মধ্য এশিয়ায় পামির পর্বতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ লেনিন শৃঙ্গ (৭১৩৪ মিটার)। ছবি: সংগৃহীত।
নেপাল বা ভারতের হিমালয়ে দাপিয়ে বেরিয়েছেন এত দিন। এ বার অন্য অভিজ্ঞতার খোঁজে ‘পৃথিবীর ছাদে’ পাড়ি দিচ্ছেন দুই বাংলার আরোহীরা। মধ্য এশিয়ায় পামির পর্বতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ লেনিন শৃঙ্গে (৭১৩৪ মিটার) এ বারের লক্ষ্য স্থির করেছেন এভারেস্টজয়ী পর্বতারোহী দেবাশিস বিশ্বাস এবং মলয় মুখোপাধ্যায়।
কিরঘিজস্তান-তাজিকিস্তানের সীমান্তে থাকা এই শৃঙ্গে দেবাশিস-মলয় জুটির সঙ্গী হচ্ছেন বছর বাষট্টির আরোহী কিরণ পাত্র। আর রয়েছেন বাংলাদেশের বাবর আলি এবং আহমেদ তনবির। পেশায় চিকিৎসক, বছর চৌত্রিশের বাবর সম্প্রতি কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী সাইকেলযাত্রা করে গিয়েছেন। ভারতে একাধিক পর্বতাভিযানে অংশ নিয়েছেন বছর ছত্রিশের ঢাকাবাসী আহমেদও। আগামী ২৫ জুন দিল্লি থেকে কিরঘিজস্তানের উদ্দেশে যাত্রা শুরু হবে তাঁদের।
ভূগোল বলছে, মধ্য এশিয়ার পামির মালভূমি থেকেই একাধিক পর্বতমালার উৎপত্তি— হিমালয়, হিন্দুকুশ, কারাকোরাম, তিয়ানশান, কুনলুন পর্বতমালা। পামিরেরউত্তর দিকের ট্রান্স-আলয় পর্বতমালার সর্বোচ্চ এই শৃঙ্গের নামকরণ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পাল্টেছে। ১৯২৮সালে ভ্লাদিমির লেনিনের নামে হয় এর নতুন নামকরণ— লেনিন শৃঙ্গ। সে সময়ে একেই সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ হিসাবে ধরা হত। ২০০৬-এ তাজিকিস্তান নাম বদলে রাখে ইবন সিনা শৃঙ্গ।যদিও আজও এর জনপ্রিয়তা লেনিনের নামেই। ১৯২৮ সালে এই শৃঙ্গে প্রথম সফল আরোহণ। ‘‘এর ১৬টি রুটে একাধিক দেশের অভিযাত্রীরা সামিট করেছেন। তবে যত দূর জানি, লেনিন শৃঙ্গে অভিযান হলেও দুই বাংলার কোনও বাঙালি এখনও শীর্ষে পৌঁছননি’’— বলছেন দেবাশিস।
তা-ই কি লেনিনের হাতছানিতে সাড়া দিলেন? মলয়ের কথায়, ‘‘কোভিডের আগেই লেনিন শৃঙ্গ নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করেছিলাম। কোভিড-আবহে তা থমকে যায়। ভবিষ্যতে হয়তো আমাদের দেখেই মধ্য এশিয়ায় পর্বতাভিযান ভারতের আরোহীদের কাছে জনপ্রিয়হয়ে উঠবে।’’
লেনিনকে বেছে নেওয়ার পিছনে আরও একটি বড় কারণ খরচ। নেপালের তুলনায় অনেক কম খরচেই সেরে ফেলা যাবে একমাস ব্যাপী এই অভিযান। তাই লেনিনের পাশাপাশি চার-পাঁচটি সংলগ্ন শৃঙ্গেও পা রাখার পরিকল্পনা রয়েছে। মলয় জানাচ্ছেন, লেনিন খুব কঠিন না হলেও এখানে রয়েছে ক্রেভাস, থাকছে আচমকা খারাপ আবহাওয়ার ভ্রুকুটি, দীর্ঘ ‘সামিট পুশ’-এর ক্লান্তি।
এ দেশে সাইকেল চালাতে এসে মলয়ের সফরসঙ্গী হওয়ার ডাককে উপেক্ষা করতে পারেননি চট্টগ্রামবাসী বাবর। ফোনে বললেন, ‘‘পর্বতারোহী হিসাবেই নিজের পরিচয় দিতে ভালবাসি। সাতহাজারি শৃঙ্গে প্রথম যাচ্ছি বটে, তবে নেপালের ছ’হাজারি আমা দাবলামের মতো কঠিন শৃঙ্গে অভিযান করে এসেছি। হিমাচল, উত্তরাখণ্ডের পাহাড়েও গিয়েছি। তাই লেনিন শৃঙ্গ বেশি ভোগাবে না বলেই মনে হয়।’’
এর সঙ্গে রয়েছে অচেনা দেশ দেখার আনন্দ। দেবাশিসের কথায়, ‘‘কিরঘিজস্তান খুব সুন্দর দেশ। সম্ভব হলে পুরো দেশটা ঘুরতে চাই। এখানকার জীবনযাপন দেখতে চাই। চেষ্টা করব যদি ভিসার মেয়াদ একটু বাড়াতে পারি।’
ইতিহাস সাক্ষী, কিরঘিজস্তানের প্রতিবেশী উজবেকিস্তানের ফারগানার একদা গভর্নর ছিলেন মোগলসম্রাট বাবরের বাবা উমর শেখ মির্জা।এই দু’জায়গার সংস্কৃতিগত কোনও মিল রয়েছে কি না, সেইপ্রশ্নও ঘুরপাক খাচ্ছে দেবাশিসদের মনে। উত্তর খুঁজতে তাই বাবরকেসঙ্গে নিয়ে মোগলসম্রাট বাবরের পড়শি দেশে যাত্রা অনুসন্ধিৎসু বাঙালির।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy