জো বাইডেন। —ফাইল চিত্র।
ফুঁসছে প্রায় গোটা বিশ্বই। প্যালেস্টাইনের সমর্থনে জাপান থেকে আমেরিকা, ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পথে নামছেন মানুষ। গত এক মাস ধরে বিক্ষোভে উত্তাল আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলিও। বিক্ষোভকারীদের প্রশ্ন, কেন আমেরিকা অর্থ ও অস্ত্র সাহায্য করে চলেছে ইজ়রায়েলকে। সম্প্রতি সরাসরি বাইডেন সরকারের দিকে আঙুল তোলা হয়েছে। বলা হয়েছে, ‘‘আপনাদের হাতে রক্ত লেগে।’’ এই পরিস্থিতিতে আজ প্রথম বার হোয়াইট হাউসে দাঁড়িয়ে আমেরিকান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বললেন, ‘‘আমি যা বলছি, তাতে ইজ়রায়েলের অনেকে খুশি হবেন না, কিন্তু ইজ়রায়েলের রাষ্ট্রনেতার কাছে আর্জি, পিছু হটুন।’’
তিন দফা প্রস্তাব পেশ করেছেন বাইডেন। প্রথম দফায়, ছ’সপ্তাহের জন্য যুদ্ধবিরতি। গাজ়ার জনবহুল এলাকাগুলো থেকে সেনাপ্রত্যাহার। হামাসকে যথেষ্ট সংখ্যক ইজ়রায়েলি পণবন্দিদের মুক্তি দিতে হবে। পরিবর্তে প্যালেস্টাইনি বন্দিদেরও মুক্তি দেওয়া হবে। মৃত ইজ়রায়েলিদের দেহ তাঁদের পরিবারের হাতে ফিরিয়ে দিতে হবে। প্যালেস্টাইনের সাধারণ মানুষ গাজ়ায় নিজেদের ঘরে ফিরবেন। প্রতি দিন ৬০০ করে ত্রাণের ট্রাক গাজ়ায় ঢুকতে দিতে হবে।
প্রথম দফা সফল হলে দ্বিতীয় দফায়, সব ইজ়রায়েলি পণবন্দিকে মুক্তি। এমন আটক পুরুষ সেনাদেরও। গাজ়া থেকে সম্পূর্ণ ইজ়রায়েলি সেনাবাহিনী প্রত্যাহার। যুদ্ধবিরতি বাড়িয়ে শান্তি ফেরানো। এবং সর্বশেষ অর্থাৎ তৃতীয় দফায়, ইজ়রায়েলি বন্দিদের কোনও কিছু গাজ়ায় থেকে গেলে তা ফেরানো ও আন্তর্জাতিক সহায়তায় গাজ়ার পুনর্নিমাণ শুরু। স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল, ঘরবাড়ি নতুন করে তৈরি করা।
বাইডেনের প্রস্তাবে ইজ়রায়েলের তরফ থেকে এখনও কোনও সাড়াশব্দ মেলেনি। তবে আমেরিকান রাজনৈতিক মহলে সাড়া ফেলে দিয়েছেন তিনি। অনেকেই বলছেন, ভোটের বাজারে দারুণ একটা তাস ফেললেন বাইডেন। প্যালেস্টাইনি জঙ্গি গোষ্ঠী হামাস গত কাল মধ্যস্থতাকারীদের মারফত জানিয়েছিল, বর্তমান পরিস্থিতিতে তারা আর আলোচনায় বসতে চায় না। কিন্তু বাইডেনের প্রস্তাবে তারা হয়তো ফের সমঝোতায় রাজি হতে পারে। তবে অনেকটাই নির্ভর করছে ইজ়রায়েলের প্রতিক্রিয়ার উপরে।
গোটা বিশ্বের সমালোচনার মুখেও ইজ়রায়েল অনড় রয়েছে। আজ সেন্ট্রাল রাফায় ঢুকে পড়েছে সেনার ট্যাঙ্ক। পরিকল্পনা, ক্রমশ দক্ষিণের দিকে এগোবে স্থলবাহিনী। ইজ়রায়েলের দাবি, তারা সেন্ট্রাল রাফায় হামাসের একাধিক রকেট লঞ্চারের সন্ধান পেয়েছে। বেশ কিছু সুড়ঙ্গ খুঁজে পেয়েছে। একাধিক অস্ত্রভান্ডার ধ্বংস করেছে।
গত ৭ অক্টোবর গাজ়ায় যুদ্ধ শুরুর সময়ে ভূখণ্ডের উত্তর অংশ ফাঁকা করে দিতে বলেছিল ইজ়রায়েলি বাহিনী। তাদের বক্তব্য ছিল, উত্তর গাজ়াতে হামাসের ডেরা। সাধারণ মানুষকে দক্ষিণে চলে যেতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। রাফা হল মিশর সীমান্ত ঘেঁষা গাজ়ার দক্ষিণতম প্রান্ত। ইজ়রায়েলি বাহিনীর ধাক্কা খেয়ে এই অঞ্চলে তাই কার্যত জন-বিস্ফোরণ ঘটেছিল। একটা ছোট্ট জায়গায় দশ লক্ষেরও বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছিল। ঘরহারা মানুষগুলো এখন তাবুর ছাউনিটুকুও খুঁইয়ে দক্ষিণ ও মধ্য গাজ়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। সমাজমাধ্যমে ছড়িয়েছে অসংখ্য ভিডিয়ো। তাতে হাহাকার। সকলের প্রশ্ন, ‘‘কোথায় যাব আমরা?’’ নিহত প্যালেস্টাইনির সংখ্যা ৩৬ হাজার ছাড়িয়েছে। ৮২ হাজারের বেশি মানুষ জখম। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ২৮০ জন আহত হয়েছেন। ৬০ জন মারা গিয়েছেন। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, মাসের পর মাস ঘুম নেই, ঠিকমতো খাওয়া নেই। ভয় পেলে জড়িয়ে ধরার জন্য মা-বাবা নেই। আতঙ্কগ্রস্ত শিশুরা হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারাচ্ছে।
আমেরিকান কংগ্রেসের হাউস অব রিপ্রেজ়েন্টেটিভসের স্পিকার-সহ কয়েক জন রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট নেতা আবার ইজ়রায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে আমেরিকান কংগ্রেসে বক্তৃতা দেওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। যদিও তার দিনক্ষণ ঠিক হয়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy