেবে? ২০০০ কিলোমিটার এলাকায় সংঘর্ষবিরতির চুক্তি ভাঙা হচ্ছে কি না, সে দিকে কে নজর রাখবে? ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতি ইউক্রেনে সেনা সমাবেশ কিংবা যুদ্ধাস্ত্র পৌঁছে দিতে ব্যবহার হবে কি না, সে বিষয়েও নিশ্চয়তা চেয়েছেন পুতিন। এ সব কিছু দেখেশুনে নিজের এক্স হ্যান্ডলে জ়েলেনস্কি লিখেছেন, ‘‘এখন আমরা সকলেই শুনেছি পুতিন কী বলেছেন। খুবই প্রত্যাশিত। লোকজনকে নানা ভাবে নিজের দিকে টানছেন, সবই কৌশল। উনি আসলে চেষ্টা করছেন, কী ভাবে এই যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব খারিজ করা যায়।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)