রুবি ব্রিজেস।
সময়ের ফারাক ঠিক ষাট বছরের। ১৯৬০ সালের ১৪ নভেম্বর নিউ অর্লিয়েন্সের উইলিয়াম ফ্রান্জ় এলিমেন্টারি স্কুলে পা রেখেছিল ছ’বছরের রুবি ব্রিজেস। আমেরিকার ইতিহাসে সেই প্রথম কোনও কৃষ্ণাঙ্গ পড়ুয়া স্কুলের চৌকাঠে পা রাখল। ষাট বছরের মাথায় আরও এক কৃষ্ণাঙ্গী মহিলা ইতিহাস তৈরি করলেন। তিনি কমলা হ্যারিস।
সময়ের এই ফারাকের মধ্যে সেতুবন্ধনের কাজ করছে একটা বই। ‘রুবি ব্রিজেস: দিস ইজ় ইয়োর টাইম’। ৬৬ বছরের রুবি এখন নাগরিক অধিকাররক্ষা কর্মী। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফল চূড়ান্ত হওয়ার পরেই ছোট্টবেলার রুবি আর এখনকার কমলার একটি ছবি ঘুরছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। সান ফ্রান্সিসকোর শিল্পী ব্রিয়া গোয়েলারের সেই সৃষ্টি শেয়ার করেছেন রুবি নিজেও। ছবিতে সাদা দেওয়ালে ছ’বছরের রুবির ছায়া, পাশে দাঁড়িয়ে কোট-প্যান্ট পরা কমলা।
আসলে ১৯৬৪ সালে সাদা ফ্রক পরা ছোট্ট রুবিকে প্রথমবার এঁকেছিলেন আর এক আমেরিকান শিল্পী নরম্যান রকওয়েল। রুবির বাঁ হাতে ধরা ছিল বই আর রুলার। পাশে মার্শালরা। সেটা ছিল তার স্কুলে যাওয়ার প্রথম দিন। সেই ছবি পরে গোটা বিশ্বে কৃষ্ণাঙ্গদের অধিকাররক্ষা আন্দোলনের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছিল। সেই ছবিকেই এখন নতুন এক রূপ দিয়েছেন গোয়েলার।
আমেরিকায় বসবাসকারী কৃষ্ণাঙ্গ পড়ুয়ারা যখন প্রথম স্কুলে যাওয়ার অধিকার পায়, তা একেবারেই ভাল চোখে দেখেনি শ্বেতাঙ্গ সমাজ। রুবি জানিয়েছেন, প্রথম দিনই ৫০০ জন শ্বেতাঙ্গ পড়ুয়া স্কুল ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিল। কোনও দিন ফিরে আসেনি। রুবি যখন স্কুলে ঢুকছেন, বাইরে তখন শ’খানেক শ্বেতাঙ্গ অভিভাবক বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। কোনও ‘কালো মেয়ের’ সঙ্গে তাঁদের সন্তানরা এক ক্লাসে পড়বে না বলে।
তবে এত ঘৃণা আর বিদ্বেষের আবহেও খুদে রুবি তখন পাশে পেয়েছিল বারবারা হেনরিকে। তার ক্লাসটিচার। বস্টন থেকে তিনি পড়াতে এসেছিলেন রুবিকে। কারণ? স্কুলের অন্য শিক্ষিকারা কেউ পড়াতে চাননি। ছোট্ট রুবি তখনই জেনে গিয়েছিল, আগামীর পথ কতটা রুক্ষ। সাক্ষাৎকারে বারবারার প্রতি শ্রদ্ধাশীল তিনি। জানিয়েছেন, প্রথমে বাইরের সেই ভিড়টা আর তাঁর শিক্ষিকার মুখের মধ্যে কোনও ফারাক খুঁজে পাননি তিনি। কিন্তু আস্তে আস্তে ‘মিস হেনরি’কেই আপন করে নিয়েছিল ছোট্ট রুবি। গোটা একটা বছর একা শুধু সে-ই করত ‘মিস হেনরি’র ক্লাস। স্কুলের প্রিন্সিপাল বাকি পড়ুয়াদের রুবির ছায়া মাড়াতে দিতেন না। তারা থাকত আলাদা ঘরে। পরে মিস হেনরি-ই আইনের ভয় দেখিয়ে বাকি শিশুদের সঙ্গে এক ঘরে তার পড়াশোনার ব্যবস্থা করেন। প্রথম বার বন্ধু পায় রুবি।
অনেকগুলো বছর শিক্ষকতা করে কাটিয়েছেন রুবি। বলেছেন, ‘‘কোনও শিশুই কারও গায়ের রং দেখে তাকে অপছন্দ করতে শেখে না। আমরা বড়রাই তাদের মনে এই ভাব ঢুকিয়ে দিই। আর এ ভাবেই বর্ণবিদ্বেষ বেঁচে থাকে।’’ এক হিংসায় ছেলেকে হারিয়েছেন। তবু বলেছেন, ‘‘যে আমার সন্তানকে মেরেছিল, তাকে ঠিক আমারই ছেলের মতো দেখতে ছিল। আমরা যেমনই দেখতে হই না কেন, শত্রু আমাদের একটাই— অশুভ শক্তি। আমরা এক হয়ে না লড়লে এই অশুভ শক্তিই শেষে জিতে যাবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy