Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪
US Election Results 2020

আমেরিকায় গণনায় কেন দেরি বুঝতে পুরোটা জানা জরুরি

আমেরিকায় এ বছরের ভোট মূলত ব্যালটে। সব বছর কিন্তু এ রকম হয় না।

চলছে ভোট গণনা। ছবি: রয়টার্স।

চলছে ভোট গণনা। ছবি: রয়টার্স।

অনন্যা ভট্টাচার্য
নিউ জার্সি শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০২০ ০৩:৫৬
Share: Save:

তিন দিন আগে ভোট হয়ে গিয়েছে আমেরিকায়। এখনও গণনা চলছে। ফলপ্রকাশ হতে কেন এত দেরি হচ্ছে, তা নিয়ে চর্চা সব জায়গায়। কিন্তু তার জন্য আগে ভোটপ্রক্রিয়াটি জানা সবচেয়ে জরুরি। অন্যান্য বছর কী ভাবে ভোট হয়, অতিমারির এই বছরে ভোটদান-সহ পুরো প্রক্রিয়া আগের থেকে কতটা আলাদা, সে সব না-জানলে বোঝা যাবে না, এ বছর কেন এত সময় লাগছে।

আমি বহু বছর ধরে নিউ জার্সির বাসিন্দা। এ বছর ভোটে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে একটি পোলিং বুথে যোগ দিয়েছিলাম। এ বারই প্রথম। সে এক দারুণ অভিজ্ঞতা! অন্যান্য বার স্বেচ্ছাসেবকদের কাজ করেন সাধারণত বয়স্ক এবং অবসরপ্রাপ্তরা। করোনার দাপটে এ বছরটা আলাদা। বয়স্কদের সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি বলে তুলনায় কমবয়সি স্বেচ্ছাসেবক খোঁজা হচ্ছিল। ই-মেলে মারফত আবেদন জানালাম। ফোন এল। ফোনের ও-প্রান্ত থেকে আমাকে জানানো হল, কিছু বিষয় হাতে-কলমে জানা জরুরি। তার জন্য গিয়ে প্রশিক্ষণ নিতে হবে।

অতিমারির বছরে ভোট কী ভাবে হবে, সেটাই ছিল সবচেয়ে বড় চিন্তার বিষয়। ভিড় এড়াতে ডেমোক্র্যাটদের প্রচারে তাই আর্লি-ভোট, পোস্টাল ব্যালটে ভোটদানের মতো বিষয়গুলি আগাগোড়া গুরুত্ব পেয়েছে। আর সাফল্যও মিলেছে হাতেনাতে। অন্তত আমাদের নিউ জার্সিতে এ বার বেশির ভাগ ভোটই পড়েছে পোস্টাল ব্যালটে।

আরও পড়ুন: ‘একের পর এক মিথ্যা’, ট্রাম্পের ভাষণের লাইভ সম্প্রচার বন্ধ করল আমেরিকার টিভি চ্যানেলগুলি​

আমেরিকায় এ বছরের ভোট মূলত ব্যালটে। সব বছর কিন্তু এ রকম হয় না। অন্তত আমাদের নিউ জার্সিতে তো নয়ই। আমি গত দু’বার ভোট দিয়েছি যন্ত্রেই। সে ক্ষেত্রে অনেক তাড়াতাড়ি গণনা শেষ হয়ে যায়। কিন্তু অতিমারির সময়ে প্রতি বার কেউ ভোট দেওয়ার পরে ভোটযন্ত্র স্যানিটাইজ় করা সম্ভব নয়। যন্ত্র খারাপ হয়ে যাবে। ছোঁয়াছুঁয়ি এড়াতে এ বার তাই পুরো ভোটই ব্যালটে হয়েছে। ভোটগণনা করছেন আমার-আপনার মতো মানুষেরা। ফলে ভুল হওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে। তাই বার বার গণনা প্রয়োজন।

ভোটের দিন নিউ জার্সির লরেন্স টাউনশিপে আমার ডিউটি পড়েছিল। অনেকে আগেই পোস্টাল ব্যালটে ভোট দিয়ে দিয়েছেন। যাঁরা ৩ নভেম্বর লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিয়েছেন, তাঁদের জন্য তিন ধরনের ব্যবস্থা ছিল। ব্যালট ভরে এনে পোলিং বুথে জমা দিয়েছেন অনেকে। যাঁরা নতুন ভোটার বা ব্যালট হারিয়ে ফেলেছেন, তাঁরা পোলিং বুথে পৌঁছে নতুন ব্যালট নিয়ে তা ভর্তি করে জমা দিয়েছেন। আর যাঁদের নাম প্রতিবন্ধী হিসেবে নথিভুক্ত রয়েছে, তাঁরাই শুধু যন্ত্রে ভোট দিতে পেরেছেন। আমেরিকায় ভোটারদের পরিচয়পত্র চাওয়ার নিয়ম নেই। পোলিং বুথে ভোটারদের নাম-ধামের মোটা তালিকা থাকে। সেখানে প্রত্যেকের স্বাক্ষরের প্রতিলিপি রয়েছে। ব্যালটে ভোটদাতার স্বাক্ষরের সঙ্গে সেই সই মিলিয়ে দেখা হয়। কটা ব্যালট জমা পড়ল, কটায় গোলমাল রয়েছে, কটা জমা পড়ল না— সব গুনতে হয়। বার বার করে গোনা হয়। তার পরে খামের মধ্যে ব্যালট ভরে সেগুলি বিশেষ ব্যাগে ভরা হয়। কোন ব্যাগে কটা খাম, সে সবেরও বিস্তর নিয়ম রয়েছে। তার পর সেগুলো পৌঁছয় কাউন্টি ক্লার্কের অফিসে।

আরও পড়ুন: শারীরিক কারণে আগামী বছর অবসর নিচ্ছেন পুতিন? জোর জল্পনা​

৩ তারিখ আমাদের বুথে ৬ জন মেশিনে ভোট দিয়েছেন। ব্যালট নিয়ে এসে বুথে জমা দিয়েছেন অনেকেই। অন্তত ৩৫০ থেকে ৩৮০। কোভিড সতর্কতা হিসেবে প্রত্যেকে সে দিন মাস্ক পরেছিলাম। এক জনের ব্যবহার করা কলম অন্যকে ব্যবহার করতে নিষেধ করেছি। তবু পুরোপুরি স্পর্শ এড়ানো যায় না। যাঁরা বয়স্ক তাঁদের সাহায্য করতে হয়েছে। সামনে দাঁড়িয়ে একের পর এক জন ভোট দিয়েছেন। সে এক জটিল, দীর্ঘ প্রক্রিয়া! আমরা প্রযুক্তি-নির্ভর জীবন যাপনে অভ্যস্ত। পুরো প্রক্রিয়াটি শেষ হওয়ার পরে (নিউ জার্সিতে ভোটগণনা শেষ হয়ে গিয়েছে, জিতে গিয়েছেন বাইডেন) শুধু একটাই কথা মনে হচ্ছিল। প্রযুক্তির সাহায্যে সত্যিই কি কোনও বিকল্প ব্যবস্থা করা যেত না? তা হলে হয়তো পরিশ্রম আর সময়, দুই-ই বাঁচানো যেত। আর ফলের জন্যও এত দীর্ঘ অপেক্ষা করতে হত না দেশকে, সারা পৃথিবীকেও।

(লেখক বিজ্ঞানী, একটি ফার্মাসিউটিকাল সংস্থায় কর্মরত)

অন্য বিষয়গুলি:

US Election Results 2020 Counting
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy