ছবি: সমাজমাধ্যম।
হুয়ি আর প্যানকেক, দীর্ঘদিনের দুই বন্ধু একসঙ্গে টেক্সাস থেকে লুইজ়িয়ানার দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে পৌঁছল তাদের নতুন বাসস্থানে। ২০০ একর জমিতে পাইন জঙ্গল দিয়ে ঘেরা এক ‘বৃদ্ধাবাস’, যার নাম ‘চিম্প হ্যাভেন’— অবসর নেওয়া শিম্পাঞ্জিদের আশ্রয়স্থল।
বিজ্ঞান বলে প্রায় ৯৮ শতাংশ ডিএনএ এক হওয়ায় জিনগত দিক থেকে শিম্পাঞ্জিরা মানুষের সবচেয়ে কাছের, তাই দীর্ঘদিন ধরে বায়োমেডিক্যাল রিসার্চের তারা ছিল অন্যতম অংশগ্রহণকারী। আমেরিকায় এডস গবেষণার শুরুর দিকে, হেপাটাইটিস সি, বিভিন্ন রেসপিরেটরি ভাইরাসের চিকিৎসা ও আরও বহু গবেষণায় তাদের অবদান অনেকখানি। মানুষের সঙ্গে তাদের বিভিন্ন ধরনের রোগের ও রোগ সংক্রমণের সাদৃশ্য থাকায়, বৈজ্ঞানিকদের জন্য তারা ছিল অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। কিন্তু সময় পাল্টায়। বৈজ্ঞানিক গবেষণায় ব্যবহৃত এই শিম্পাঞ্জিদের চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যরক্ষার, অবসর ও পুনর্বাসন বিষয়ে বিল আমেরিকার কংগ্রেসে আসে ২০০০ সালে। ২০১৫ সালে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ আমেরিকায়, যে কোনও গবেষণায় শিপাঞ্জিদের ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করে।
উত্তর আমেরিকার প্রায় তিনশোর বেশি শিম্পাঞ্জির বাসস্থান এই ‘চিম্প হ্যাভেন’। হুয়ি আর প্যানকেকের মতো সেখানে থাকে কার্লি, ডনোভান, কোকোনাট ও ফ্লোরার মতো অনেক ‘অবসরপ্রাপ্ত’ শিম্পাঞ্জি। তাদের নিয়মিত স্বাস্থ্যকর খাবার দেওয়া হয়, ডাক্তার আছেন অসুস্থদের দেখভালের জন্য। রাত্রে তাদের সবার জন্য তাজা নতুন খড় দেওয়া হয়, যা দিয়ে শিম্পাঞ্জিরা নিজেদের মতো বিছানা বানিয়ে নেয়। কেউ আবার হ্যামকে ঘুমোয়, কেউ গাছে। এখানকার কর্মীরা ব্যক্তিগত ভাবে চেনেন প্রায় সবাইকে। তাঁরা জানেন, কে খেলতে ভালবাসে, কে দুষ্টুমি করতে, কোন বয়স্ক ‘মহিলারা’ দল বেঁধে বাঁচে, কে-ই বা বিরক্ত করা একদম পছন্দ করে না।
চিম্প হ্যাভেনের একজন প্রতিষ্ঠতা আগে টেক্সাসের একটি রিসার্চ সেন্টারে কাজ করতেন। সেই সুবাদে কুড়ি বছর আগে ঘনিষ্ঠ ভাবে চিনতেন প্যানকেক আর হুয়িকে। তাঁর মতে, এই দুই সঙ্গীর মধ্যে ভালবাসা ও নির্ভরতা আরও বেড়েছে কুড়ি বছরে। ‘চিম্প হ্যাভেন’-এ আসার পরে এই নতুন আশ্রয়ে ধীরে ধীরে মানিয়ে নিচ্ছে তারা, একসঙ্গেই।
ন্যাশনাল হেলথ ইনস্টিটিউট রিসার্চ বন্ধ করার পরে ওদের মতো আরও অনেক শিম্পাঞ্জির পুনর্বাসন হওয়া প্রয়োজন ছিল, কিন্তু সেটা পুরোপুরি হতে পারেনি। তার প্রধান কারণ, হার্টের সমস্যা, ডায়াবিটিস ইত্যাদি রোগে আক্রান্ত হওয়ার ফলে বয়স্ক এই সব শিম্পাঞ্জির অনেকেই অশক্ত। তাই তাদের রিসার্চ সেন্টারগুলো থেকে সরানো খুবই কঠিন। আবার সেই রিসার্চ সেন্টারের কোনও শিম্পাঞ্জি হয় তো সুস্থ, কিন্তু অন্য কোনও অসুস্থ শিম্পাঞ্জি তার উপরে মানসিক ভাবে প্রচণ্ড নির্ভরশীল। তাদের দু’জনকে আলাদা করলে অসুস্থ শিম্পাঞ্জিটির উপরে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে, এই আশঙ্কায় সুস্থ প্রাণিটিকেও সরিয়ে স্যাংচুয়ারিতে নিয়ে যাওয়া যায় না। এতটাই ‘বেঁধে বেঁধে’ বাঁচা এদের।
হুয়ি-প্যানকেকের মতো ‘বন্ধুদের’ দেখে প্রশ্ন জাগে, এই রকম নির্ভরতা আর বিশ্বাস কি সংক্রমিত হতে পারে না মানুষদের মধ্যেও!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy