(বাঁ দিক থেকে ডান দিকে) অধ্যাপক অ্যালান আসপেক্ট, অধ্যাপক জন ফ্রান্সিস ক্লাউসার, বিজ্ঞানী অ্যান্টন জ়াইলিঙ্গার।
আলবার্ট আইনস্টাইন যাকে বলেছিলেন ‘দূর থেকে ভুতুড়ে কাণ্ড-কারখানা’, তা-ই জিতে নিল ফিজিক্সে এ বারের নোবেল প্রাইজ়। নোবেলজয়ী অস্ট্রিয়ার বিজ্ঞানী আরউইন শ্রয়েডিঙ্গার যাকে বলেছিলেন কোয়ান্টাম মেকানিক্সের একমাত্র বৈশিষ্ট্য, তা-ই জিতে নিল এ বারের নোবেল।
প্রাপক কারা? ক্যালিফর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির অধ্যাপক জন ফ্রান্সিস ক্লাউসার, প্যারিসের ইকোল পলিটেকনিকের প্রফেসর অ্যালান আসপেক্ট এবং ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী অ্যান্টন জ়াইলিঙ্গার। ওঁরা তিন জন সমান ভাবে ভাগ করে নেবেন এক কোটি সুইডিশ ক্রোনরের (প্রায় ১০ লক্ষ ডলারের) পুরস্কার।
সোজা কথায়, ওঁরা কোয়ান্টাম মেকানিক্সের গবেষক। আরও খোলসা করে বলতে গেলে, ওঁরা ‘এন্ট্যাঙ্গলড্ পার্টিক্ল’ (অদ্ভুতুড়ে গাঁটছড়াবদ্ধ কণা) নিয়ে কাজ করেন। কেমন গাঁটছড়া? ধরুন, কোনও ভাবে দু’টো কণার সংঘর্ষ হল। তার পরে যে যার মতো চলে গেল দূরে, বহু দূরে। ব্রহ্মাণ্ডের একেবারে দুই প্রান্তে। তখনও ওই দুই কণা কাজ করবে একটি পিণ্ড হিসেবে। মানে, একটির ধর্ম যা হবে, অন্যটির ধর্ম হবে ঠিক উল্টো। একটার ধর্ম মেপে, অন্যটার ধর্ম না-মেপেও বলা যাবে অন্যটার ধর্ম কী হবে।
এটাকেই আইনস্টাইন বলেছিলেন, ‘দূর থেকে ভুতুড়ে কাণ্ড-কারখানা’। ১৯৩৫ সালে, তিনি যখন আমেরিকায় প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব অ্যাডভান্সড স্টাডিতে গবেষণা করছেন, তখন বরিস পোদোলস্কি এবং নাথান রোজ়েনের সঙ্গে এক পেপার লেখেন ফিজ়িক্যাল রিভিউ জার্নালে। শ্রয়েডিঙ্গার, আইনস্টাইনের মতো যিনি কোয়ান্টাম মেকানিক্সের বিরোধী ছিলেন, তিনি বলেছিলেন, এই এনট্যাঙ্গলমেন্টই কোয়ান্টামকে আমাদের পরিচিত জগতের থেকে আলাদা করে দেয়।
এখন, কোনও কণার ধর্ম মাপার আগে ঠিক হয় না। মানে, ধর্ম হতে পারে একটার বদলে অনেক রকম। একটা কণার ধর্ম যে-ই মাপা গেল, তেমনি সেটা ঠিক হল। এন্ট্যাঙ্গলমেন্টের অর্থ এই যে, এন্টাঙ্গলড কণার একটার ধর্ম মাপলে, অন্যটার ধর্ম ঠিক হয়। এমনও হতে পারে যে, একটা কণার ধর্ম আগে থেকে ঠিক ছিল, এবং অন্যটার ধর্মও আগে থেকেই ঠিক ছিল। শুধু মাপার অপেক্ষা। এই যে, একটার এবং অন্যটার ধর্ম আগে থেকেই ঠিক হয়ে আছে— এটাকে বলে হিডন ভ্যারিয়েবল্ থিয়োরি।
কোয়ান্টাম মেকানিক্স, নাকি হিডন ভ্যারিয়েবল্— কোনটা ঠিক? এর পরে কোয়ান্টামের বড় গবেষক জন স্টুয়ার্ট বেল। ১৯৬০-এর দশকে তিনি যখন জেনিভার কাছে সার্ন ল্যাবরেটরিতে গবেষণা করছেন, তিনি উদ্ভাবন করলেন এক ইনইকুয়ালিটি বা অসাম্য। বেল-এর তত্ত্ব অনুযায়ী, হিডন ভ্যারিয়েবল্ থিয়োরি সত্যি হলে, একটা কণা আর অন্য কণার মধ্যে সম্পর্ক সব সময় একটা মানের কম হবে। আর, কোয়ান্টাম মেকানিক্স সত্যি হলে, সেই মানের বেশি হবে। দেখা গিয়েছে, সম্পর্ক সেই মানের থেকে বেশি। অর্থাৎ, কোয়ান্টাম মেকানিক্সই সত্যি। ১৯৭২ সাল। ক্লাউসার তখন ৩০ বছর বয়সি এক গবেষক। তিনিই প্রথম বেল-এর অসাম্য— অর্থাৎ, কোয়ান্টাম মেকানিক্স সত্যি— প্রমাণ করলেন। এর পরে ১৯৮২। ক্লাউসারের পরীক্ষায় কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি রয়ে গিয়েছিল। সেগুলি দূর করেন আসপেক্ট। তিনি দেখেন, অদ্ভুতুড়ে হলেও কোয়ান্টাম মেকানিক্সই সত্যি। ১৯৯৮ সাল। জ়াইলিঙ্গার এক কণার কোয়ান্টাম ধর্ম দূরে অন্য এক কণার মধ্যে আরোপ করেন। কোয়ান্টাম টেলিপোর্টেশন।
নোবেল ফিজ়িক্স কমিটির চেয়ারম্যান অ্যান্ডার্স আরব্যাক যে প্রেস কনফারেন্সে ওই তিন জনের পুরস্কার জয়ের কথা ঘোষণা করেন, সেখানে তিনি বলেন, কোয়ান্টাম মেকানিক্স অদ্ভুতুড়ে হলেও এখন বাস্তব-প্রয়োগের অনেক কিছু দেখাচ্ছে। কোয়ান্টাম মেকানিক্স এখন পুরোদস্তুর টেকনোলজি।
হায় আইনস্টাইন!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy