আমেরিকার ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস। —ফাইল চিত্র।
ত্রাণ সামগ্রী আনতে গিয়ে আবারও হামলার শিকার হলেন প্যালেস্টাইনিরা। দক্ষিণ গাজ়ার এই ঘটনায় প্রাণ হারালেন অন্তত ন’জন, যাঁদের বেশির ভাগই মহিলা ও শিশু। অন্য একটি ঘটনায় এ দিন উত্তর গাজ়ার একটি গণকবর লক্ষ্য করেও হামলা চালাল ইজ়রায়েল। হামলার জেরে এলাকা জুরে ছড়িয়ে রইল বহু দেহ-দেহাংশ। যদিও এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করেনি ইজ়রায়েল বাহিনী। এরই মাঝে ইজ়রায়েলকে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করার দাবি জানালেন আমেরিকার ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস। আগামী অন্তত ছ’সপ্তাহের জন্য এই যুদ্ধবিরতি যাতে চলে, সে দিকেও নজর দিতে কার্যত সতর্ক করলেন ইজ়রায়েল প্রশাসনকে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রত্যক্ষদর্শী আজ সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, গত কাল দক্ষিণ গাজ়ার দের এল-বালার একটি শরণার্থী শিবিরে ত্রাণ সামগ্রী দিতে এসেছিল একটি ট্রাক। ওই এলাকাটিকে সাধারণত শরণার্থীদের জন্য ‘নিরাপদ’ বলেই ধরে নেওয়া হয়। তবে গত কাল মানুষজন সেখানে জড়ো হতেই ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইজ়রায়েল বাহিনী। হামলার জেরে চারিদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে যায় জখম শরণার্থীদের দেহাংশ। নিহত হন ন’জন। গুরুতর ভাবে জখম হন আরও অনেকে। এই ঘটনার ছবি সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন অনেকে।
এ ছাড়াও, হামাস পরিচালিত গাজ়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রক আজ জানাল, গাজ়ার একটি হাসপাতালে গত কয়েক দিনে অনাহার ও অপুষ্টিতে মৃত্যু হয়েছে অন্তত ১৬টি শিশুর। চিকিৎসা পরিকাঠামো তেমন মজবুত না হওয়ায় ঠিক ভাবে চিকিৎসা করাও সম্ভব হচ্ছেনা, বিবৃতিতে এমনই জানাল গাজ়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রকের এক মুখপাত্র। তাঁর আশঙ্কা, এ ভাবে চলতে থাকলে প্রাণসঙ্কট হতে পারে সে হাসপাতালে ভর্তি আরও ছয় শিশুর।
পাশাপাশি, সম্প্রতি যে ধরনের ছবি ছড়িয়ে পড়ছে সমাজমাধ্যমে, সেগুলিতে ফুটে উঠছে অনাহার, অপুষ্টির চিত্র। অপুষ্টি, জলশূন্যতায় ভোগা প্যালেস্টাইনি, বিশেষত শিশুদের ছবি ছড়িয়ে পড়তে সেগুলির সঙ্গে জার্মানির ‘কনসেনট্রেশন ক্যাম্প’-এর তুলনা টানছেন অনেকে। ‘এ যেন সেই নাৎসি কনসেনট্রেশন ক্যাম্পের ছবি’, এমন মন্তব্য ভেসে এসেছে কিছু মাধ্যমে।
শিশুদের এই করুণ পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান টেড্রস অ্যাডানম গেব্রিয়েসাস। এক্স মাধ্যমে পোস্ট করে তিনি জানিয়েছেন, হু-এর একটি দল উত্তর গাজ়ার হাসপাতাল পরিদর্শনে গিয়েছিল। সেখানে দেখা গিয়েছে, বহু শিশুর মৃত্যু হচ্ছে অনাহারে। যারা বেঁচে রয়েছে, তারাও চরম অপুষ্টিতে ভুগছে। ঘর-বাড়ি-হাসপাতাল সব ধ্বংস হয়ে যাওয়ার ফলে কোনও রকম আশ্রয়ও নেই তাদের। এখনও পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ন’হাজার লিটার জ্বালানি সেখানকার হাসপাতালগুলিকে দেওয়া হলেও আগামী দিনে পরিস্থিতি আরও কঠিন হতে পারে বলে তাঁর আশঙ্কা। ‘যুদ্ধবিরতি, শান্তি’ই একমাত্র পথ, মত হু প্রধানের।
এই আবহে আজ সংঘর্ষ-বিরতির দাবি জানালেন কমলা হ্যারিস। অ্যালাবামার একটি অনুষ্ঠানে বক্তৃতা রাখতে গিয়ে কমলা বলেন, ‘গাজ়ার যে সব ছবি উঠে আসছে, তা মনকে বিধ্বস্ত করে দেয়। আমি আগেও বলেছি, অনেক বেশি নির্দোষ প্যালেস্টাইনি নিহত হয়েছেন’। গাজ়ায় থাকা শরণার্থীদের ভাইরাল হওয়া ছবিগুলিতে যে অনাহার, অপুষ্টিতে ভোগা মানুষজনের চিত্র ফুটে উঠছে, সগুলি ‘বেদনাদায়ক’ বলে মন্তব্য করেন কমলা। এর পরেই ইজ়রায়েল প্রশাসনকে কার্যত কড়া ভাবে তিনি জানান, যত দ্রুত সম্ভব, সংঘর্ষ-বিরতি করা হোক। ‘মানবিকতার উপরে আসা এই বিপর্যয়’কে নিয়ন্ত্রণ করতে ইজ়রায়েল যে কিছু করছে না, সে বিষয়েও সে দেশের সরকারকে এ দিন আক্রমণ করেন কমলা।
তাঁর আর্জি, প্যালেস্টাইনিদের কাছে ত্রাণ সামগ্রী যাতে দ্রুত পাঠানো
যায়, আরও মজবুত করা হয় স্বাস্থ্য-চিকিৎসা পরিকাঠামো তা-ও ইজ়রায়েল নিশ্চত করুক।
সংবাদ সংস্থা
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy