—প্রতীকী চিত্র।
মনুষ্যযুগ বা অ্যান্থ্রোপসিন। মধ্য বিংশ শতকেই পৃথিবী পা রেখেছে এই যুগে। এই গ্রহ জুড়ে ‘রাজত্ব’ করছে মানুষ। এমনই দাবি করছেন একদল বিজ্ঞানী। তাঁদের ব্যাখ্যা, পৃথিবীর (প্রায়) এমন কোনও জায়গা নেই, যেখানে মানুষের পা পড়েনি। বায়ুমণ্ডলে শ্বাসরুদ্ধ করা গ্রিনহাউস গ্যাস, মাইক্রোপ্লাস্টিকের বাড়বাড়ন্ত, ক্ষতিকর রাসায়নিক, পুরনো মোবাইল ফোন থেকে মুরগির হাড়— সবেতেই মানুষের ‘কর্তৃত্ব’ ও তার জেরে হওয়া ক্ষয়ক্ষতির প্রমাণ স্পষ্ট। যা প্রমাণ করে দেয়, অ্যান্থ্রোপসিন শুরু হয়ে গিয়েছে।
২০০৯ সাল থেকে একদল বিজ্ঞানী অ্যান্থ্রোপসিন সংক্রান্ত গবেষণা করে চলেছেন। আগামিকাল তাঁদের সর্বশেষ রিপোর্টটি প্রকাশিত হতে চলেছে। খাতায়কলমে বর্তমানে হলোসিন অধ্যায় চলছে। এই যুগ শুরু হয়েছিল ১১,৭০০ বছর আগে। শেষ গ্লেসিয়াল পিরিয়ড-এর পরে। কিন্তু এই মুহূর্তে বিজ্ঞানীদের দাবি, মানুষের কার্যকলাপের প্রভাবে হলোসিন শেষ হয়ে মধ্য বিংশ শতকেই অ্যান্থ্রোপসিন শুরু হয়ে গিয়েছে। এ নিয়ে দীর্ঘ বিতর্কও রয়েছে।
বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, জাপানের বেপু বে-তে সমুদ্রের নীচে মাটির স্তর পরীক্ষা করে মানুষের কার্যকলাপ ও তার জেরে বদলে যাওয়া পৃথিবীর প্রমাণ স্পষ্ট। এটি এমন একটি জায়গা, যা নতুন ভূতাত্ত্বিক অধ্যায় শুরুর প্রমাণ বহন করে। শুধু বেপু বে নয়, এমন ১২টি স্থান চিহ্নিত করেছেন ভূবিজ্ঞানীরা। যাদের বলা হচ্ছে ‘গোল্ডেন স্পাইক লোকেশন’। এর মধ্যে রয়েছে পোল্যান্ডের পিটল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ার প্রবাল প্রাচীর।
জাপানের অঞ্চলটি দীর্ঘদিন ধরে পর্যবেক্ষণ করছেন ‘এহিমি সেন্টার অব মেরিন এনভায়রনমেন্টাল স্টাডিজ়’-এর অধ্যাপক মিচিনোবু কুয়ায়ে। তাঁর তদন্তে ধরা পড়েছে, কী ভাবে এই অঞ্চলের সমুদ্রে মাছের সংখ্যা কমে গিয়েছে। সাগরের কাছে জমা হওয়া মাছের আঁশ থেকে বোঝা গিয়েছে তা। মিচিনোবু বলেন, ‘‘মানুষের হাত পড়েছে যে, সেটা স্পষ্ট। ক্ষতিকর রাসায়নিক, তেজস্ক্রিয় পদার্থ জমেছে সমুদ্রের নীচে মাটির স্তরে। ওগুলি পরীক্ষা করেই বোঝা যাচ্ছে, ঠিক কোন সময়ে হলোসিন শেষ হয়েছে, অ্যান্থ্রোপসিন শুরু হয়েছে।’’
বিংশ শতকের মাঝামাঝি থেকে মানুষের রাজত্বপাট নতুন যুগ শুরুর আরও বহু সূত্র রেখেছে। যেমন বায়ুমণ্ডলে হঠাৎ কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া। মিথেন ও অন্যান্য গ্রিনহাউস গ্যাসও বেড়ে গিয়েছে। পরমাণু বোমার পরীক্ষার জেরে তেজস্ক্রিয় বিকিরণ, সর্বত্র মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি এবং নতুন রোগ সংক্রমণ— এ সবই প্রমাণ বহন করেছে। এমনকি মুরগির হাড়েও মিলেছে মনুষ্য আগ্রাসনের প্রমাণ। ভূতত্ত্ববিদ ক্যারিস বেনেট বলেন, ‘‘এখনের মুরগির মাংস পরীক্ষা করলে দেখা যায় যে, মুরগির পূর্বপুরুষ বা বুনো মুরগির সঙ্গে তাদের মিল নেই। শরীরের আকার, কঙ্কালের গঠন, হাড়ের রসায়ন ও জেনেটিক গঠন— সব আলাদা।’’ এর থেকে স্পষ্ট মানুষ কী ভাবে প্রকৃতিকে নিয়ে খেলা করেছে, একপ্রকার ‘হ্যাক’ করে বদলে দিয়েছে তার নিজস্বতা।
‘অ্যান্থ্রোপসিন ওয়ার্কিং গ্রুপ’-এর সঙ্গে এক দশকের বেশি কাজ করছেন ব্রিটিশ ভূতত্ত্ববিদ ইয়ান জ়ালাসেউইচ। তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, পৃথিবীতে এমন কোনও জায়গা আছে, যেখানে মানুষের প্রভাব পড়েনি? এক মিনিট চুপ করে ছিলেন ইয়ান। তার পরে বলেন, ‘‘আন্টার্কটিকার পাইন আইল্যান্ড হিমবাহের থেকে বেশি জনমানবহীন স্থান মনে পড়ছে না।’’ যদিও কয়েক বছর আগে বিজ্ঞানীরা যখন পাইন আইল্যান্ডের হিমবাহের বরফ খুঁড়েছিলেন, তার গভীরে প্লুটোনিয়াম পাওয়া গিয়েছিল। যা দেখিয়ে দিয়েছে, ১৯৪৫ সাল থেকে যে পরমাণু অস্ত্রের ব্যবহার শুরু হয়েছে, তার তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়েছে হিমবাহের গভীরেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy