নোবেলজয়ী বঙ্গসন্তান অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি- রয়টার্স
চটকদার প্রকল্পের ঘোষণা করে কাজের কাজ কিছু হবে না। গরিব মানুষের হাতে বেশি বেশি করে টাকা তুলে দিতে হবে। না হলে ভারতের বাজারে বিভিন্ন পণ্যের চাহিদা বাড়বে না। বাড়বে না বিক্রিবাটাও।
অর্থনীতির বেহাল দশা কাটিয়ে কী ভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারে ভারত, তার উপায় বাতলাতে গিয়ে এ কথা বলেছেন অর্থনীতিতে সদ্য নোবেল পুরস্কারজয়ী বঙ্গসন্তান অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার নোবেল পুরস্কার ঘোষণার পরেই অভিজিৎ এসেছিলেন ম্যাসাচুসেট্স ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (এমআইটি)-তে। অভিজিৎ সেখানেই এক সাংবাদিক বৈঠকে কথাটা বলেছেন। ইংরেজিতে বলা শুরুর পর ওই অংশটুকু মাতৃভাষা বাংলায় বলেন অভিজিৎ।
মোদী সরকারের দ্বিতীয় জমানায় ভারতের অর্থনীতির হাল কেমন? সাংবাদিকদের প্রশ্নে কোনও রাখঢাক না করেই অভিজিতের জবাব, ‘‘আমার মতে, (ভারতের) অর্থনীতির হাল এখন খুব খারাপ। সরকারের রাজকোষে ঘাটতি বিপুল। তবু তারা সকলকে খুশি করার জন্য চেষ্টা করছে। আর তার পরেও ভান করছে, বাজেটে ঘোষিত ঘাটতির লক্ষ্যমাত্রা ধরে রাখা যাবে।’’
এমআইটিতে কী বললেন অভিজিৎ? দেখুন ভিডিয়ো
আরও পড়ুন- বিনায়কের সিদ্ধিলাভ, নোবেলে ফের সেরা বাঙালিই
আরও পড়ুন- ‘বাবার কথা খুব মনে হচ্ছে, তিনিই আমার প্রথম শিক্ষক’
গরিবের টাকা নেই, তাই পণ্য কিনতে পারছেন না
অভিজিতের বক্তব্য, এটা করলে কাজের কাজ কিছু হবে না। ভারতের অর্থনীতির গতি খুব দ্রুত শ্লথ হয়ে পড়ছে। সরকার যে ভাবে চলছে, তাতে এই সমস্যা থেকে ভারতকে চট করে বের করে আনা যাবে না।
অভিজিৎ বলেন, ‘‘চাহিদার অভাবই এখন ভারতের অর্থনীতির সবচেয়ে বড় সমস্যা। দেশের বাজারে পণ্যের অভাব নেই। কিন্তু তা কেনার জন্য গরিব ও মধ্যবিত্তের হাতে টাকা নেই। সাধারণ মানুষ ক্রয়ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছেন। তাই পণ্য প্রচুর হলেও তার চাহিদা বাড়ছে না ভারতের বাজারে। শুধুই বড়লোকদের হাতে টাকা তুলে দিলে হবে না। গরিব ও মধ্যবিত্তদের হাতে টাকা তুলে দেওয়ার প্রয়োজনটাই বেশি।’’
শহর, গ্রামে পণ্যের বিক্রিবাটা কমল বহু বছর পর
ভারতের জাতীয় নমুনা পরিসংখ্যান সমীক্ষার সম্প্রতি প্রকাশিত পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, শহর ও গ্রামাঞ্চলে গড় বিক্রিবাটার হার কমে গিয়েছে।
অভিজিতের মতে, ‘‘অনেক অনেক বছর পরে এমনটা হল। এটা সত্যিই খুব উদ্বেগের চিহ্ন।’’
সরকারও বুঝতে পারছে, ভুল হচ্ছে...
পরিসংখ্যান নিয়ে টানাপড়েন যে ভারতে নতুন নয়, তার উল্লেখ করে অভিজিৎ বলেন, ‘‘অস্বস্তিকর সব পরিসংখ্যানকেই সরকার ভুল বলে থাকে। তা সত্ত্বেও, আমার মনে হয়, কোথাও যে একটা ভুল হচ্ছে, সরকারও সেটা বুঝতে পারছে। অর্থনীতির গতি খুব দ্রুত শ্লথ হচ্ছে। আর সেটা হচ্ছে মূলত ভারতের বাজারে চাহিদার অভাবেই।’’
যদিও বেহাল দশা থেকে কী ভাবে বেরিয়ে আসতে পারে ভারতের অর্থনীতি, সেটা তাঁর ‘জানা নেই’ বলেও কবুল করেন অর্থনীতিতে সদ্য নোবেলজয়ী বঙ্গসন্তান।
রাজনৈতিক ফায়দা লুঠতে প্রকল্প ঘোষণায় লাভ নেই!
তার পরেই বলেন, ‘‘শুনতে ভাল লাগে বা রাজনৈতিক ফায়দা রয়েছে, এমন প্রকল্প ঘোষণার প্রবণতা ভারতের দীর্ঘ দিনের। কিন্তু সরকারের উচিত এমন সব প্রকল্প ঘোষণা করা, যা সত্যি সত্যিই কাজে আসবে। গরিব মানুষের কাজে লাগবে। তাদের হাতে টাকা জোগাবে। শুধুই কার্যকর হচ্ছে বলে মনে হওয়াতে আটকে থাকবে না।’’
ভিডিয়ো সৌজন্যে: ম্যাসাচুসেট্স ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (এমআইটি)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy