Advertisement
১৮ নভেম্বর ২০২৪

তিস্তা চুক্তি নিয়ে আস্থা রাখুন, ঢাকার মন বুঝে মিনতি মমতার

তিস্তা নিয়ে আস্থা রাখুন ঢাকা সফরে এসে মানুষের আবেগের সুরটি বুঝে এটাই বার্তা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। প্রত্যয় জানালেন, ‘হাসিনাদির’ সঙ্গে আলোচনায় নিশ্চয়ই কিছু একটা সমাধান বেরিয়ে আসবে। আগামী কাল বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তাঁর বৈঠক। কিন্তু তার চব্বিশ ঘণ্টা আগেই, আজ ঢাকার শিল্পসংস্কৃতি জগতের মানুষদের সঙ্গে এক বৈঠকে ভারতীয় হাই কমিশনার পঙ্কজ সারনকে পাশে নিয়ে তিস্তা নিয়ে একটা ইতিবাচক বার্তাই দিয়ে দিলেন মমতা।

আন্তরিক: মুখোমুখি দুই নেত্রী। শুক্রবার মাঝরাতে ঢাকায় ভাষা শহিদ স্মারকে পুষ্পার্ঘ্য দেওয়ার পর শুভেচ্ছা বিনিময় শেখ হাসিনা ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। ছবি: বাপি রায়চৌধুরী।

আন্তরিক: মুখোমুখি দুই নেত্রী। শুক্রবার মাঝরাতে ঢাকায় ভাষা শহিদ স্মারকে পুষ্পার্ঘ্য দেওয়ার পর শুভেচ্ছা বিনিময় শেখ হাসিনা ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। ছবি: বাপি রায়চৌধুরী।

অগ্নি রায়
ঢাকা শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:৫২
Share: Save:

তিস্তা নিয়ে আস্থা রাখুন ঢাকা সফরে এসে মানুষের আবেগের সুরটি বুঝে এটাই বার্তা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। প্রত্যয় জানালেন, ‘হাসিনাদির’ সঙ্গে আলোচনায় নিশ্চয়ই কিছু একটা সমাধান বেরিয়ে আসবে।

আগামী কাল বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তাঁর বৈঠক। কিন্তু তার চব্বিশ ঘণ্টা আগেই, আজ ঢাকার শিল্পসংস্কৃতি জগতের মানুষদের সঙ্গে এক বৈঠকে ভারতীয় হাই কমিশনার পঙ্কজ সারনকে পাশে নিয়ে তিস্তা নিয়ে একটা ইতিবাচক বার্তাই দিয়ে দিলেন মমতা। তার পরে ঢাকা ও দিল্লির প্রত্যাশার পারদ অবশ্যই গগনচুম্বী হয়েছে। মমতা বলেন, “উপস্থিত অনেকেরই মনে হয়তো প্রশ্ন রয়েছে তিস্তা নিয়ে। আপনারা আমার উপর আস্থা রাখুন। বিষয়টি নিয়ে আপনাদের কিছু সমস্যা রয়েছে, আমাদেরও কিছু সমস্যা আছে। কাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আমার বৈঠক আছে। হাসিনাদির সঙ্গে বসে এ ব্যাপারে কথা বলে নেব। কোনও দুশ্চিন্তা করবেন না!”

মমতার কথা শেষ হওয়া মাত্র গোটা বলরুম ফেটে পড়ল হর্ষধ্বনি এবং হাততালিতে। একই রকম উচ্ছ্বসিত ঢাকায় অবস্থিত ভারতীয় দূতাবাসের শীর্ষ কর্তারাও। এক কর্তার কথায়, “এটি শুধু সদর্থক বার্তাই নয়, তার থেকে বড় কিছু।”

যে মমতা তিস্তা প্রশ্নে চার বছর ধরে অনড় ছিলেন, তিনি কী ভাবে আজ বিষয়টি নিয়ে দুশ্চিন্তামুক্ত হওয়ার ডাক দিলেন বাংলাদেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে? মনে করা হচ্ছে, এর কারণ মূলত দু’টি। একটি যদি মৌলবাদী জামাতের সঙ্গে তাঁর দলের যোগাযোগের অভিযোগ ওঠায় মমতার বর্তমান কোণঠাসা অবস্থা হয়, তা হলে দ্বিতীয়টি মোদী সরকারের অভ্যন্তরীণ কূটনৈতিক সক্রিয়তা।

কাল রাতে মমতা বিমান থেকে নামার পর তাঁর সঙ্গে প্রায় সর্ব ক্ষণ থেকেছেন ভারতীয় হাই কমিশনার পঙ্কজ সারন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নির্দেশে গত তিন মাস ধরে হোমওয়ার্ক চলেছে এই দিনটির জন্য। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে নরম করে তিস্তার জট ছাড়ানোর এই অসাধ্য সাধনের জন্য আজ তাঁরা প্রকাশ্যে কৃতিত্ব নিতে চাইছেন না ঠিকই। কিন্তু আজ মমতা নিজেই স্পষ্ট করে জানান কেন এত দিন জট ছাড়েনি। কংগ্রেস জমানায় বাংলাদেশ নীতি নিয়ে তাঁর সঙ্গে সঠিক ভাবে সমন্বয় করা হয়নি। এমনকী তাঁকে ভুল বোঝানো হয়েছিল, এমন অভিযোগও আজ বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক প্রতিনিধিদের সামনে করেছেন তৃণমূল নেত্রী। প্রস্তাব ছিল, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে বাকি ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সেতুবন্ধনের কাজটি তিনিই করুন। মমতার উত্তর, “সেতুবন্ধন অবশ্যই করব। কাঠবিড়ালিও সেতুবন্ধনে কাজে লাগে।” তিনি বলেন, “অনেকে অনেক রকম খেলা খেলে! আমাকে ভুল বোঝানো হয়েছিল। আগের বার আসতে গিয়েও ফিরে যেতে হয়েছিল। এ বার ব্যাগ গোছানোর সময়ও ভয় হচ্ছিল, ফের বিপত্তি না আসে।” কী বাধা, তার ব্যাখ্যা অবশ্য করেননি।

শুধু তিস্তাই নয়, বাংলাদেশের মানুষের মন জয় করতে আজ স্থলসীমান্ত চুক্তিটি নিয়েও সরব হয়েছেন মমতা। বলেছেন, “ইতিমধ্যেই আমি স্থলসীমান্ত চুক্তিটি নিয়ে বিতর্ক মিটিয়ে দিয়েছি। রাজ্যসভায় সরকার শীঘ্রই বিলটি পাশ করিয়ে নেবে। ছিটমহলবাসীদের পুনর্বাসন প্যাকেজটি এখন দেখা হচ্ছে। এটা একটা বড় কাজ হয়ে গেল।” আরও যে সব গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব এবং ঘোষণা তিনি করেছেন, তার মধ্যে রয়েছে দুই বাংলার চলচ্চিত্র বিনিময়ের জন্য একটি যৌথ কমিটি গঠন, পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উৎসব শুরু, বাংলাদেশ থেকে কলকাতা যাওয়া মানুষের থাকার জন্য রাজারহাটের কাছে ‘বঙ্গবন্ধু ভবন’ গড়া ইত্যাদি।

এ দিন সকালে মুজিবুর রহমানের বাসভবনে গিয়ে শ্রদ্ধা জানান মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, যত বার ঢাকায় আসেন, এই বাড়ি ঘুরে যান তিনি। ভবিষ্যতেও যাবেন। সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের বাসভবনে যান মমতা। তাঁর পরিবারের সঙ্গে সৌজন্য বিনিময় করেন। রাতে ভারতীয় হাই কমিশনের ভোজসভায় যান মমতা। সঙ্গে এ বাংলা থেকে যাওয়া শিল্পীরাও। সেখানেও মমতা তাঁদের ডেকে গান গাওয়ালেন। বাংলাদেশের অন্য গণ্যমান্যদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি হুসেইন মহম্মদ এরশাদও। এরশাদকেও গান গাইতে ডাকেন মমতা। তিনি এসে বলেন, “আমি গান গাই না, কবিতা লিখি। কিছু বই আছে আমার কবিতার।” মমতা তাঁকে বলেন, সেগুলোরই নাম বলুন। এরশাদ তাঁর কয়েকটি বইয়ের নাম বলে রেহাই পান।

মমতার সফরের আগেই বিদেশ মন্ত্রক জানিয়েছিল, তাঁর বাংলাদেশে যাওয়ার সিদ্ধান্তটাই একটা ইতিবাচক বিষয়। কূটনৈতিক সূত্রের খবর, মমতা নিজেই উদ্যোগী হন ঢাকা সফরের জন্য। তাঁর দলের টিকিটে রাজ্যসভার সদস্য হওয়া আহমেদ হাসান ইমরানের সঙ্গে জামাতে ইসলামির যোগের অভিযোগ, ইসলামি জঙ্গি সংগঠনের হাতে হাওয়ালার মাধ্যমে সারদার টাকা যাওয়ার অভিযোগ নিয়ে বিতর্ক একের পর এক মুখ পুড়িয়েছে তৃণমূল শীর্ষ নেত্রীর। হিন্দু ভোটব্যাঙ্কের মধ্যেও তার কিছু প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। আর এই টানাপড়েনের মধ্যে প্রধান বিরোধী শক্তি হিসেবে উঠে আসছে বিজেপি। কূটনীতিকরা মানছেন, মমতার এই কোণঠাসা পরিস্থিতিকে সুকৌশলে কাজে লাগিয়েই বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক জট খোলায় সাফল্য পেতে চাইছে বিজেপি। মমতা ঢাকায় আসার আগে তাঁকে শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। মার্চের প্রথম সপ্তাহেই ঢাকায় আসছেন বিদেশসচিব এস জয়শঙ্কর। সন্দেহ নেই মমতার সফরের ইতিবাচক সুরটাই বয়ে নিয়ে চলবেন তিনি।

অন্য বিষয়গুলি:

tista deal mamata banerjee agni roy dhaka
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy