পাতালের অন্ধকার থেকে এখন বেশির ভাগই উদ্ধার হচ্ছে মৃতদেহ। ফাইল চিত্র।
ভূমিকম্পের আট দিনের মাথায় আজ উদ্ধার অভিযান বন্ধ করে দিল জার্মানির দল। দেশে ফিরে যাচ্ছে তারা। ইজ়রায়েলের বাহিনীও ফিরে গিয়েছে। ভারতীয় বাহিনী এখনও উদ্ধারকাজ চালিয়ে যাচ্ছে। রাষ্ট্রপুঞ্জের কর্তা মার্টিন গ্রিফিতস জানিয়েছেন, সময় ফুরোচ্ছে। উদ্ধারকাজ বন্ধ করার সময় চলে আসছে। টুইটারকে কাজে লাগিয়ে ভূকম্প পীড়িতদের উদ্ধারকাজে নেমেছিলেন বহু সফটওয়্যার ডেভেলপার। এই পরিস্থিতিতে টুইটার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, এ জন্য মাসে অন্তত ১০০ ডলার দিতে হবে টুইটারকে। না হলে পরিষেবায় ছেদ পড়বে। আশঙ্কা, এই ঘোষণার জেরে বিঘ্নিত হবে উদ্ধারকাজ।
আজ অষ্টম দিনেও ভূমিকম্পের ১৭৫ ঘণ্টা পরে তুরস্কের হাটায়ে ধ্বংসস্তূপের নীচ থেকে উদ্ধার করা হল এক মহিলাকে। তাঁর নাম নাইদে উমায়। গাজ়িয়ানটেপ থেকে ৪০ বছর বয়সি সিবেল কায়াকে উদ্ধার করা হয়েছে আজ। ১৭০ ঘণ্টা আটকে ছিলেন তিনি। আন্টাকিয়া থেকে ১৬৭ ঘণ্টা পরে উদ্ধার করা হয়েছে এক যুবককে। ১৫৯ ঘণ্টা পরে পাওয়া গিয়েছে এক ৫৫ বছর বয়সি প্রৌঢ়াকে। ১৫২ ঘণ্টা পরেও জীবিত মিলেছে ৮৫ বছরের এক বৃদ্ধাকে। মাত্র এক ফুট চওড়া একটি গর্তে এত দিন ধরে আটকে ছিলেন তিনি। ২৫ বছরের এক সিরীয় যুবক ও একটি শিশুকেও আজ, ভূমিকম্পের প্রায় ১৫২ ঘণ্টা পরে উদ্ধার করা হয়েছে। এমন বেশি কিছু ‘মিরাকল’ শোনা গিয়েছে দিনভর।
পাতালের অন্ধকার থেকে এখন বেশির ভাগই উদ্ধার হচ্ছে মৃতদেহ। তুরস্ক-সিরিয়ার ভূমিকম্পে আজ মৃতের সংখ্যা ৩৬ হাজার ছাড়িয়েছে। গত দু’দশকে যে সব ভূমিকম্প ঘটেছে, মৃত্যুর নিরিখে প্রথম পাঁচে উঠে এসেছে এটি। শুধু তুরস্কেই মৃতের সংখ্যা ৩১ হাজারের বেশি। আলেপ্পো শহরে দাঁড়িয়ে গ্রিফিতস বলেছেন, ‘‘যা এক-একটা ঘটনা শুনছি, গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠছে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘এখনও অনেককে জীবিত উদ্ধার করা হচ্ছে। মৃতদেহ বার করা হচ্ছে ধ্বংসস্তূপ থেকে। কিন্তু এই পর্যায়ের শেষের দিকে আমরা। এ বারে যাঁরা বেঁচে আছেন তাঁদের চিকিৎসা, আশ্রয়, মানসিক সুস্থতা, খাদ্য, শিক্ষা— এ সবে নজর দিতে হবে।’’
ভারতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী এখনও তুরস্কে রয়েছে। ভারতে নিযুক্ত তুরস্কের রাষ্ট্রদূত ফিরাত সুনেল ধন্যবাদ জানিয়ে টুইটারে লিখেছেন, ‘‘ভারতের মানুষের থেকে আরও এক দফায় জরুরি ভিত্তিতে সাহায্য যাচ্ছে তুরস্কে। ভারতকে ধন্যবাদ! ভূমিকম্প বিধ্বস্ত হাজার হাজার মানুষের জন্য প্রতিটি তাবু, প্রতিটি কম্বল, স্লিপিং ব্যাগই খুব গুরুত্বপূর্ণ।’’ গত কাল ২৩ টন ত্রাণসাহায্য নিয়ে ভারতের ‘অপারেশন দোস্ত’ অভিযানের সপ্তম উড়ান তুরস্কে পৌঁছেছে।
আতঙ্কে দু’চোখের পাতা এক করতে পারছেন না আব্দুল রহমান আল-দাহান। সিরীয় এই যুবক থাকেন আমেরিকায়। কিন্তু তাঁর পরিবার, বন্ধুবান্ধব সকলেই দেশে রয়েছেন। যখন ভূমিকম্প হচ্ছে, সে সময়ে তাঁকে অনেকে ভয়েস মেসেজ করেছিলেন। আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে হাজার হাজার মাইল দূরে বসেই প্রিয়জনের আর্তনাদ শুনতে পেয়েছিলেন আব্দুল রহমান। তার পর থেকে রাতে ঘুমোতে পারছেন না। সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘‘আমি শেষ হয়ে যাচ্ছি। যখন ভূমিকম্প হচ্ছে, আমার ফোনে টানা ভয়েস মেসেজ এসে গিয়েছে। বিভিন্ন নাম্বার থেকে। সকলেই কাঁদছিলেন। বলছিলেন, চারপাশে মৃতদেহ পড়ে। ওঁদের হাহাকার ভুলতে পারছি না।’’ গোটা বিশ্বের কাছে সাহায্যের আর্জি জানিয়েছেন তিনি।
ভারত-সহ বিশ্বের অন্তত ৭০টি দেশ ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। ব্রিটেনের বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী আজ টুইটারে একটি ভিডিয়ো পোস্ট করেছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, তাদের দলের এক উদ্ধারকারী প্রায় হামাগুড়ি দিয়ে ধ্বংসস্তূপের ভিতরে একটা ছোট্ট গর্তের মধ্যে দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। অনেকটা ভিতরে এক ব্যক্তি আটকে পড়ে রয়েছেন। উদ্ধার অভিযানটি দিন কয়েক আগের। বহু জায়গায় উদ্ধারকারী দলগুলি জানিয়েছে, তাদের আরও বেশি আধুনিক যন্ত্রপাতি, সেন্সর প্রয়োজন। প্রয়োজনীয় যন্ত্র না পেয়ে শাবল, গাঁইতি দিয়েই ধ্বংসস্তূপ সরানোর কাজ চলছে কিছু জায়গায়। হাত দিয়ে পাথরের চাঁই সরাতে হয়েছে। এ ধরনের সমস্যা বেশি সিরিয়ায়। উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ার জাবলে-র বাসিন্দা আলা মুবারক বলেছেন, ‘‘আমাদের যদি একটু উন্নত যন্ত্রপাতি থাকত, তা হলে আরও অন্তত শ’খানেক প্রাণ বাঁচানো যেত।’’ তুরস্ক সীমান্ত দিয়ে সিরিয়ায় আজ রাষ্ট্রপুঞ্জের ছ’টি ট্রাক ত্রাণ নিয়ে ঢুকেছে। তবে আন্তর্জাতিক সংস্থাটি জানিয়েছে, সিরিয়ায় ত্রাণ ঠিকমতো পৌঁছচ্ছে না। তুরস্ক সীমান্ত পেরিয়ে কিছু ত্রাণসাহায্য ঢুকেছে, কিন্তু তা যথেষ্ট নয়। লক্ষ লক্ষ ঘরবাড়ি হারিয়ে মানুষ খোলা আকাশের নীচে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy