ভাঙা বিমানের ধ্বংসাবশেষ। —ফাইল চিত্র।
ইউক্রেনের যাত্রিবাহী বিমান যে তাদের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রেই ভেঙে পড়েছিল, অবশেষে তা মেনে নিল ইরান। গোড়া থেকেই নাশকতার তত্ত্ব উঠে আসছিল। এ দিকে গত কাল পর্যন্তও তেহরানের মুখপাত্র আলি রাবিয়েই-কে বলতে শোনা গিয়েছিল, ‘‘ক্ষেপণাস্ত্র হামলা নিয়ে মার্কিন সংবাদমাধ্যমে যা দাবি করা হচ্ছে, তা আসলে মনস্ত্বাত্ত্বিক যুদ্ধ বাধানোর ছক। ভবিষ্যতেই প্রমাণ হয়ে যাবে, এ সব দাবি ভিত্তিহীন।’’ এর ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে ইরানের সেনা সরকারি টিভি চ্যানেলে মেনে নিল— ভুলবশত তাদের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রই গত বুধবার আছড়ে পড়েছিল বোয়িং ৭৩৭ বিমানে।
ঘটনার দায় নিয়ে দুঃখপ্রকাশ করেছেন ইরানি প্রেসিডেন্ট হাসান রৌহানিও। তা হলে কি মার্কিন কোনও বিমানই তাদের আসল ‘টার্গেট’ ছিল? কার্যত সেই ইঙ্গিত দিয়েই ইরানের বিদেশমন্ত্রী জাভেদ জ়ারিফ বললেন, ‘‘আমেরিকার বাড়াবাড়ির জন্যই এত বড় ভুল হয়ে গেল। উত্তেজনার আবহে এমন ঘটনার জন্য আমরা দুঃখিত এবং ক্ষমাপ্রার্থী। মৃতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি।’’ কিন্তু তাতেও চিঁড়ে ভিজল কই? প্রশ্ন উঠছে, ইরাকের মার্কিন সেনাঘাঁটিতে যেখানে এর কয়েক ঘণ্টা আগেই ‘মাপা হামলা’ হল, সেখানে ১৭৬ জন যাত্রীকে নিয়ে কিয়েভগামী বিমানে এত বড় ‘হিউম্যান এরর’? সরকারি টিভিতেই ইরানের সেনা বিবৃতি দিয়ে জানাল, কী ভাবে এমনটা হল, তা নিয়ে বাহিনীতে বিচারবিভাগীয় তদন্ত করা হবে।
মার্কিন ড্রোন হামলায় কাসেম সোলেমানি খুনের পরে থেকেই তেহরান-ওয়াশিংটন উত্তেজনা চরমে। দিন চারেকের মাথায় পাল্টা মার্কিন ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় তেহরান। মনে করা হচ্ছে, তখনই একটি ক্ষেপণাস্ত্র গিয়ে আছড়ে পড়েছিল বিমানে। সূত্রের খবর, তেহরানের ইমাম খোমেইনি বিমানবন্দর থেকে যাত্রা শুরু করে ইউক্রেনের বিমানটি ওই সময়ে ইরানের রেভোলিউশনারি গার্ড কোরের এলাকার উপর দিয়েই যাচ্ছিল। প্রাথমিক ভাবে ‘দুর্ঘটনা’ মনে হলেও, ইউক্রেন-আমেরিকা-ব্রিটেন-কানাডা কিন্তু লাগাতার ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কথা বলে আসছিল। এ দিকে ইরানও ধ্বস্ত বিমানের ব্ল্যাকবক্স হাতছাড়া করতে চাইছিল না। এই প্রেক্ষিতে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন গত কাল আন্তর্জাতিক তদন্তের দাবি তোলে। অনেকেই মনে করছেন, এই অবস্থায় ঘটনার দায় স্বীকার করা ছাড়া ইরানের কিছু করার ছিল না।
আরও পড়ুন: অন্ত্রে হিরে ঢুকিয়ে পাচার করতে গিয়ে বিমানবন্দরে ধৃত যুবক
রেভোলিউশনারি গার্ডের বায়ুসেনা বিভাগের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার-জেনারেল আমির-আলি হাজিজ়াদে আবার আজ দাবি করেছেন যে, বুধবারই তিনি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার দায় নিয়ে ভুল স্বীকার করেছিলেন তেহরানের কাছে। তাঁর কথায়, ‘‘এত বড় ভুল! নিশ্চিত জানতাম— আমি শেষ।’’ কিন্তু তেমন কিছুই হয়নি। আর্মড ফোর্সের জেনারেল নিজের মতো করে একটা তদন্ত কমিটি তৈরি করেন। তবে প্রথমেই সেই কমিটি থেকে ছেঁটে ফেলা হয় আমির-আলিকে। তাই অনেকেই বলছেন, চাপে না পড়লে, ইরান ঠিক ধামাচাপা দিত। সূত্রের খবর, ‘ভুল করে’ এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কথা ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লা আলি খামেনেইয়ের কানে ওঠে শুক্রবার। তড়িঘড়ি জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক ডাকেন তিনি। সেখানেই নির্দেশ দেওয়া হয়, সত্যিটা স্বীকার করতে হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy