Advertisement
০৪ নভেম্বর ২০২৪
R G Kar Hospital Incident

চুপ থাকলে ভারতের গরিমা কি বৃদ্ধি পাবে

পিছিয়ে নেই অপেক্ষাকৃত ছোট শহরগুলিও। যেমন জার্মানির উত্তর-পশ্চিমের হ্যানোভারে বুধবার সন্ধ্যায় গান্ধীমূর্তির পাদদেশে জমায়েত করেন জনা ত্রিশেক প্রবাসী বাঙালি।

আর জি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে গান্ধীমূর্তির পদদেশে জমায়েত প্রবাসী বাঙালিদের। জার্মানির হ্যানোভারে।

আর জি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে গান্ধীমূর্তির পদদেশে জমায়েত প্রবাসী বাঙালিদের। জার্মানির হ্যানোভারে।

রক্তিম হালদার, ঐশ্বর্যা পাল বাগ
বার্লিন শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০২৪ ০৯:০০
Share: Save:

যে দেশের মানুষ অদম্য মানসিকতার জোরে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের গ্লানি থেকে বেরিয়ে এসে প্রত্যক্ষ করেছেন বার্লিন প্রাচীরের পতন এবং পূর্ব ও পশ্চিমের মেলবন্ধন, সেই দেশের মাটিতে আর জি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে, নারীসুরক্ষার দাবিতে, এবং একজন কর্তব্যরত চিকিৎসকের খুন ও ধর্ষণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সরব হয়ে নিয়মিত পথে নামছেন শয়ে শয়ে প্রবাসী বাঙালি-সহ ভারতবাসীরা। তবে আইন মেনে ও শান্তিপূর্ণ ভাবে, প্রশাসনের যথাযথ অনুমতি নিয়ে।

পূর্বে বার্লিন থেকে উত্তরের হামবুর্গ, পশ্চিমে কোলন, ডুসেলডর্ফ থেকে দক্ষিণে ফ্রাঙ্কফুর্ট— সর্বত্রই এক ছবি। গত সপ্তাহান্তে, সমবেত কণ্ঠে প্রতিবাদের ভাষা ধ্বনিত হয়েছে হামবুর্গের ইয়াংফেয়ার্নর্স্টেইগে, শতাব্দীপ্রাচীন কোলন ক্যাথিড্রােলও। কারও হাতে ছিল মোমবাতি, কেউ বা ধরে ছিলেন প্ল্যাকার্ড, পোস্টার বা ফুলের তোড়া। প্রতিবাদের ভাষা কখনও বাংলা, ইংরেজি বা জার্মান, কখনও শুধুই চিত্র বা কার্টুন। স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে যোগদান করেন স্থানীয়েরাও। মোমবাতি মিছিলে পা মিলিয়েছেন, গান গেয়েছেন, প্রতিবাদী সুরে মুখরিত করেছেন আকাশ-বাতাস সবাই।

পিছিয়ে নেই অপেক্ষাকৃত ছোট শহরগুলিও। যেমন জার্মানির উত্তর-পশ্চিমের হ্যানোভারে বুধবার সন্ধ্যায় গান্ধীমূর্তির পাদদেশে জমায়েত করেন জনা ত্রিশেক প্রবাসী বাঙালি। একই রকম প্রতিবাদের সুর দেখা গিয়েছে মিউনিখ, স্টুটগার্ড বা এরল্যাঙ্গেনে। এ ছাড়া ব্রেমেন, এসেন, বন, সিগবার্গ, ড্যুয়িসবার্গের প্রবাসীরা গিয়ে যোগদান করেন অপেক্ষাকৃত বড় শহরগুলিতে।

অন্তত ৩ লক্ষ ভারতীয় পড়াশোনা, গবেষণা বা অন্য কর্মসূত্রে জার্মানিতে রয়েছেন। অতএব এই দেশে ভারতীয় পুজোপার্বণ যেমন পালন করা হয়, তেমনই দেশে কোনও অন্যায় হলে তার প্রতিবাদেও যে আমরা সরব হব, সেটাই অভিপ্রেত এবং কাম্য। কিন্তু জার্মানরা নিয়মাকানুনের শৃঙ্খলে নিজেদের বেঁধে রাখতে ভালবাসে। তাই আজ চাইলে কাল কোনও সমাবেশ করা যাবে না। প্রশাসনের বেশ কিছু স্তরের অনুমতি নিতে কমপক্ষে ৪৮ ঘণ্টা সময় লাগে। তবে অনুমতি পে।ে গেলে আন্দোলনকারীদের সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব নেয় এখানকার পুলিশ-প্রশাসন। আর জি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে জমায়েত-সমাবেশে তাই প্রতিটি শহরেই প্রশাসনের কাছে অনুমতি চাওয়া হয়েছে, এবং সেই কাজটা সম্পন্ন করেছেন কোনও না কোনও দুর্গাপুজো কমিটির সদস্যরা।

জার্মানির এই কঠোর আইনকানুন মেয়েদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। কিছু ব্যতিক্রমী ঘটনা বাদ দিলে নারীরা এখানে সত্যিই সুরক্ষিত ও স্বাধীনচেতা! ইচ্ছামতো পোশাক পরে যে কোনও জায়গায় তাঁরা নির্দ্বিধায় যাতায়াত করতে পারেন। কাজ সেরে গভীর রাত্রে নিশ্চিন্তে বাড়ি ফেরেন। ‘খিড়কি থেকে সিংহদুয়ার’-এ তাঁদের জগৎ আবদ্ধ নয়। এতটা নিরাপত্তা শুধুমাত্র আইন পাশ করে সম্ভব নয়। সঙ্গে আছে মানসিকতায় প্রভেদও। এই একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়েও মানুষের মানসিক গঠনের পরিবর্তন হওয়া খুব দরকার, সঙ্গে প্রয়োজন যৌনশিক্ষা এবং শৈশব থেকেই নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশার মাধ্যমে একে অপরের প্রতি সহমর্মিতা গড়ে তোলার পাঠ।

প্রশ্ন উঠছে, প্রবাসে এ-হেন প্রতীকী আন্দোলনের কার্যকারিতা কতখানি? এতে বিশ্বের দরবারে ভারতের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে না তো?

নারীসুরক্ষার নিরিখে ভারতের ভাবমূর্তি জার্মানি-সহ গোটা বিশ্বের কাছে আদপেই উজ্জ্বল নয়। কোনও অপরাধের ঘটনা দেখে এখানকার কোনও বন্ধু যখন জিজ্ঞাসা করেন, তাঁদের জন্য ভারতভ্রমণ কতটা নিরাপদ, তখন মাথা হেঁট হয়। এই অবস্থায় চুপ থাকলে ভারতের গরিমা মোটেও বৃদ্ধি পাবে না। বরং আমরা মনে করি, দেশ-বিদেশে এই ঘটনা নিয়ে নিরবচ্ছিন্ন আলোচনা হয়তো সরকারকে চাপে রাখতে পারবে। পারবে, ন্যায়ের পথ সুনিশ্চিত করতে। আমাদের বিশ্বাস, বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সকল বাঙালি তথা সমগ্র ভারতবাসীর এই ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনই পারবে সমাজকে দিশা দেখাতে।

অন্য বিষয়গুলি:

Berlin R G Kar Hospital Germany
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE