ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের আরও উন্নতি চায় আমেরিকা। কিন্তু তা শুল্ক ছাড়ের বিনিময়ে নয়! আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সে দেশের সংবাদমাধ্যম ফক্স নিউজ়কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিলেন এ কথা।
ঘটনাচক্রে, ওই সাক্ষাৎপর্বে ট্রাম্পের সঙ্গেই হাজির ছিলেন তাঁর সরকারের অন্যতম উপদেষ্টা, ধনকুবের এলন মাস্ক। যাঁর সুপারিশের ভিত্তিতে মঙ্গলবার ট্রাম্প সরকার ভারতের জন্য বরাদ্দ ১৮২ কোটি টাকা (২ কোটি ১০ লক্ষ ডলার) অনুদান ছাঁটাইয়ের ঘোষণা করেছে। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি হোয়াইট হাউসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন ট্রাম্প। তার পর তাঁর এই মন্তব্য ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলে মনে করছেন অনেকেই।
মোদীর সঙ্গে ওই বৈঠকে যে তিনি আমেরিকার শুল্কনীতি সম্পর্কে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন, সে কথাও জানিয়েছেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘‘তিনি এখানে এসেছিলেন। আমি বলেছিলাম, আপনি শুল্ক ধার্য করুন বা না-করুন, আমি করবই।’’ শুধু ভারত নয়, প্রতিটি দেশ থেকে আমদানি করা পণ্যেই তিনি শুল্ক বসাবেন বলেও স্পষ্ট করেছেন ট্রাম্প।
আরও পড়ুন:
মোদীর ওই সফরেই আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের বহর ৫০,০০০ কোটি ডলারে নিয়ে যাওয়ার জন্য চুক্তি করেছে ভারত এবং আমেরিকা। তবু আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প স্পষ্ট বুঝিয়ে দিয়েছেন, প্রতিদ্বন্দ্বীদের তো বটেই, বাণিজ্য সহযোগীদের উপরেও পাল্টা আমদানি শুল্ক বসাতে চলেছে তাঁর প্রশাসন। সংশ্লিষ্ট মহলের বক্তব্য, ভারত থেকে আমেরিকায় রফতানি হওয়া বিভিন্ন পণ্যের উপরে কতটা শুল্ক বসবে, তা এপ্রিলের দিকে স্পষ্ট হবে। ভারত পাল্টা কোনও পদক্ষেপ করে কি না, তা বোঝা যাবে তার পরেই। যদিও ট্রাম্পের ‘পারস্পরিক শুল্ক’ (রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ) বসানোর ঘোষণায় ইতিমধ্যেই দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।
সরকারি সূত্রের খবর, পোশাক, জুতো-সহ ভারতের শ্রম নিবিড় পণ্যের উপরে আমেরিকা এখনই ১৫ থেকে ৩৫ শতাংশ শুল্ক চাপায়। অন্য দিকে, আমেরিকা থেকে আসা একটা বড় অংশের পণ্যের উপরে ভারত চাপায় ৫ শতাংশ কর। মোদীর সফরের আগেই অ্যালুমিনিয়াম এবং ইস্পাতজাত পণ্যের উপর নতুন করে শুল্ক বসানোর বার্তা দিয়েছিলেন ট্রাম্প। সেই নীতি কার্যকর হলে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যিক সম্পর্কে টানাপড়েন আরও বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।
আমেরিকার একটি বাণিজ্য সমীক্ষা সংস্থার রিপোর্ট বলছে, ট্রাম্প ‘পারস্পরিক শুল্ক’ চাপালে ভারতের সম্ভাব্য বার্ষিক লোকসানের পরিমাণ দাঁড়াবে ৭০০ কোটি ডলার। সবচেয়ে ক্ষতি হতে পারে গাড়ি নির্মাণকারী সংস্থাগুলির এবং কৃষি ক্ষেত্রে। কিন্তু হোয়াইট হাউসের বৈঠকে কি মোদী এ নিয়ে কোনও আপত্তি জানাননি? টিভি সাক্ষাৎকারে ট্রাম্পের জবাব, ‘‘আমার সঙ্গে তর্ক করে কেউ পারবেন না। আমি যদি বলি ২৫ শতাংশ (শুল্ক), তিনি বলবেন ‘উফ ভয়াবহ’। কিন্তু আমি তা বলব না। আমি শুধু বলি, আপনি যাই ধার্য (শুল্ক) করুন না কেন, আমি করবই।’’
- দ্বিতীয় বার আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর প্রথম মার্কিন কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে প্রথম ভাষণ দেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর ভাষণে যেমন উঠে এসেছে আমেরিকার বিভিন্ন বিষয়, তেমনই জায়গা পেয়েছে বিদেশনীতিও।
- পূর্বসূরি জো বাইডেনের সরকারের সমালোচনাও শোনা গিয়েছে ট্রাম্পের কণ্ঠে। তাঁর ভাষণ জুড়ে ছিল কখনও অন্য দেশের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি, আবার কখনও শোনা গিয়েছে ধন্যবাদজ্ঞাপনও। উঠে এসেছে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ প্রসঙ্গও!
-
আমেরিকার পণ্যে আমদানি শুল্ক কমাবে ভারত, আশা ট্রাম্পের! মনে করিয়ে দিলেন সময়সীমাও
-
ইউরোপীয় ‘বন্ধু’দের পাশে চাইছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী! শুল্কসংঘাতের মাঝে ঝটিকা সফর ফ্রান্স, ব্রিটেনে
-
ফের ইউরোপীয় ইউনিয়নের পণ্যের উপর আমদানি শুল্ক বৃদ্ধির হুঁশিয়ারি! ট্রাম্পের বাণিজ্যযুদ্ধে উদ্বিগ্ন রাষ্ট্রপুঞ্জও
-
৪ লক্ষ কোটি ডলার মুছে গেল মার্কিন শেয়ার বাজার থেকে! ট্রাম্পের শুল্কযুদ্ধের ধাক্কায় বেসামাল অবস্থা ওয়াল স্ট্রিটে
-
ওয়াল স্ট্রিটে ধস! ট্রাম্পের মন্তব্যে মন্দা-শঙ্কা মার্কিন লগ্নিকারীদের, বাজার খুলতে পড়ল সেনসেক্সও