Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Donald Trump

বিপদ বুঝে বিশেষ ক্ষমতা প্রয়োগ করে নিজেকে কি ক্ষমা করতে চান ট্রাম্প?

আমেরিকার সংবিধানে প্রেসিডেন্টের হাতে বিশেষ ক্ষমা মঞ্জুরের অধিকার দেওয়া রয়েছে। তাতে সাধারণ নাগরিক থেকে আমলা, পরিবার অথবা বন্ধুব-বান্ধব— জাতীয় অপরাধ আইনের আওতায় যে কাউকে ক্ষমা করে দিতে পারেন তিনি।

সবরকম রাস্তা দেখছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। —ফাইল চিত্র।

সবরকম রাস্তা দেখছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। —ফাইল চিত্র।

সংবাদ সংস্থা
ওয়াশিংটন শেষ আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০২১ ১৪:৪৬
Share: Save:

বেগতিক দেখে হার স্বীকার করলেও হোয়াইট হাউসের বাইরে নিজের রাস্তা কণ্টকমুক্ত করার চেষ্টায় কোনও কসুর করছেন না ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাই আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার আগে ও পরে, এমন কোনও আচরণ, যার জন্য তাঁকে কোর্ট-কাছারির চক্কর কাটতে হতে পারে, সে সব ধুয়েমুছে সাফ করে ফেলতে চাইছেন তিনি। শোনা যাচ্ছে, তার জন্য ২০ জানুয়ারি জো বাইডেনের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের আগে নিজেই নিজেকে ক্ষমা করে দেওয়ার পরিকল্পনা করতে চলেছেন ট্রাম্প। এ ব্যাপারে হোয়াইট হাউস আধিকারিক এবং আইনজীবীদের সঙ্গে শলাপরামর্শও করছেন তিনি। হোয়াইট হাউস সূত্রে অন্তত এমনই খবর এসে পৌঁছেছে মার্কিন সংবাদমাধ্যমগুলিতে।

ভারতের মতো দেশে কোনও অপরাধী যেমন রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা এবং সাজা লঘু করার আর্জি জানাতে পারেন, তেমনই আমেরিকার সংবিধানে প্রেসিডেন্টের হাতে বিশেষ ক্ষমা মঞ্জুরের অধিকার দেওয়া রয়েছে। তাতে সাধারণ নাগরিক থেকে আমলা, পরিবার অথবা বন্ধুব-বান্ধব— জাতীয় অপরাধ আইনের আওতায় যে কাউকে ক্ষমা করে দিতে পারেন তিনি। হোয়াইট হাউস থেকে বিদায় নেওয়ার আগে সেই ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়েই ট্রাম্প নিজের ভবিষ্যৎ মসৃণ করতে চাইছেন বলে অভিযোগ।

২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে নাম লেখানোর সময় থেকে এখনও অজস্রবার বিতর্কে জড়িয়েছেন ট্রাম্প। যৌন নিগ্রহ, ধর্ষণ, করফাঁকি, রুশ-সংযোগ, ভুয়ো খবর ছড়ানো-সহ একের পর এক অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে। তাতে নয়া সংযোজন বৃহস্পতিবারের ঘটনা, যেখানে জনগণের রায় অস্বীকার করে, উন্মত্ত জনতাকে ক্যাপিটলে ঢুকে তাণ্ডব চালানোয় উস্কানি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে। যে কারণে মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার দু’সপ্তাহ আগেই তাঁকে কী ভাবে অপসারণ করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা চলছে কংগ্রেসে। শোনা যাচ্ছে, এমন পরিস্থিতিতে ক্ষমা মঞ্জুরের অধিকার প্রয়োগ করে ছেলেমেয়ে এবং নিজের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত রাখতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন ট্রাম্প।

আরও পড়ুন: ইমপিচমেন্টের দাবি জোরালো হতেই ভিডিয়ো বার্তায় ‘শান্তি’ চাইলেন ট্রাম্প​

