হিমালয় অঞ্চলে শতাধিক হিমবাহ দ্রুত গলে যাচ্ছে। —ফাইল চিত্র।
বিশ্ব উষ্ণায়নের জেরে ক্রমশ বদলে যাচ্ছে আবহাওয়া। এপ্রিলেই ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা পেরিয়েছে দক্ষিণবঙ্গে। আজ বিশ্ব জলবায়ু সংস্থা জানিয়েছে, গত বছর বিশ্বে সবচেয়ে বেশি পরিবেশগত বিপর্যয়ের সাক্ষী এশিয়াবাসী। ভারতেও পরিস্থিতি শোচনীয়। ইসরো জানিয়েছে, হিমালয় অঞ্চলে শতাধিক হিমবাহ দ্রুত গলে যাচ্ছে। সেই বরফগলা জলে বাড়ছে হ্রদের আয়তন। যা বড়সড় বিপর্যয়ের ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে দাবি বিজ্ঞানীদের।
হিমালয় অঞ্চলে ১০ হেক্টরের (এক লক্ষ বর্গ মিটার) চেয়েও বড় হ্রদগুলির প্রতি চারটির মধ্যে একটির আয়তন ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ১৯৮৪ সাল থেকে এই প্রবণতা শুরু। সাম্প্রতিক কালে পরিস্থিতির ক্রমশ অবনতি হচ্ছে। এর ফলে হিমবাহ গলা জল হ্রদের দু’কুল ছাপিয়ে বন্যার ঝুঁকিও ক্রমশ বাড়াচ্ছে।
হিমালয় অঞ্চলে দীর্ঘসময়ের উপগ্রহ মানচিত্র খতিয়ে দেখা গিয়েছে, অন্তত ১০ হেক্টর আয়তনবিশিষ্ট ২৪৩১টি গ্লেসিয়াল লেক (হিমবাহ গলা জল থেকে তৈরি হ্রদ) তৈরি হয়েছে ২০১৬-১৭ সালে। ১৯৮৪ থেকে ৬৭৬টি গ্লেসিয়াল লেকের আয়তন বেড়েছে অনেকেটা। এর মধ্যে ১৩০টিই ভারতে। এই ১৩০টির মধ্যে সিন্ধু নদী অববাহিকায় ৬৫টি, গঙ্গা নদী অববাহিকায় সাতটি এবং ব্রহ্মপুত্র নদী অববাহিকায় ৫৮টি হ্রদ রয়েছে বলে জানিয়েছে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো।
যে ৬৭৬টি হ্রদের উল্লেখ করা হয়েছে এর মধ্যে ৬০১টি হ্রদের আয়তন অন্তত দ্বিগুণ বৃদ্ধি পয়েছে। দেড় থেকে দুই গুণ আয়তন বেড়েছে ১০টি হ্রদ। দেড় গুণ আয়তন বেড়েছে এমন হ্রদের সংখ্যা ৬৫। উচ্চতার নিরিখে দেখা যাচ্ছে, চার থেকে পাঁচ হাজার মিটার উচ্চতায় রয়েছে ৩১৪টি এবং পাঁচ হাজার মিটার উচ্চতার উপরে রয়েছে ২৯৬টি হ্রদ।
হিমাচল প্রদেশে ৪০৬৮ মিটার উচ্চতায় গেপং গাথ গ্লেসিয়াল লেকের আয়তন বেড়েছে ১৭৮%। ১৯৮৯ সালে এই হ্রদের আয়তন ছিল ৩৬.৪৯ হেক্টর। সেটিই ২০২২ সালে বেড়ে হয়েছে ১০১.৩০ হেক্টর। অর্থাৎ বছরে ১.৯৬ হেক্টর আয়তন বৃদ্ধি পেয়েছে।
গোটা ঘটনায় উদ্বিগ্ন বিজ্ঞানীরা। প্রখ্যাত হিমবাহবিদ অনিল ভি কুলকার্নির আশঙ্কা, এই হ্রদ যে ভাবে বেড়ে চলেছে তা ভবিষ্যতে মানালি লে হাইওয়ে পর্যন্ত পৌঁছে যেতে পারে। তার জেরে প্রভাবিত হওয়ার আশঙ্কা ওই অঞ্চলের জনবসতি।
দিভেচা সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ-এর বিজ্ঞানী অনিল জানিয়েছেন, অবিলম্বে এই বিষয়ে পদক্ষেপ করা প্রয়োজন। এ জন্য প্রতিবেশী দেশগুলির সঙ্গেও আলোচনা প্রয়োজন। গত বছর সিকিমের লোনাক হ্রদের জল উপচে বন্যার প্রসঙ্গ তুলে ধরেছেন ওই হিমবাহবিদ। প্রসঙ্গত হিমবাহের জলে পুষ্ট লেকে হঠাৎ যদি জলের পরিমাণ বেড়ে যায়, তা থেকে ভয়ঙ্কর বন্যা সৃষ্টি হতে পারে।
ইসরো জানিয়েছে, হিমালয় পার্বত্য অঞ্চল এমনিতেই সংবেদনশীল। বিরাট আকারের হিমবাহের পাশাপাশি এখানকার বহু জায়গাই বরফে আবৃত। জলবায়ুর পরিবর্তন এখানে গুরুতর প্রভাব ফেলে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, শিল্পবিপ্লবের পর থেকেই গোটা পৃথিবী জুড়ে হিমবাহ গলে যাওয়ার হার ক্রমশ বাড়ছে। কমছে আয়তন। সেই জলই বহু নিচু অঞ্চলে জমে হ্রদ তৈরি হয়েছে।
প্রখ্যাত হিমবাহবিদ মিরিয়াম জ্যাকসন গত বছরেই বিশ্ব উষ্ণায়ন নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। তিনি জানান, হিমবাহ গলে আরও বহু জলাশয় তৈরি হবে। বাড়বে বহু জলাশয়ের আয়তনও। যা ভবিষ্যতে ওই অঞ্চলে বন্যা তৈরির ইঙ্গিতবাহী।
বিশ্ব জলবায়ু সংস্থা আজ জানিয়েছে, গত বছর গোটা বিশ্বে সবচেয়ে বেশি আবহাওয়াগত বিপর্যয়ের সাক্ষী থেকেছে এশিয়া। বিশ্বের গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধির থেকেও এই মহাদেশে উষ্ণতা বৃদ্ধির হার বেশি। গত বছর এশিয়ায় আবহাওয়াগত বিপর্যয়ের সংখ্যা ৭৯। তার জেরে দু’হাজারেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারান। প্রভাবিত ৯০ লক্ষেরও বেশি মানুষ।
পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে ভারতেও। তার জেরেই দেশবাসী তীব্র গরম ও খরায় যেমন ভুগেছেন আবার বর্ষাকালে দেশের বহু জায়গায় প্রবল বন্যা দেখা গিয়েছে। তাপপ্রবাহের জেরেই গত বছর এপ্রিল ও জুনে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ১১০ জন।এমনকি বসন্তেও তাপপ্রবাহ থেকে রেহাই পাননি দেশবাসী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy