—প্রতীকী চিত্র।
গর্ভপাতের অধিকার মেয়েদের হাতেই থাকুক, দেখিয়ে দিচ্ছে আমেরিকার প্রাদেশিক নির্বাচনের ফল।
গত ৭ নভেম্বর আমেরিকার বেশ কয়েকটি প্রদেশে নির্বাচন ছিল। বিভিন্ন ডিস্ট্রিক্টের সুপারভাইজ়র, কমিশনার, স্টেট কাউন্সিল মেম্বার ইত্যাদি পদে ভোটাভুটি হয়। এই নির্বাচনে একই সঙ্গে ভোটাভুটি হয় বেশ কিছু ‘বিষয়’ নিয়েও। অর্থাৎ, কোনও একটি বিষয় নিয়ে সেই প্রদেশের ভোটারদের কাছ থেকে তাঁদের মতামত জানতে চাওয়া হয়। কোনও প্রাদেশিক আইন প্রণয়নের আগে সেখানকার মানুষের মত জানতেই এই পদক্ষেপ।
এ বার নির্বাচনে এমনই এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল গর্ভপাতের অধিকার। ১৯৭১ সালে ‘রো ভার্সেস ওয়েড’ মামলার রায়ের মাধ্যমে আমেরিকায় গর্ভপাতকে আইনি স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্ত গত বছর ২৪ জুন সুপ্রিম কোর্ট সেই রায়ের বিপরীতে গিয়ে জানায়, এ বার থেকে গর্ভপাতের আইন নির্ধারণ করবে প্রদেশগুলি। উত্তরের নর্থ ডাকোটা থেকে দক্ষিণের টেক্সাস, পূর্বের ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া থেকে পশ্চিমের আইডাহো, অনেক প্রদেশই গর্ভপাত নিষিদ্ধ করে দেয়। কিন্তু দেখা গেল, এই সিদ্ধান্ত আইনে পরিণত হবে কি না সেটা যখন ব্যালটে এসেছে, মানুষ মহিলাদের হাতেই এই অধিকার রাখতে চেয়েছেন।
বিশেষ ভাবে উল্লেখ্য ওহায়ো, কেন্টাকি এবং ভার্জিনিয়ার নির্বাচনের ফল। কেন্টাকি রিপাবলিকানদের ও ভার্জিনিয়া ডেমোক্র্যাটদের দখলে এবং ওহায়োর গভর্নর রিপাবলিকান হলেও এই প্রদেশে দু’দলের সমানে সমানে টক্কর হয়। রাজনৈতিক মতপার্থক্য থাকলেও কিন্তু গর্ভপাতের অধিকারের প্রশ্নে ভোটদাতারা ঐকমত্য দেখিয়েছেন। এবং তা সম্ভব হয়েছে এই সব প্রদেশে লড়াই চালানো নারীর অধিকার কর্মীদের জন্য।
‘ব্যাটলগ্রাউন্ড স্টেট’ ওহায়ো ও ভার্জিনিয়ায় প্রত্যেক নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকানদের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়। ওহায়ো রক্ষনশীল ঘেঁষা প্রদেশ। এই নির্বাচনে ব্যালটে প্রশ্ন এসেছিল, ওহায়োয় গর্ভপাতের অধিকার সাংবিধানিক কি না। ৫৬ শতাংশ ভোট পেয়ে তা সাংবিধানিক ঘোষিত হয়েছে। ওহায়োর গভর্নর ও প্রাদেশিক অ্যাসেম্বলি
এখন রিপাবলিকান। এই প্রদেশে ব্যালটে এই বিষয়টি আনাই ছিল বহু সংগ্রামের। অগস্টে ওহায়োয় ছ’সপ্তাহ পরে গর্ভপাত নিষিদ্ধকরণের প্রস্তাব আনা হয়েছিল। সেটাকে সম্পূর্ণ খারিজ করে দিয়েছে এই ভোট। যা প্রমাণ করে দিচ্ছে, জনগণ, বিশেষত মেয়েরা, তাদের মৌলিক অধিকারে হস্তক্ষেপ করা বা তাদের সিদ্ধান্ত রাজনীতির হাতে তুলে দিতে চায় না।
ভার্জিনিয়ার ব্যালটে সরাসরি মহিলাদের গর্ভপাতের অধিকার নিয়ে প্রশ্ন না থাকলেও রিপাবলিকান গভর্নর গ্লেন ইয়ংকেন প্রস্তাব এনেছিলেন যে, এই প্রদেশে ১৫ সপ্তাহ হয়ে গেলে গর্ভপাত নিষিদ্ধ করা হবে। কিন্তু এই নির্বাচনে ভার্জিনিয়া রাজ্যের দু’টি কক্ষেই ডেমোক্র্যাটেরা জেতাতে এই প্রস্তাব গৃহীত হবে না বলেই মনে হয়।
কেন্টাকি আইনসভার দু’টি কক্ষই রিপাবলিকানদের দখলে। কিন্তু ৭ নভেম্বরের নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী অ্যাটর্নি জেনারেল ড্যানিয়েল ক্যামেরনকে হারিয়ে পুনর্নিবাচিত হয়েছেন ডেমোক্র্যাট গভর্নর অ্যান্ডি বেসার। ক্যামেরনের নির্বাচনী প্রচারের অন্যতম বিষয় ছিল, অত্যন্ত কঠোর গর্ভপাত আইন নিয়ে আসা। এর পাল্টা হিসেবে গভর্নর বেসারের প্রচারের সময়ে তুলে এনেছিলেন ধর্ষিতা নাবালিকা ও সামাজিক ভাবে প্রান্তিক মেয়েদের গর্ভপাতের প্রয়োজনীয়তার কথা। ক্যামেরনের পরাজয় বলে দিচ্ছে, ভোটদাতারা বেসারের মতবাদকেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন।
এই নির্বাচনের ফল দেখিয়ে দিচ্ছে যে, মহিলাদের এই মৌলিক অধিকারের বিষয়টি আমেরিকার নির্বাচনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ নির্ধারক হিসেবে কাজ করবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy