Advertisement
E-Paper

‘কত রাগ, অভিমানে কেউ বলতে পারে আমি রাজাকার’

সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিয়োর পোস্টের নীচে নবীনাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকা বলে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। বাংলাদেশের শিক্ষকদের এমন অজস্র ভিডিয়ো ঘুরপাক খাচ্ছে।

কার্ফু চলছে। রাস্তায় নেমেছে সাঁজোয়া গাড়ি। ঢাকায় রামপুরা এলাকায় টহল দিচ্ছে সেনাবাহিনী। বাড়ি থেকে বেরোতে নিষেধ করা হচ্ছে বাসিন্দাদের। শনিবার।

কার্ফু চলছে। রাস্তায় নেমেছে সাঁজোয়া গাড়ি। ঢাকায় রামপুরা এলাকায় টহল দিচ্ছে সেনাবাহিনী। বাড়ি থেকে বেরোতে নিষেধ করা হচ্ছে বাসিন্দাদের। শনিবার। ছবি: রয়টার্স।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২১ জুলাই ২০২৪ ০৫:০৯
Share
Save

বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার রঙের শাড়ি পরা নবীন শিক্ষিকাই মাইক হাতে বোঝাচ্ছেন, ছাত্রদের অধিকারের লড়াইকে ‘রাজাকার’ তকমা দিয়ে নস্যাৎ করার রাজনীতি। তিনি দৃপ্ত স্বরে বলে চলেছেন, “বার বার এইটাই হয়। কোনও কিছু চাওয়া যাবে না। কোনও কিছু আবদার করা যাবে না। সব কিছু আবার চলে যাবে, আপনি কি রাজাকার! কতখানি রাগ, অভিমান হলে কেউ বলতে পারে আমি রাজাকার…!” ব্যাখ্যা করছেন, কী ভাবে ইচ্ছাকৃত ভাবে যে কোনও প্রতিবাদকে রাজাকার তথা দেশবিরোধী আখ্যা দিয়ে বিভাজন, মেরুকরণ সৃষ্টি চলছে। আবেগে তাঁর হাত থরথর করে কাঁপছে।

সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিয়োর পোস্টের নীচে নবীনাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকা বলে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। বাংলাদেশের শিক্ষকদের এমন অজস্র ভিডিয়ো ঘুরপাক খাচ্ছে। যেখানে শিক্ষকেরা ছাত্রদের নিরাপত্তার জন্য আশঙ্কা প্রকাশ করছেন।

এক তরুণের মৃত্যুর আগের দৃশ্য বলে অভিহিত ভিডিয়োতেও একই আর্তি। দোহারা যুবা বলছেন, ‘‘আমরা কি রাজাকার সবাই! আমরা কেউ রাজাকার না! আমাদের কেন রাজাকার বলসে? আমার শরীরের বাম পাশ পুরো অবশ হয়ে আসে। নাড়াচাড়া করতে পারতেসি না!”

দু’দিন ধরে নেট বা ফোন সংযোগের দুনিয়া থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন বাংলাদেশ এখন এমন কিছু টুকরো টুকরো দৃশ্য বা ছবির কোলাজ। কিংবা কয়েকটি হ্যাশট্যাগের চিহ্ন। যা বলছে, #সেভবাংলাদেশিস্টুডেন্টস বা #স্টারলিংকফরবাংলাদেশ! সেই সব ছবি বা চিহ্নের মোড়কে কিন্তু শুধুই বিশৃঙ্খলা নয়, সহমর্মিতারও চিহ্ন। আন্দোলনরত ছাত্রদের দিকে কখনও সাধারণ মানুষ, রাস্তার দোকানদার জলের বোতল এগিয়ে দিচ্ছেন। আবার দেখা যাচ্ছে, আইনজীবীরা কিংবা ঢাকার সুদৃশ্য রিকশার চালক, বিখ্যাত ‘রিকশাওয়ালা মামা’রাও ছাত্রদের ভালবেসে পথে নেমেছেন। একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদেশি উপাচার্যকেও ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে ঘাড় সোজা করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে। পরিচয়হীন এক জন যুবক একটি ভিডিয়োয় বলছেন, “কেমনে মানুষের সামনে মানুষকে মারা হয়। আমি তো আন্দোলনে নাই। আমি তো চাকরিতে যাচ্ছিলাম। আমায় কেন এ সব সহ্য করতে হচ্ছে। আমি তো কোনও দল করি না। আমারে কেন এই সব দেখতে হচ্ছে!”

আবার ঢাকায় পুলিশের গাড়ি থেকে নিথর দেহ রাস্তায় ঠেলে ফেলার দৃশ্যও রয়েছে। তেমনই চট্টগ্রামে সেনার গাড়ির সামনে প্রতিবাদীদের ভিড়ের ছবি। ঢাকার সপ্রতিভ ছাত্রী, ক্যামেরার সামনে সপাটে বলছেন, ‘‘বাবাকে বলে আসছি, আজকে যদি মরে যাই আমার লাশটা যেন রাস্তা থেকে না তুলে ওখানেই ফেলে রাখেন!’’ কুমিল্লায় কঠিন মুখ হেলমেটধারী বিজিবি জওয়ানের পাহারায় হেঁটে যেতে যেতে বন্দি যুবক চিৎকার করছেন, ‘‘আমার ভাইয়ের রক্ত, আমার বোনের রক্ত বৃথা হতে দেব না!’’

প্রতিবাদী স্লোগানে মুখর এই বাংলাদেশের সঙ্গে আবার মিলে যাচ্ছে মলদ্বীপ, কাতার বা অস্ট্রেলিয়াও। ব্রিসবেনের একটি ভিডিয়োয় প্রতিবাদীরা স্লোগান দিচ্ছেন, মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশে বৈষম্য চলবে না। সারা দুনিয়া থেকে প্রবাসী বাংলাদেশিদের উদ্বেগ ভরা মন্তব্য আছড়ে পড়ছে ফেসবুকে বাংলাদেশের কোটা-আন্দোলন বিরোধী গ্রুপগুলিতে। সৌদি
আরবের প্রবাসী বাংলাদেশি তাঁর মায়ের শেষ সময়ে দেশের কোনও খবরই পাচ্ছেন না বলে উদ্বেগে। দেশবিদেশের নানা সংবাদমাধ্যম এমনকি ধ্রুব রাঠির দৃষ্টি আকর্ষণ করে পোস্টের পরে পোস্ট। ভালবাসার বাংলাদেশের ব্যথার উপশমের অপেক্ষায় সারা দুনিয়া।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Bangladesh Protest Bangladesh Social Media

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}