হোয়াইট হাউস থেকে বিদায় নেওয়ার আগে ক্ষমা মঞ্জুরের রেওয়াজ দীর্ঘদিন ধরেই পালন করে আসছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্টরা। একসময় রিচার্ড নিক্সনকে সমস্ত অপরাধ থেকে মুক্ত করেছিলেন জেরাল্ড ফোর্ড। ভিয়েতনাম যুদ্ধে যাওয়া বাধ্যতামূলক হলেও, সে দেশের বহু নাগরিকই সরকারি নির্দেশ পালন করেননি। জিমা কার্টার তাঁদের সকলকে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। মাদক মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়া নিজের ভাই রজার ক্লিন্টনকে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন বিল ক্লিন্টনও। কোনও প্রেসিডেন্টকে যদি ইমপিচ করা হয়, বিদায় কালে তিনি যদিও এই ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারেন না। তবে হোয়াইট হাউসে এখন দু’সপ্তাহেরও কম মেয়াদ বাকি ট্রাম্পের। এত কম সময়ে তাঁকে ইমপিচ করা এক প্রকার অসম্ভব। ট্রাম্প সেই সুযোগই কাজে লাগাতে চাইছেন বলে খবর।

আমেরিকার আইন অনুযায়ী, পদে থাকাকালীন কোনও প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করা যায় না। কিন্তু তাই বলে কি নিজেই নিজেকে ক্ষমা করে দেওয়ার বিষয়টি ক্ষমতার অপব্যবহার নয়? গুরুতর অপরাধ করা সত্ত্বেও কি এক জন প্রেসিডেন্ট সত্যিই নিজেকে ক্ষমা করে দিতে পারেন? এ নিয়ে নানা যুক্তি উঠে এসেছে। সে দেশের আইনজীবীদের একাংশ জানিয়েছেন, যত বড় পদাধিকারীই হোন না কেন, নিজের বিরুদ্ধে ওঠা অপরাধ মামলায় কেউ নিজেই বিচারকের ভূমিকা পালন করতে পারেন না। তবে স্বেচ্ছায় পদ থেকে সরে গিয়ে ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের কাছে ট্রাম্প ক্ষমা চাইতেই পারেন এবং পেন্সও তাঁকে ক্ষমা করে দিতে পারেন বলে মত আইনজীবীদের অন্য একটি অংশের।

আরও পড়ুন: টুইটারে ফিরলেও ট্রাম্প আপাতত ব্রাত্য ফেসবুক এবং ইনস্টাগ্রামে​

তবে ক্যাপিটলে হামলা ঘিরে এই মুহূ্র্তে ট্রাম্প ও পেন্সের মধ্যে আগের মতো সেই দহরম মহরম আর নেই। বরং গত ৪ বছর যে ভাবে ট্রাম্পের অনুগত ছিলেন পেন্স, এখন সেই জায়গা থেকে একেবারেই সরে এসেছেন তিনি। তাই ট্রাম্পের আর্জি তিনি আদৌ কানে তুলবেন কি না, সে ব্যাপারে সন্দিহান অনেকেই। নির্বাচনী ফলাফল নিয়ে টানাপড়েনের মধ্যেই গত মাসে দীর্ঘদিনের বন্ধু রজার স্টোন, একসময় তাঁর নির্বাচনী প্রচারের দায়িত্বে থাকা সংস্থার চেয়ারম্যান পল ম্যানাফোর্ট এবং জামাতা জ্যারেজ কুশনারের বাবা চার্লসকে ক্ষমা করে দেন ট্রাম্প। চাইলে তিনি নিজেও নিজেকে ক্ষমা করে দিতে পারেন, অতীতে একাধিক বার এমন দাবিও করতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। কিন্তু এ যাবৎ আমেরিকার ইতিহাসে তেমন নজির নেই। যদি তা হয়, সে ক্ষেত্রে অনেক কিছুর মতো সে বিষয়েও ইতিহাস তৈরি করবেন ট্রাম্প।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy