Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
Switzerland

ধর্ষণের সংজ্ঞা বদলের পথে সুইৎজ়ারল্যান্ড

কোনও যৌন অপরাধকে কখন ধর্ষণ আখ্যা দেওয়া হবে? আইনের মাপকাঠিতে তার পরিধি নির্ণয় ঘিরে বহুদিন ধরেই বিভক্ত সুইৎজ়ারল্যান্ড।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সংবাদ সংস্থা
জেনিভা শেষ আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০২২ ০৮:২৯
Share: Save:

‘নো মিনস নো’— শারীরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে দু’পক্ষেরই সম্মতি যে সমান গুরুত্বপূর্ণ এবং তা না-থাকলে বিষয়টি যে অপরাধের পর্যায়ে পৌঁছে যায়, এই তর্কের দিকে আম ভারতবাসীর নজর টেনেছিল বলিউডের ছবি ‘পিঙ্ক’। ধীরে ধীরে যে সংলাপটি ছবির গণ্ডি পেরিয়ে যৌন সম্পর্কের নিরিখে অসম্মতির রূপক হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠে দেশ জুড়ে। এ বার এই প্রতিবাদ-বাক্যের প্রতিধ্বনি শোনা গেল সুইৎজ়ারল্যান্ডের পার্লামেন্টেও।

কোনও যৌন অপরাধকে কখন ধর্ষণ আখ্যা দেওয়া হবে? আইনের মাপকাঠিতে তার পরিধি নির্ণয় ঘিরে বহুদিন ধরেই বিভক্ত সুইৎজ়ারল্যান্ড। চলতি আইনের নিরিখে ধর্ষণের পরিধি আরও বিস্তারের প্রসঙ্গকে কেন্দ্র করে এ দিন ভোট গ্রহণ হয় পার্লামেন্টের নিম্ন কক্ষে। মূলত, সব সম্মতিহীন যৌন সম্পর্ককেই ধর্ষণ আখ্যা দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করে রাখা হয়েছিল এই ভোটাভুটি পর্ব। যেখানে ভোটদাতাদের কাছে অন্যতম বিকল্প ছিল— ‘ওনলি ইয়েস মিনস ইয়েস’। যার পক্ষে ভোট পড়ল ৯৯টি। বিপক্ষে ৮৮। আর ভোট দান থেকে বিরত থেকেছেন তিন জন।

বর্তমানে জোর করে যৌন সম্পর্ক স্থাপনকেই একমাত্র ধর্ষণের আখ্যা দেওয়া হয় সুইৎজ়ারল্যান্ডে। সঙ্গে নির্যাতিতা আদৌ বাধা দেওয়ার কোনও চেষ্টা করেছিলেন কি না তা-ও বিচার্য হয়। তবে নারী অধিকার আন্দোলনকারীদের দাবি, শুধুমাত্র জোর করে যৌন সম্পর্ক স্থাপনই নয়, শারীরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে যে কোনও রকমের অসম্মতি প্রকাশ করা হলেই তা ধর্ষণের আওতায় আনা হোক। তা ছাড়া, যাঁর উপর এই অত্যাচার হয়েছে তিনি পুরুষ না মহিলা, না কি তৃতীয় লিঙ্গের কেউ, তা-ও মুখ্য বিষয় হওয়া উচিত নয় কখনওই।

এ দিন পার্লামেন্টে বিতর্কের পারদ চড়েছে অনেকটাই। সোশ্যালিস্ট দলের পার্লামেন্ট সদস্য তামারা ফুনিসিয়েলোর মন্তব্য, ‘‘এটা জানা কথা যে প্রতিবেশীর মানিব্যাগ থেকে অর্থ তাঁকে না-জিজ্ঞেস করে তো আর তোলা যায় না! কারও বাড়িতে ঢোকার আগে অবশ্যই কলিং বেল বাজিয়ে তবেই ঢুকতে হবে, সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু যৌন সম্পর্কের ক্ষেত্রে সম্মতিকে কোনও গুরুত্বই দেওয়া হচ্ছে না। সেই আঙ্গিকে দেখতে গেলে, আমার বাড়িও আমার শরীরের চেয়ে বেশি নিরাপত্তা পাচ্ছে!’’ এই তর্কে সম্মতি জানিয়ে অন্য এক সদস্য রাফায়েল মাহেম বলেন, ‘‘কারও শরীর তো আর খোলা বার নয়!’’

যদিও দক্ষিণপন্থী একাধিক সদস্যের দাবি, সম্মতির বিষয়টির সুক্ষ্ম বিচার করতে গেলে বিভ্রান্তি আরও বাড়বে এবং লাভের লাভ অধরাই থেকে যাবে। এ দিন সুইস পার্লামেন্টের নিম্ন কক্ষের ভোট হয়। এর আগেই ‘কাউন্সিল অব স্টেটস’ অর্থাৎ উচ্চ কক্ষের সদস্যেরা এই নিয়ে তাঁদের মত জানিয়েছিলেন। এ বার দুই কক্ষকেই বিষয়টি নিয়ে ঐক্যমত্য হতে হবে। সরাসরি গণতান্ত্রিক দেশ হওয়ার সুবাদে এ নিয়ে এর পর ভোটদান পর্বে অংশ নেবেন সুইৎজ়ারল্যান্ডের সাধারণ মানুষ। যার নিরিখেই ধর্ষণ-আইনে বদল ঘটানো যেতে পারে। সে দিক থেকে দেখতে গেলে এই বিতর্কের নিষ্পত্তির পথ এখনই প্রশস্ত হল এমনটা বলা চলে না। তবে মহিলাদের অধিকার এবং যৌন অপরাধের শিকার হওয়া মানুষদের নিয়ে চলা দীর্ঘ আন্দোলন এ দিনের এই পদক্ষেপের ফলে যে বড় সাফল্যের মুখ দেখল তা অস্বীকার করার জায়গা নেই বলেই মত বিভিন্ন আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের।

অন্য বিষয়গুলি:

Switzerland rape
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy