Advertisement
E-Paper

‘প্রোটিন-দুনিয়া’ আবিষ্কার, নোবেল-সম্মান ত্রয়ীর

স্টকহোমের ‘রয়্যাল সুইডিশ অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস’-এর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ৮ লক্ষ ১০ হাজার পাউন্ড অর্থপুরস্কার হ্যাসাবিস-জাম্পার জুটি এবং বেকারের মধ্যে ভাগ করেদেওয়া হবে।

ব্রিটেনের ডেমিস হ্যাসাবিসও জন জাম্পার (বাঁ দিকে) এবং আমেরিকার ডেভিড বেকার (ডান দিকে)।

ব্রিটেনের ডেমিস হ্যাসাবিসও জন জাম্পার (বাঁ দিকে) এবং আমেরিকার ডেভিড বেকার (ডান দিকে)। ছবি রয়টার্স।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০২৪ ০৬:০৯
Share
Save

প্রোটিনের গঠন অনুমান ও প্রকৃতিতে অনুপস্থিত এমন সম্পূর্ণ নতুন ধরনের প্রোটিন তৈরি করা— এই অসাধ্য সাধনের পিছনে যাঁরা, সেই তিন বিজ্ঞানীকে এ বছর রসায়নে নোবেল সম্মান দেওয়া হল। তাঁরা হলেন, ব্রিটেনের ডেমিস হ্যাসাবিসও জন জাম্পার এবং আমেরিকার ডেভিড বেকার।

হ্যাসাবিস হলেন গুগলের সহায়ক এআই গবেষণা সংস্থা ‘ডিপমাইন্ড’-এর স্রষ্টা। সংস্থাটির এআই মডেল ‘আলফাফোল্ড’কে নেতৃত্ব দিয়েছেন জন জাম্পার। এই মডেলটির সাহায্যেই প্রোটিনের রাসায়নিক সজ্জার উপর ভিত্তি করে তার গঠন অনুমান করা হয়েছে। নোবেল পুরস্কারের অর্ধেক পাবেন হ্যাসাবিস ও জাম্পার। বাকি অর্ধেক পাচ্ছেন ‘ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটন’-এর অধ্যাপক ডেভিড বেকার। কম্পিউটেশনাল রিসার্চের সাহায্যে তিনি সম্পূর্ণ নতুন ধরনের প্রোটিন তৈরি করেছেন, যা প্রতিষেধক তৈরি, ন্যানোমেটেরিয়াল ও ক্ষুদ্র সেন্সর তৈরিতে কাজে লাগবে। স্টকহোমের ‘রয়্যাল সুইডিশ অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস’-এর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ৮ লক্ষ ১০ হাজার পাউন্ড অর্থপুরস্কার হ্যাসাবিস-জাম্পার জুটি এবং বেকারের মধ্যে ভাগ করেদেওয়া হবে।

জীবনের ভিত, শরীরের যে কোনও ধরনের রাসায়নিক বিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করে প্রোটিন। এটি হরমোন হিসেবে কাজ করে, অ্যান্টিবডি হিসেবে কাজ করে এবং বিভিন্ন কলাকোষের ‘বিল্ডিং ব্লক’ এটি। বেকারের লক্ষ্য ছিল, প্রকৃতিতে অস্তিত্ব নেই, এমন নতুন প্রোটিন তৈরি করা। ২০০৩ সালে তিনি সফল হন। সেই থেকে, তিনি ও তাঁর গবেষক দল বহু উপকারি প্রোটিন তৈরি করেছেন। চিকিৎসা ও বিজ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্রে যার ব্যবহার অনন্য।নোবেল কমিটির রসায়ন বিভাগের প্রধান হেনার লিঙ্ক বলেন, ‘‘একটি আবিষ্কারকে এ বছর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে— অভাবনীয় প্রোটিন গঠন। দ্বিতীয়টি ৫০ বছরের পুরনো স্বপ্নকে পূরণ করেছে: অ্যামিনো অ্যাসিডের সজ্জাক্রম থেকে প্রোটিনের গঠন অনুমান করাহয়েছে। দু’টি আবিষ্কারেরই অনেক সম্ভাবনা রয়েছে।’’

নোবেল কমিটি বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করার পরেই সাংবাদিক বৈঠক করেন বেকার। জানান, নোবেল কমিটির ফোনেই আজ তাঁর ঘুম ভাঙে। প্রায় বিশ বছর আগে তিনি স্বপ্ন দেখেছিলেন, নতুন প্রোটিন তৈরি করবেন। গত দু’দশকে কম্পিউটার ও বিজ্ঞান প্রযুক্তির উন্নতি ও আধুনিকতা তাঁর স্বপ্নকে সত্যি করেছে। তিনি মনে করিয়ে দেন, করোনাভাইরাসের প্রতিষেধকের নকশা তৈরিও এর জন্যই সম্ভব হয়েছে। ডেভিডবলেন, ‘‘গোড়ায় আমরা কল্পনা করেছিলাম, হয়তো নতুন প্রোটিন-দুনিয়া তৈরি করা সম্ভব, যে প্রোটিনগুলি একবিংশ শতকের বহু সমস্যার সমাধান করতে পারবে। এখন জানি, এটা সম্ভব করেছি আমরা।’’

প্রোটিন সাধারণ ২০টি ভিন্ন অ্যামিনো অ্যাসিড দিয়ে তৈরি। এগুলি একটি লম্বা সুতোয় ত্রিমাত্রিক আকারে সাজানো থাকে। এই রাসায়নিক গঠনই স্থির করে কোনও প্রোটিনের প্রতিক্রিয়া কেমন হবে। যেমন ধরো, সেটি কোনও ওষুধে কাজ করবে নাকি (বাইন্ড করবে নাকি)। ১৯৭০-এর দশক থেকে বিজ্ঞানীরা প্রোটিনের ত্রিমাত্রিক গঠন অনুমান করার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু খুবই জটিল, সাফল্য কিছুতেই মিলছিল না। চার বছর আগে, ২০২০ সালে হ্যাসাবিস ও জাম্পার ঘোষণা করেন, তাঁরা ‘আলফাফোল্ড ২’ নামে একটিএআই মডেল তৈরি করেছেন। এর সাহায্যে সমস্ত প্রোটিনের গঠন ভার্চুয়ালি অনুমান করা সম্ভব। ‘আলফাফোল্ড ২’ আবিষ্কারের পর বিশ্বের ১৯০ দেশের ২০ লক্ষের বেশি মানুষ এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্য নিয়েছেন। কখনও অ্যান্টিবায়োটিক রেজ়িজ়ট্যান্স বুঝতে, কখনওউৎসেচক তৈরিতে।

‘রয়্যাল সোসাইটি অব কেমিস্ট্রি’-র প্রেসিডেন্ট অ্যানেট ডোহার্টি বলেন, ‘‘স্বাস্থ্য ও ভাল থাকা— এই দুই ক্ষেত্রে এটি একটি যুগান্তকারী আবিষ্কার।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Protein Scientist Research

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}