পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে আয়োজিত আনন্দ শোভাযাত্রার জন্য তৈরি করা কাঠামো পুড়ে গেল গভীর রাতের আগুনে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ থেকে প্রতিবছর এই শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়। শনিবার ভোরের ওই আগুনে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যঙ্গ-প্রতিকৃতি, শান্তির দূত পায়রার অবয়ব-সহ অনেক কিছুই পুড়ে নষ্ট হয়েছে বলে দাবি। চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীদের একাংশের দাবি, যাঁরা ওই কাজে যুক্ত ছিলেন, কাজের ফাঁকে তাঁদের কেউ গাঁজা খেতে গিয়ে এমন কাণ্ড ঘটিয়েছেন। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন প্রতিকৃতি নির্মাণের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। অন্য দিকে প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের দাবি, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবেই এই কাজ করা হয়েছে বলে তদন্তকারীরা নিশ্চিত। এমনকি সিসিটিভি ফুটেজেও আগুন লাগানোর ছবি ধরা পড়েছে বলে জানা গিয়েছে।
পয়লা বৈশাখের এই শোভাযাত্রাকে বহু বছর ধরে মঙ্গল শোভাযাত্রা বলা হলেও বাংলাদেশে জমানা বদলের পরে জামায়তে ইসলামী-সহ একাধিক উগ্র মৌলবাদী সংগঠনের চাপের মুখে নাম বদল করে রাখা হয় আনন্দ শোভাযাত্রা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমেদ জানান, শনিবার ভোর ৪টা ৫০ মিনিট নাগাদ ঘটনাটি ঘটে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর মহম্মদ ইসরাফিলের দাবি, শেখ হাসিনার প্রতিকৃতিকে নিশানা করেই আগুন লাগানো হয়েছে। ওই আকৃতি পুরোটাই পুড়ে গেছে। দমকলবাহিনী আসার আগেই পুরোটাই পুড়ে যায় বলে জানিয়ে তিনি দাবি করেন, ওই আগুন ইচ্ছে করে লাগানো হয়েছে। তবে কে বা কারা এ কাজ করেছে, তা জানা যায়নি৷
সরকারি ভাবে স্বীকার না করা হলেও এই আগুনের পেছনে মৌলবাদীদের পাশাপাশি নাশকতা করে অন্য কারও ঘাড়ে দায় চাপানো গোষ্ঠীর দিকেও আঙুল তুলেছেন অনেকেই। জামায়তে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, খেলাফত মজলিস, হেফাজতে ইসলাম-সহ বেশ কয়েকটি মৌলবাদী দল সব সময়েই এই মঙ্গল শোভাযাত্রার বিরোধিতা করেছে। এমনকি শোভাযাত্রায় মোটিফ বা প্রতিকৃতি ব্যবহারেরও বিরোধী তারা। বিশিষ্ট জনেদের একাংশও এই মৌলবাদীদের দিকেই আঙুল তুলেছেন। এই আবহে বাংলাদেশের ইউটিউবার ইলিয়াস হোসেনের উস্কানিমূলক একটি পোস্টের স্ক্রিনশট সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানে ওই ইউটিউবার শোভাযাত্রার নামে ভাস্কর্য তৈরি করাকে হিন্দুত্ববাদী ও ভারতীয় সংস্কৃতি বলে দাবি করে সে রকম কোন চেষ্টা হলে তা প্রতিহত করার কথা বলেছেন। শেখ হাসিনার ব্যঙ্গ-প্রতিকৃতিতে আগুন দেওয়ার পেছনে তার ইন্ধন রয়েছে বলে দাবি
করছেন অনেকেই।
তদন্তে নেমে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার এস এন এম নজরুল ইসলাম বলেন, ‘‘আপাতদৃষ্টিতে দেখে যেটা মনে হচ্ছে, এটা দুর্ঘটনা নয়, কেউ ইচ্ছাকৃত ভাবে এটা করেছে। এটুকু আমরা নিশ্চিত।’’ কে বা কারা এ কাজ করেছে, সে সম্পর্কে তিনি স্পষ্ট কোনও মন্তব্য না করলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে একটি সূত্রে জানানো হয়েছে, শনিবার ভোরে দু’টি প্রতিকৃতিতে এক জন ব্যক্তিকে আগুন দিতে দেখা গিয়েছে বলে চারুকলা পরিষদের সিসিটিভির ফুটেজ বিশ্লেষণ করে পুলিশ জানতে পেরেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর জানান, ওই ব্যক্তি কালো টি-শার্ট, বাদামি প্যান্ট ও কালো স্যান্ডেল পরেছিলেন। তাঁর চুল পেছনে ঝুঁটি করে বাঁধা ছিল। চারুকলার মাঝখানের গেট টপকে ওই ব্যক্তি ভোর ৪টে ৪৪ মিনিটে ভেতরে ঢোকেন এবং সেই পথেই ৪টা ৪৬ মিনিটে পালিয়ে যান। তবে রাত পর্যন্ত ওই ব্যক্তিকে শনাক্ত করা যায়নি বলে জানা গিয়েছে।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)