Advertisement
২২ জানুয়ারি ২০২৫
Mother

Mother: হাত ধরো, বলছেন সন্তানহারা মায়েরা

২০১৩ সালে ষাট জন মাকে দিয়ে শুরু হয়েছিল এই বাৎসরিক ‘মিলনোৎসব’— ফ্লরিডার মায়ামিতে। শুরু করেছিলেন সাব্রিনা ফুল্টন নামে একজন আফ্রিকান আমেরিকান মা।

n আয়, আরো বেঁধে বেঁধে থাকি... সার্কল অব মাদার্স। নিজস্ব চিত্র

মহুয়া সেন মুখোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০২২ ০৪:৫৯
Share: Save:

বেগুনিরঙা টি-শার্ট পরা হাস্যোজ্জ্বল এক ঝাঁক মহিলার এই ছবি দেখে অনায়াসে মনে হতে পারে, কোনও পুনর্মিলন উৎসবের ছবি এটি। কোনও সংগঠনের সদস্য এঁরা। সে রকম ভাবলে অবশ্য খুব ভুল ভাববেন না। ২০১৩ সালে ষাট জন মাকে দিয়ে শুরু হয়েছিল এই বাৎসরিক ‘মিলনোৎসব’— ফ্লরিডার মায়ামিতে। শুরু করেছিলেন সাব্রিনা ফুল্টন নামে একজন আফ্রিকান আমেরিকান মা।

কে এই সাব্রিনা এবং কেনই বা এত জন মাকে একজোট করলেন তিনি? জানতে গেলে আমাদের ফিরে যেতে হবে ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। ২৬ ফেব্রুয়ারি সাব্রিনার ছেলে ট্রেভন মার্টিন ফ্লরিডার স্ট্যানফোর্ড নামের একটি শহরে রাত্রিবেলা ক্যান্ডি কিনে ফিরছিল। পাড়ায় টহল দেওয়া নিরাপত্তরক্ষী জর্জ জ়িমারম্যানের চোখে ট্রেভনকে ‘সন্দেহজনক’ লাগে। কোনও প্ররোচনা ছাড়াই ট্রেভনকে গুলি করে জ়িমারম্যান। ঘটনাস্থলেই মারা যায় কিশোর। ১৭ বছর বয়সি ট্রেভন তখনও হাইস্কুলের ছাত্র। এই ঘটনার পরে সমস্ত দেশে উত্তাল প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়ে। বলা যেতে পারে, তখনই ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ আন্দোলনের বীজ বপন হয়েছিল, যা মহিরুহের আকার নেয় কয়েক বছর বাদে, কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েডকে শ্বেতাঙ্গ পুলিশ শ্বাসরোধ করে হত্যার পরে।

ছেলের মৃত্যুর পরে বেঁচে থাকার প্রাণশক্তিটুকু নিয়ে প্রাণপণ লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন সাব্রিনা, তাঁর সন্তান সুবিচার পাবে, শুধু এই আশায়। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। ছাড়া পেয়ে যায় জ়িমারম্যান। যখন শোকে ভেঙে গুঁড়িয়ে মাটিতে মিশে যাওয়ার কথা, ঠিক সেই সময়ে সাব্রিনা শুরু করেন কৃষ্ণাঙ্গ মায়েদের সংগঠন— আগ্নেয়াস্ত্রের অপব্যবহারে সন্তান হারিয়েছেন যাঁরা, সেই সব মাকে সঙ্গে নিয়ে। পথ চলতে গিয়ে সঙ্গে পেয়ে যান আরও অনেককে। তখনই শুরু হয় এই ‘সার্কল অব মাদার্স’। তাঁরা যে বার্ষিক মিলন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন, সেখানে সারা দেশ থেকে আসেন কালো মায়েরা, যাঁরা তাঁদের সন্তানদের হারিয়েছেন। তাঁরা এখানে এসে সেই সব মায়ের সঙ্গে পরিচিত হন, যাঁরা একই আগুন-ঝরা পথে হাঁটছেন, যাঁরা কোনও ভাবে জোড়া দেওয়া পুতুলের মতো দাঁড়িয়ে আছেন। সপ্তাহান্তে দু’দিনের এই অনুষ্ঠানে তাঁরা নিজেদের মধ্যে কথা বলেন। না, শুধু সন্তানের মৃত্যুর কথা নয়, তাদের জীবনের কথা, তারা কেমন ছিল সেই কথা... তাদের অভ্যাস, দুষ্টুমি, আদর সমস্ত কিছুর কথাই।

এই কথাবার্তা, এক জন সহমর্মীকে পাশে পাওয়া— এই সবের মধ্যে দিয়ে এখানে এসে শ্বাস নিতে পারেন এই মায়েরা। যাঁরা তাঁদের যন্ত্রণাতে বিচ্ছিন্ন ছিলেন, তাঁরা অনেকেই এই প্রথম বার মনে করেন তাঁরা একা নন… আর এটাই সাব্রিনা ফুল্টনের কাছে অন্ধকার সুড়ঙ্গে প্রথম আলোর রেখা। এটাই তাঁর আশা। তিনি বলেন ‘‘এই মায়েরা যে কেউ একা নন, এই উপলব্ধি যেন তাঁদের শক্তি যোগায়। উঠে দাঁড়ানোর শক্তি, প্রতিবাদ করার শক্তি, এই অকারণ মৃত্যু-মিছিল বন্ধ করার জন্য লড়াই চালানোর শক্তি।’’ সাব্রিনা মনে করেন, তিনি নিজেও এই সব মাকে পাশে পেয়ে একটু একটু করে আলোর দিকে যেতে পারছেন।

নিজের শিকড়ের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে প্রবাসে পরিবার গড়ে তোলার অভিজ্ঞতা থেকে জানি যে, প্রত্যেক দিনের ছোট-বড় যে কোনও সমস্যায় অন্য মেয়েদের, অন্য মায়েদের সাহায্য আর সহযোগিতা ছাড়া আমাদের এক দিনও চলবে না… আর কোনও না কোনও হাত দরকারের সময় ঠিক এগিয়ে আসবে। কিন্তু জীবনের সবচেয়ে মর্মান্তিক শোক পাওয়ার পরে এই উপলব্ধি— একই বৃত্তে পরস্পরের ধরে থাকা হাতই সমষ্টিগত ভাবে একটা উত্তরণ ঘটাতে পারে— এই ভাবনাটার জন্য সাব্রিনা অনন্য। তিনি সকলকে নিয়ে, সকলের সঙ্গে বাঁচার দিকে ফিরতে চেয়েছেন। অতিমারি আর যুদ্ধে বিধ্বস্ত এ বারের আন্তর্জাতিক নারীদিবসে এই ভাবনাকে আরও উজ্জ্বল ভাবে নিজেদের মধ্যে জ্বালিয়ে রাখতে চান তিনি।

অন্য বিষয়গুলি:

Mother
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy