কান উৎসবে থিয়েটারের পর্দায় জ়েলেনস্কি। ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া
ফিল্ম ও বাস্তবে খুব কি অমিল আছে! কখনও বাস্তবের ঘটনা নিয়ে তৈরি হয় ছায়াছবি। কখনও ফিল্মের চিত্রনাট্যই যেন জেগে ওঠে বাস্তবে। গত কাল কানে শুরু হয়েছে চলচ্চিত্র উৎসব। প্রথম দিন থিয়েটারের পর্দায় ভেসে উঠল যুদ্ধবিধ্বস্ত এক ‘রাজার’ মুখ। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কি। জানতে চাইলেন, এখন যা হচ্ছে ইউক্রেনে, তা চার্লি চ্যাপলিনের ‘দ্য গ্রেট ডিক্টেটর’ কিংবা ফ্রান্সিস ফোর্ড কপোলার ‘অ্যাপোক্যালিপস নাউ’-এর থেকে কম কিছু কি!
যুদ্ধ শুরুর পর থেকে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ভিডিয়ো কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে কথা বলেছেন জ়েলেনস্কি। কখনও হোয়াইট হাউসে তো কখনও জার্মান আইনসভায় ইউক্রেনের লড়াইয়ে পাশে চেয়েছেন সকলকে। এ দিনও তাই। ১৯৪০-এর ছবি ‘দ্য গ্রেট ডিক্টেটর’-এর প্রসঙ্গ টেনে বললেন, ‘‘মানুষের ঘৃণা এক সময় চলে যাবে, একনায়কদের মৃত্যু হবেই, মানুষের থেকে যে ক্ষমতা ওরা কেড়ে নিয়েছিল, তা আবার মানুষের হাতে ফিরে আসবে। যত দিন মানুষের মৃত্যু আছে, স্বাধীনতা কখনও ধ্বংস হবে না।’’
জ়েলেনস্কি এ-ও বলেন, ‘‘আমাদের এক নতুন চ্যাপলিন চাই, যিনি দেখিয়ে দেবেন, আমাদের এই যুগে চলচ্চিত্র নির্বাক নয়। মনে রাখবেন কথাটা।’’ গোটা প্রেক্ষাগৃহ উঠে দাঁড়িয়ে করতালি দিয়ে শুভেচ্ছা জানান জ়েলেনস্কিকে।
যুদ্ধের প্রতিবাদে এ বারের কান চলচ্চিত্র উৎসবে রাশিয়ার অংশগ্রহণে নিষেধাজ্ঞা চাপানো হয়েছে। ১২ দিনের উৎসবে ইউক্রেনের একাধিক ছবি দেখানো হবে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য, সের্গেই লোজ়নিতসার ডকুমেন্টরি ছবি ‘দ্য ন্যাচরাল হিস্ট্রি অব ডেসট্রাকশন’। লিথুয়ানিয়ার চিত্রনির্মাতা মানতাস কেদারাভিয়াসের গত এপ্রিলে ইউক্রেনের মারিয়ুপোলে রুশ হামলায় মারা গিয়েছেন। তাঁর তোলা ছবিও দেখানো হবে উৎসবে।
যুদ্ধ শুরুর পর প্রায় তিন মাস কেটে গিয়েছে। ধ্বংসস্তূপের উপরে দাঁড়িয়ে ইউক্রেন। যদিও তার খুব অল্প অংশই দখল করতে পেরেছে রাশিয়া। গোটা বিশ্বে তারা অনেকটাই কোণঠাসা। রুশ অর্থনীতি প্রায় তলানিতে ঠেকেছে।
আজ থেকে রুশ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হল ইউক্রেনে। অস্ত্রহীন এক সাধারণ বাসিন্দাকে অসহায় অবস্থায় হত্যার অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করা হল এক ২১ বছর বয়সি রুশ সেনাকে। বাদিম শিশিমারিন স্বীকার করেছে, যুদ্ধ শুরুর কিছু দিনের মাথায় সে ৬২ বছরের এক বৃদ্ধকে গুলি করে হত্যা করে। যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে বাদিমের।
কিভের আদালতে আজ হাতকড়া পরিয়ে আনা হয়েছিল বাদিমকে। মাথা নিচু, চোখেমুখে উদ্বেগ স্পষ্ট ছিল ২১ বছরের যুবকের। আদালতে উপস্থিত ছিলেন নিহত বৃদ্ধের স্ত্রী। চোখের জল মুছতে মুছতেই স্বামীর হত্যাকারীকে দেখেন। কাঠগড়ায় তোলা হলে বাদিমকে প্রশ্ন করেন বিচারপতি, ‘‘তুমি নিজের দোষ স্বীকার করো?’’ উত্তরে সে শুধু বলে, ‘‘হ্যাঁ।’’ সরকারি আইনজীবী জানান, একটি ট্যাঙ্ক বাহিনীর নেতৃত্বে ছিল বাদিম। ইউক্রেনের সেনার হামলার মুখে পড়ে তাদের কনভয়। তখন একটি গাড়ি চুরি করে সে ও আরও চার জন পালায়। তারা চুপাকিভকায় পৌঁছয়। সেখানে রাস্তায় তাদের সামনে পড়ে ৬২ বছর বয়সি ওই বৃদ্ধ। এই সময়ে বাদিমের নির্দেশে গুলি করা হয় বৃদ্ধকে। শুনানি আজ স্থগিত রয়েছে। আগামিকাল ফের শুনানি হবে। নিহত বৃদ্ধের স্ত্রী পরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘ওর (রুশ সেনা) জন্য খারাপ লাগছিল আমার। কিন্তু এই অপরাধের ক্ষমা হয় না।’’
এ দিকে, তিন মাস বন্ধ থাকার পরে কিভে আজ থেকে চালু হল আমেরিকান দূতাবাসের কাজকর্ম। আমেরিকার বিদেশ দফতর এ কথা জানিয়েছে। ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রুশ অভিযান শুরুর ঠিক আগেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল আমেরিকান দূতাবাস। কূটনীতিকদের পড়শি দেশ পোল্যান্ড ও পশ্চিম ইউক্রেনের লিভিভ শহরে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তাঁরা কিভে ফিরে এসেছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy