প্রেসিডেন্টের প্রাসাদে রিচেপ তায়িপ এর্ডোয়ানের সঙ্গে চার ঘণ্টা ধরে বৈঠক সেরে বেরিয়ে আসছেন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স ও মার্কিন বিদেশসচিব মাইক পম্পেয়ো। ছবি এএফপি।
অবশেষে সংঘর্ষবিরতি।
উত্তর-পূর্ব সিরিয়ায় তুরস্কের একতরফা সেনা অভিযান থামানো নিয়ে কথা বলতে আজ সিরিয়া এসেছিলেন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স, মার্কিন বিদেশসচিব মাইক পম্পেয়ো, আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা রবার্ট ও’ব্রায়েন-সহ শীর্ষ মার্কিন কূটনীতিকদের একটি প্রতিনিধি দল। আঙ্কারায় প্রেসিডেন্টের প্রাসাদে রিচেপ তায়িপ এর্ডোয়ানের সঙ্গে চার ঘণ্টা ধরে বৈঠক করেন তাঁরা।
বৈঠক যে সফল হয়েছে, স্পষ্ট হল স্থানীয় সময় সন্ধে ন’টা নাগাদ। পেন্স ঘোষণা করেন, পাঁচ দিনের সংঘর্ষবিরতিতে রাজি এর্ডোয়ান। এই ১২০ ঘণ্টার মধ্যে সিরীয় কুর্দদের মিলিশিয়া পিপলস প্রোটেকশনস ইউনিট (ওয়াইপিজি)-কে তুরস্ক সীমান্ত থেকে সরে যেতে হবে। এবং তা হবে আমেরিকার নজরদারিতেই।
প্রথমে অবশ্য ছবিটা এতটা আশাপ্রদ ছিল না। জানা যায়, ৯ অক্টোবর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের লেখা একটি চিঠি ডাস্টবিনে ফেলে দিয়েছিলেন এর্ডোয়ান। সিরিয়া থেকে মার্কিন সেনা সরিয়ে নেওয়ার পরে সেটি এর্ডোয়ানকে লিখেছিলেন ট্রাম্প। সেই দিনই কুর্দ-বাহিনীর উপরে হামলা চালায় তুরস্ক।
ট্রাম্পের চিঠির বক্তব্য ছিল: ‘‘চলুন একটা ভাল চুক্তি করি। হাজার হাজার মানুষকে হত্যার দায় আপনি নিশ্চয় নিতে যাবেন না। আমিও তুরস্কের অর্থনীতি ধ্বংস করার দায় নিতে চাই না— যদিও (প্রয়োজন হলে) করব।’’ চিঠিতে ট্রাম্প আরও লিখেছেন, ‘‘আপনি একটা মানবিক সিদ্ধান্ত নিলে ইতিহাস আপনাকে সেই চোখে দেখবে। কিন্তু সেটা না হলে চিরকাল আপনাকে হত্যাকারী হিসেবেই দেখা হবে। এত শক্ত হবেন না, বোকামো করবেন না।’’ ট্রাম্পের সেই প্রচ্ছন্ন হুমকিতে রেগে যান তুরস্কের প্রেসিডেন্ট। তবে আজ শীর্ষস্থানীয় মার্কিন কূটনীতিকদের সঙ্গে এর্ডোয়ানের বৈঠকের পরে বোঝা গেল, বরফ গলেছে।
সিরিয়া-তুরস্কের সংঘাতে মার্কিন হস্তক্ষেপ শুরু হয়ে গিয়েছিল কয়েক বছর আগেই। আইএস-কে নিকেশ করতে ‘সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্সেস’ (এসডিএফ)-এর সিরীয় কুর্দদের সঙ্গে জোট বেঁধেছিলেন প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। এই এসডিএফের শাখা ওয়াইপিজি। ফলে যা আশঙ্কা করা হয়েছিল তখন, সেটাই হয়েছে। কূটনৈতিক দ্বন্দ্বে মুখোমুখি তুরস্ক ও আমেরিকা। পটভূমি সিরিয়া। এই পরিস্থিতিতে মার্কিন প্রতিনিধি দলের সঙ্গে এর্ডোয়ানের বৈঠক কতটা সফল হবে, তা নিয়ে সংশয় ছিল। বৈঠকের পরে হাঁফ ছেড়েছে সব পক্ষই।
সিরিয়া থেকে মার্কিন সেনা সরানোর ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের প্রবল সমালোচনা করছেন ডেমোক্র্যাটরা। বুধবার সেই সমালোচনায় যোগ দেন অধিকাংশ রিপাবলিকানরাও। বুধবার ‘হাউস অব রিপ্রেজ়েন্টেটিভস’-এ রিপাবলিকান পার্টির ১২৯ জন সদস্য ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে একযোগে ট্রাম্পের বক্তব্যের বিরোধিতা করেছেন। সিরিয়া থেকে মার্কিন সেনা সরানোর সিদ্ধান্ত ভুল, এই নিয়ে বুধবার হাউসে ভোটাভুটি হলে ৩৫৪-৬০ ভোটে হেরে যান প্রেসিডেন্ট। হাউসে একই সঙ্গে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে, সিরিয়ায় কুর্দ বাহিনীর বিরুদ্ধে তুরস্কের হামলা অবিলম্বে থামানোর জন্য চাপ দেওয়া হোক এর্ডোয়ানকে।
কিন্তু হাউস যা-ই বলুক না কেন, শুনছেন না প্রেসিডেন্ট। বুধবার হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘‘সিরিয়ায় তুরস্কের সেনা অভিযান নিয়ে আমাদের নাক গলানো উচিত নয়। ওটা আমাদের সীমান্ত নয়। তা ছাড়া তুরস্ক-সিরিয়া সীমান্ত সমস্যা আমেরিকার জন্য কৌশলগত ভাবে ভাল। আমাদের সেনা ওখানে নেই। আমাদের বাহিনী নিরাপদে আছে।’’
বৈঠক চলাকালীন আজ হাউসের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির সঙ্গে বাদানুবাদ শুরু হয় ট্রাম্পের। শেষে রেগেমেগে পেলোসি ও সেনেটের সংখ্যালঘু নেতা চার্লস শুমার ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যান। উত্তপ্ত পরিস্থিতির জন্য ট্রাম্প ও পেলোসি দু’জনেই দু’জনকে দুষতে শুরু করেন। টুইটারে গড়ায় সেই ঝগড়া। বৈঠকে উত্তেজিত পেলোসির ছবি টুইটারে পোস্ট করে দেন ট্রাম্প। সঙ্গে লেখেন, ‘‘স্নায়ুর চাপে বেসামাল ন্যান্সি।’’ পেলোসি তখনই ছবিটিকে তাঁর টুইটারের ‘কভার ফটো’ করে পোস্ট করে দেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy