ছবি: রয়টার্স।
শেষ সুযোগ। ‘‘সাদা পতাকা উড়িয়ে আত্মসমর্পণ করো, না হলে মৃত্যু অনিবার্য।’’ —রাশিয়ার ছুড়ে দেওয়া এই চূড়ান্ত শর্ত আজ ফিরিয়ে দিয়েছে মারিয়ুপোল প্রশাসন। পরিণতি, দশ মিনিট অন্তর রুশ বোমা ঝলসে দিচ্ছে শহরের বিভিন্ন প্রান্ত। মাটি আঁকড়ে ইউক্রেন সরকারও। উপপ্রধানমন্ত্রী ইরিনা ভেরেশচুক বলেছেন, ‘‘হাত তুলে আত্মসমর্পণ করার কোনও প্রশ্নই নেই। আমরা আগেই জানিয়ে দিয়েছি রাশিয়াকে।’’
তিন সপ্তাহ হয়ে গেল, আজ়ভ সাগরের পাড়ে কূটনৈতিক ভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মারিয়ুপোল শহরকে ঘিরে ফেলেছে রুশ বাহিনী। কখনও তাদের অতি-শক্তিশালী ক্ষেপণাস্ত্র আছড়ে পড়েছে, কখনও লাগাতার বোমাবর্ষণ গুঁড়িয়ে দিয়েছে স্কুল, থিয়েটার, আবাসন কিংবা ধর্মস্থান। তবু এ শহর দখল করতে পারেনি রাশিয়া। জল নেই, খাবার বাড়ন্ত, প্রচণ্ড ঠান্ডায় অন্ধকার পাতালে গুটিসুটি মেরে কোনও মতে শ্বাস নিয়ে চলেছে লক্ষ লক্ষ প্রাণ। তাঁদের পালানোরও পথ রাখছে না রুশ সেনা। উপরতলার নির্দেশ মেনে রাস্তায় দেখলেই গুলি। বাইরে থেকে ত্রাণও ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না এ শহরে। মৃতদেহ ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রাস্তায়। কবর দেওয়ার জন্য কেউ নেই। পাশাপাশি একটি নতুন অভিযোগও উঠছে রাশিয়ার বিরুদ্ধে। বাসিন্দাদের অনেককে বন্দি করে রুশ ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, তাঁদের ফোন ও অন্যান্য জিনিস বাজেয়াপ্ত করে রাশিয়ার কোনও অজ্ঞাত প্রত্যন্ত স্থানে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তার পর তাঁদের খবর আর কেউ জানে না। স্বাভাবিক ভাবেই এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে মস্কো।
রাশিয়া ঘোষণা করেছিল, মস্কোর সময় অনুযায়ী ভোর পাঁচটার মধ্যে আত্মসমর্পণ করতে হবে মারিয়ুপোলকে। তারা ধরা দিলে শহর থেকে সাধারণ মানুষকে উদ্ধারের কাজ চালাতে দেওয়া হবে। কিন্তু ইউক্রেন সে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করতেই ক্ষণে ক্ষণে বোমা ফেলে চলেছে রাশিয়া। জাতীয় নিরাপত্তারক্ষী বাহিনী (আজ়ভ রেজিমেন্ট)-র ক্যাপ্টেন স্যাতোস্লাভ পালামার বলেন, ‘‘প্রতি দশ মিনিটে বোমা পড়ছে। রুশ যুদ্ধজাহাজ থেকেও হামলা চলছে। আমাদের সেনাবাহিনী চারটি ট্যাঙ্ক, কিছু যুদ্ধযান ধ্বংস করেছে। কিন্তু আরও অস্ত্র চাই। ট্যাঙ্ক-ধ্বংসকারী অস্ত্র চাই। আকাশপথে হামলা প্রতিরোধী ব্যবস্থা চাই।’’ পালামারও জানিয়ে দিয়েছেন, রাশিয়া যা-ই করুক, ধরা দেওয়ার প্রশ্নই নেই।
মারিয়ুপোল নিয়ে রাশিয়ার বিশেষ আগ্রহের অন্যতম কারণ এর ভৌগোলিক অবস্থান। ডনবাসের পূর্ব দিকে ইউক্রেনীয় অঞ্চলের সঙ্গে ক্রাইমিয়া উপদ্বীপকে সংযুক্ত রাখে এই বন্দর শহর। ২০১৪ সালে ইউক্রেনের থেকে এই উপদ্বীপটি ছিনিয়ে নেয় রাশিয়া। এখন এই পুরো অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ চায় রাশিয়া। সে ক্ষেত্রে সমুদ্রের পাশাপাশি তীরবর্তী স্থলপথও তাদের হাতে চলে আসবে। যা রুশ বাণিজ্যক্ষেত্রের ব্যাপ্তির জন্য দরকারি।
মারিয়ুপোলের পাশাপাশি রাজধানী কিভেও নাগাড়ে হামলা চলছে। কিভের পোডিলস্কি অঞ্চলে একটি শপিং মলে হামলার ঘটনায় অন্তত ৮ জন প্রাণ হারিয়েছেন আজ। রুশ গোলায় শপিং মল ও তার লাগোয়া পার্কিং লটে আগুন ধরে যায়। দমকল বাহিনীর চেষ্টায় যত ক্ষণে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে, তত ক্ষণে প্রায় ছারখার বহুতল। প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। প্রাথমিক ভাবে ৮ জনের মৃত্যুর কথা জানা গিয়েছে।
এর মধ্যেও কাজ চালিয়ে যাচ্ছে কিভের একটি সংবাদ সংস্থা। প্রধান সম্পাদক ওলগা রুডেঙ্কো জানালেন, ইতিমধ্যেই তাঁদের চার সাংবাদিক যুদ্ধক্ষেত্রে প্রাণ হারিয়েছেন। ওলে বাতুরিন নামে এক সাংবাদিককে দক্ষিণপূর্ব ইউক্রেনের কাকোভকা থেকে গত সপ্তাহে অপহরণ করা হয়েছিল। আজ তাঁকে মুক্তি দিয়েছে রুশ বাহিনী। রুডেঙ্কো বলেন, ‘‘কর্মীদের নিরাপত্তা নিয়ে আমরা ক্রমাগত লড়ে চলেছি। সাংবাদিক তো নিশ্চয়ই, কিন্তু তার আগে মানুষ। আচমকাই আমরা সবাই ‘ওয়ার কোরেসপনডেন্ট’ হয়ে গিয়েছি।’’ শুধু ইউক্রেনীয় সংবাদ সংস্থাই নয়, বেশ কিছু আমেরিকান সংস্থার সাংবাদিকরাও প্রাণ হারিয়েছেন যুদ্ধে। মিকোলিভের বাসিন্দা ভিটালি ক্ষোভ উগরে বলেন, ‘‘ওরা কাউকে ছাড়ছে না। সাধারণ মানুষ! সকলকে মেরে দিচ্ছে ওরা। শয়তান, সরীসৃপ, পরজীবী! ওরা সশস্ত্র বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়ছে না, নিরস্ত্রকে আক্রমণ করছে। ফ্যাসিবাদীদের থেকেও জঘন্য।’’
সুমিতে রুশ হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত একটি রাসায়নিক কারখানা। গভর্নর দিমিত্র জ়াইভিতস্কি আজ সোশ্যাল মিডিয়ায় জানিয়েছেন, অ্যামোনিয়া বেরোতে শুরু করেছে কারখানা থেকে। ইতিমধ্যেই ২.৫ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে বিষাক্ত গ্যাস। বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে রয়েছে নোভোসেলিতসিয়া।
গত কাল রাতেই ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কি ঘোষণা করেছেন, সরাসরি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে কথা বলতে তিনি প্রস্তুত। এখনও পর্যন্ত এর কোনও উত্তর মেলেনি। ইউরোপ সফরে আসছেন আমেরিকান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ইউক্রেনের যাওয়ার কোনও পরিকল্পনা নেই বলে জানিয়ে দিয়েছেন তিনি। তবে পোল্যান্ডে যাবেন। নেটো গোষ্ঠী, জি৭-এর সদস্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে বৈঠকে বসার কথা বাইডেনের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy