ছবি রয়টার্স।
তালিবান শীর্ষ নেতারা প্রায় সকলেই চলে এসেছেন কাবুলে। দিনভর জল্পনা ছিল, শুক্রবারের প্রার্থনার পরেই আফগানিস্তানে নতুন সরকার গঠন করবে তালিবান। শেষ পর্যন্ত তালিবান মুখপাত্র জ়বিউল্লা মুজাহিদ জানালেন, গোটা বিষয়টি এক দিন পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। সরকার গঠন সংক্রান্ত ঘোষণা হবে শনিবার।
সূত্রের দাবি, তালিবানের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা, তথা দোহায় তাদের রাজনৈতিক দফতরের চেয়ারম্যান আব্দুল গনি বরাদরই সম্ভবত তালিবান পরিচালিত সরকারের শীর্ষ পদে বসবেন। এখনও পর্যন্ত যা ইঙ্গিত, ইরানের আদলেই সরকারের কাঠামো গড়বে তালিবান। অর্থাৎ, দেশের এক জন সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা থাকবেন। প্রেসিডেন্ট বা প্রধানমন্ত্রীর চেয়েও উঁচু এই পদটিতে তালিবানের প্রধান ধর্মীয় নেতা হিবাতুল্লা আখুন্দজ়াদাকে বসানো হতে পারে বলে শোনা যাচ্ছিল। আজ তালিবানের তথ্য ও সংস্কৃতি কমিশনের কর্তা ইনামুল্লা সামাঙ্গানি বলেছেন, ‘‘এ বিষয়ে কোনও প্রশ্নই নেই যে, মোল্লা আখুন্দজ়াদাই সরকারের নেতা হবেন।’’ ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আলি খামেনেই সে দেশের ধর্মীয় ও রাজনৈতিক বিষয়ে শেষ কথা বলেন। সরকার, সেনা এবং বিচার বিভাগের শীর্ষ পদে নিয়োগ হয় তাঁরই নির্দেশে। বালুচিস্তান থেকে আফগানিস্তানে এসে আখুন্দজ়াদা তেমনই চূড়ান্ত ক্ষমতা পেতে চলেছেন বলে মনে করা হচ্ছে।
সামাঙ্গানি জানান, নতুন সরকার ও মন্ত্রিসভা নিয়ে আলোচনা প্রায় চূড়ান্ত। গভর্নরেরা থাকবেন প্রদেশের দায়িত্বে, জেলার দায়িত্বে জেলা-গভর্নরেরা। গভর্নর ও পুলিশ-প্রধানের পদগুলিতে নতুন নিয়োগ ইতিমধ্যেই শুরু করে দিয়েছে তালিবান। তবে জাতীয় পতাকা ও জাতীয় সঙ্গীত চূড়ান্ত হওয়া এখনও বাকি। নতুন সরকার গঠিত হলে তালিবানের আর এক প্রতিষ্ঠাতা, প্রয়াত মোল্লা ওমরের ছেলে মহম্মদ ইয়াকুব এবং তালিবানের অন্যতম রাজনৈতিক শীর্ষ নেতা শের মহম্মদ আব্বাস স্তানিকজ়াই গুরুত্বপূর্ণ পদ পাবেন বলেই খবর। স্তানিকজ়াইয়ের নাম শোনা যাচ্ছে সম্ভাব্য বিদেশমন্ত্রী হিসেবে। কার্যনির্বাহী উচ্চশিক্ষা মন্ত্রী হিসেবে আগেই নিয়োগ করা হয়েছে আব্দুল বাকি হক্কানিকে, যিনি ঘোষণা করেছেন, ছেলে ও মেয়েদের একই শ্রেণিকক্ষে বসে পড়াশোনা চলবে না। পুরুষেরা ছাত্রীদের পড়াতেও পারবেন না।
কাজ শুরু করে দিয়েছে তালিবানের তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রকও। কাবুলের বিভিন্ন রাস্তায় তারা হোর্ডিং বসিয়েছে। কোনওটিতে লেখা, ‘দাসত্বের শেষ, স্বাধীনতার শুরু’। কোনওটিতে আবার ‘স্বাধীন জীবনের’ জন্য আমজনতাকে অভিনন্দন জানিয়ে দেশ গড়ার বার্তা দেওয়া হয়েছে। আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক চাপের মুখে তালিবান জানিয়েছিল, তাদের সরকারে সমাজের সমস্ত অংশেরই প্রতিনিধিত্ব থাকবে। তবে সূত্রের দাবি, আপাতত একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হবে, যেখানে শুধুমাত্র তালিবান সদস্যদেরই থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। অন্তত ২৫টি মন্ত্রকের পাশাপাশি ১২ জন বিশিষ্ট সদস্যকে নিয়ে ‘শুরা’ বা পরামর্শদাতা পরিষদ গঠন করা হতে পারে। এর পরে আগামী ছয় থেকে আট মাসের মধ্যে বিভিন্ন স্তরের নেতৃত্বকে নিয়ে একটি অধিবেশন ডেকে চূড়ান্ত করা হতে পারে ভবিষ্যৎ সংবিধান ও সরকারের কাঠামো। তবে তার আগে তালিবানের বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে, বিশেষত সামরিক ও রাজনৈতিক শাখার অন্তর্দ্বন্দ্ব সামাল দেওয়া শীর্ষ নেতৃত্বের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ। এ দিন খাস কাবুলে, অর্থ মন্ত্রকের সামনের রাজপথে প্ল্যাকার্ড হাতে বিক্ষোভ দেখিয়েছে সমাজকর্মী মহিলাদের একটি দল। তাঁদের দাবি, নতুন সরকারের অন্তর্ভুক্ত করা হোক মেয়েদেরও। চালু থাকুক সাংবিধানিক আইন।
সরকার গঠনের তোড়জোড় চলাকালীনই তালিবান আজ দাবি করেছে, পঞ্জশির এখন তাদের নিয়ন্ত্রণে। তালিবানের এক কমান্ডারের দাবি, ‘‘গোটা আফগানিস্তান এখন আমাদের দখলে। যে পঞ্জিশির আমােদর মাথাব্যথার কারণ ছিল, সেই পঞ্জিশির আমরা দখল করেছি।’’ প্রাক্তন ভাইস প্রেসিডেন্ট আমরুল্লা সালে নিজের বাহিনীর কয়েক জন কমান্ডারকে নিয়ে গত কাল পঞ্জশির ছেড়ে পালিয়ে তাজিকিস্তানে আশ্রয় নিয়েছেন বলে দাবি করেছে তালিবান। সালে অবশ্য সেই দাবি উড়িয়ে দিয়ে একটি ভারতীয় চ্যানেলকে বলেছেন, ‘‘এখন পঞ্জশির উপত্যকায় আমার ঘাঁটি থেকেই কথা বলছি। আমার কমান্ডার ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের সঙ্গে এখানকার পরিস্থিতি সামলাচ্ছি। বর্তমান অবস্থা অবশ্যই কঠিন। তালিবান, পাকিস্তানিরা, আল কায়দা এবং অন্যান্য জঙ্গি গোষ্ঠী এখানে অনুপ্রবেশ করছে। আমরা জমি ছাড়িনি। আমাদের প্রতিরোধ জারি রয়েছে। তালিবান কোনও গুরুত্বপূর্ণ ফায়দা তুলতে পারেনি। দু’পক্ষেই হতাহত হয়েছে।’’ প্রাক্তন আফগান প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজ়াইয়ের আর্জি, সংঘর্ষের বদলে আলোচনার টেবিলেই পঞ্জশিরের বিরোধ মিটিয়ে নিক উভয় পক্ষ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy