বিক্ষোভ-সমাবেশে হামাসের হাতে বন্দি ইজ়রায়েলিদের পরিবার। জেরুসালেমে। ছবি: রয়টার্স।
বাইডেনের প্রস্তাবিত তিন দফা যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবের প্রথম দফা মেনে নিয়েছে ইজ়রায়েল সরকার। সোমবার ইজ়রায়েলের মুখ্য বিদেশনীতি উপদেষ্টা ওফির ফক বিষয়টি নিশ্চিত ভাবে জানিয়েছেন। তবে এখনও নেতানিয়াহু সরকারের দাবি, তাঁদের জন্য সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল ‘হামাসকে ধ্বংস করা’। এরই মাঝে হামলা অব্যাহত গাজ়ায়। সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর, গত ২৪ ঘণ্টায় গাজ়ার একাধিক জায়গায় ইজ়রায়েলি হামলায় অন্তত ৪০ জন নিহত হয়েছেন। এখনও পর্যন্ত জোর করে রাফা থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে অন্তত ১০ লক্ষ মানুষকে।
গত কয়েক মাসে ইজ়রায়েলকে বহু বার যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তবে কোনও বারই তা মানেনি নেতানিয়াহুর সরকার। এ বার অবশ্য ইজ়রায়েলি সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, বাইডেনের প্রস্তাবিত সাময়িক যুদ্ধবিরতির তিন দফার প্রথম দফাটি মেনে নিয়েছে নেতানিয়াহু সরকার। তবে তাদের দাবি, যত ক্ষণ না হামাস ইজ়রায়েলের ‘সব দাবি মেনে নিচ্ছে’, তত ক্ষণ পুরোপুরি এই যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব মানছে না ইজ়রায়েল।
এই পর থেকেই অবশ্য সরকার ভেঙে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন দেশের জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন-গভির ও অর্থমন্ত্রী বেজ়ালেল স্মটরিচ। অতি কট্টরপন্থী বলে পরিচিত এই দুই মন্ত্রী স্পষ্ট জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে তাঁরা যুদ্ধবিরতি মেনে নিচ্ছেন না। সমাজমাধ্যমে একটি বিবৃতি দিয়ে স্মটরিচ আরও বলেছেন, ‘যে সরকার এই (যুদ্ধবিরতির) প্রস্তাবে সহমত হবে ও হামাসের সব বন্দি ফেরানোর আগেই যুদ্ধবিরতিতে রাজি হবে’, সেই সরকারের অংশ তিনি হবেন না। বেন-গভির আবার জানিয়েছেন, এই ‘চুক্তি’ আসলে হল ‘সন্ত্রাসের জয়’ ও আগামী দিনে ইজ়রায়েলের ক্ষতি ডেকে আনতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পরিস্থিতি স্বাভাবিক ভাবেই চাপে ফেলেছে নেতানিয়াহুকে। তবে এখনও স্পষ্ট ভাবে জানানো হয়নি, বাইডেনের প্রস্তাবের ঠিক কতটা মেনে
নিচ্ছেন নেতানিয়াহু।
যুদ্ধবিরতি নিয়ে যখন নানা মত, তখনও অবশ্য গাজ়ার উপরে ক্রমাগত হামলা চলছে। গত ২৪ ঘণ্টায় গাজ়ার একাধিক এলাকায় ইজ়রায়েলি হানায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৪০ জন। গত বছর ৭ অক্টোবর গাজ়ায় ইজ়রায়েলি হামলা শুরুর দিন থেকে আজ পর্যন্ত এই নিয়ে নিহত হয়েছেন অন্তত সাড়ে ৩৬ হাজার মানুষ। ইজ়রায়েলে জঙ্গি গোষ্ঠী হামাসের হামলায় নিহত হয়েছেন অন্তত ১ হাজার ১৩৯ জন।
যদিও আজ রাতেই ইজ়রায়েলের সেনাবাহিনী দাবি করেছে, গত ৭ অক্টোবর থেকে হামাসের হাতে বন্দি থাকা ইজ়রায়েলিদের মধ্যে আরও চার জনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন সেই তিন বয়স্ক ব্যক্তি যাঁদের ভিডিয়ো সম্প্রতি প্রকাশ্যে এসেছিল এবং যেখানে প্রাণে বাঁচার কাতর আকুতি করতে দেখা গিয়েছিল ওই তিন জনকে। হামাসই কিছু দিন আগে ভিডিয়োটি প্রকাশ করেছিল। এখনও গাজ়ায় হামাসের হাতে আরও অন্তত ৮০ জন ইজ়রায়েলি বন্দি হয়ে রয়েছেন বলে জানা যাচ্ছে। এঁদের সকলকে হামাসের হাতেই নিহত ৪৩ জন বন্দির দেহাংশের পাশে জোর করে আটকে রাখা হয়েছে বলেও অভিযোগ। বাকি বন্দিদের হামাসের হাত থেকে দ্রুত মুক্ত করতে নেতানিয়াহু সরকারের কাছে বারবার আর্জি জানাচ্ছে বন্দিদের পরিবার। হচ্ছে বিক্ষোভ-সমাবেশও।
এর মধ্যেই ক্রমাগত ইজ়রায়েলি হামলা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে হামাস পরিচালিত গাজ়ার সরকার জানিয়েছে, মানবিক সহায়তা পাঠানো পরিষেবার উপরে এই ভাবে হামলা চলতে থাকলে আগামী দিনে মৃত্যু হতে পারে অন্তত সাড়ে তিন হাজার শিশুর। রাষ্ট্রপুঞ্জের প্যালেস্টাইনি শরণার্থী বিষয়ক দফতর সোমবার উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যে, বার বার হামলা চালানোর পাশাপাশি প্রায় ১০ লক্ষ মানুষকে জোর করে রাফা ছাড়তে বাধ্য করেছে ইজ়রায়েলি সেনা। তবে যে ভাবে তথাকথিত ‘নিরাপদ’ জায়গাগুলিতেও হামলা চালিয়েছে ইজ়রায়েল, তাতে নানা মহলের প্রশ্ন, গাজ়াবাসীরা কি আদৌ কোথাও নিরাপদ?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy