Advertisement
১৮ নভেম্বর ২০২৪
প্রবাসে পুজো

ছোট্ট প্রতিমার পাশে ছ’ফুট লম্বা কলাবৌ

পুজো করেন এক জন মহিলা। সাধারণত, বাঙালির ঘরে ঘরে তো মায়েরাই পুজো করেন। সেই ঘরোয়া রীতির কথা মাথায় রেখেই এমন সিদ্ধান্ত। সর্বজনীন এই পুজোয় শুধু ভারতীয় নয়, ব্রাজ়িলে যাঁরা থাকেন, সকলের জন্যই দ্বার উন্মুক্ত থাকে।

গত বছর দর্পণ বিসর্জন। ছবি: প্রতিবেদক

গত বছর দর্পণ বিসর্জন। ছবি: প্রতিবেদক

চৈতালি চট্টোপাধ্যায়
সাও পাওলো (ব্রাজিল) শেষ আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০১৮ ০১:৪০
Share: Save:

আরব সাগর পেরিয়ে, আফ্রিকা মহাদেশ পেরিয়ে, অতলান্তিক মহাসাগরও পেরিয়ে সুদূর দক্ষিণ আমেরিকার ব্রাজ়িলেও দুগ্গাঠাকুর হাজির হয়েছেন। দক্ষিণ আমেরিকা জুড়ে শুধু ব্রাজ়িলের সাও পাওলোতেই চিন্ময়ীর আরাধনা হয়। যদিও ঋতুটায় একটু গোলমাল হয়ে যায়। ব্রাজ়িল দক্ষিণ গোলার্ধে। তাই আমরা শারদপ্রাতে নয়, বসন্ত সমীরণে দুর্গোৎসব পালন করি।

এখানে পেঁজা তুলোর আকাশ নেই, কাশ ফুল নেই, আপিস-কাছারিতে ছুটি নাই। তবু সব প্রতিকূলতা পেরিয়ে গত সাত বছর ধরে সাও পাওলোর ছ’-সাতটি বাঙালি পরিবার মিলে দুর্গাপুজোর আয়োজন করছি। এই বছর আমাদের পুজো আট বছরে পা দেবে।

পুজো করেন এক জন মহিলা। সাধারণত, বাঙালির ঘরে ঘরে তো মায়েরাই পুজো করেন। সেই ঘরোয়া রীতির কথা মাথায় রেখেই এমন সিদ্ধান্ত। সর্বজনীন এই পুজোয় শুধু ভারতীয় নয়, ব্রাজ়িলে যাঁরা থাকেন, সকলের জন্যই দ্বার উন্মুক্ত থাকে। সকাল থেকে ভিড় জমে অঞ্জলি দেওয়ার জন্য। ব্রাজিলীয়রা আপ্রাণ চেষ্টা করেন সংস্কৃত মন্ত্র উচ্চারণের। অঞ্জলি শেষ হলে কেউ কেউ আবার মন্ত্রের অনুবাদের জন্যও আবদার করে বসেন।

লোকবল কম থাকায় আমরা চার দিন নয়, এক দিনেই পুজোর আয়োজন করি। পুজোর ঠিক এক মাস আগে সবাই মিলে আলোচনা করে পুজোর স্থান-কাল, মেনু, কারা ভোগ বানাবে, সব কিছু ঠিক করে নেওয়া হয়। বাড়িতেই বানানো হয় নানা ধরনের মিষ্টি। সব থেকে ‘ডিম্যান্ড’ থাকে নারকেল নাড়ুর! গত বছর আমরা একটা ছোট্ট সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করেছিলাম।

সাধারণত দশকর্মার জিনিসগুলো কলকাতা থেকেই আনা হয়। তবে কিছু কেনাকাটা তো বাকি-ই থেকে যায়। যেমন কলাবৌ। গত বছর আমার ব্রাজ়িলীয় গাড়িচালককে বলেছিলাম, কলাবৌ জোগাড় করতে। এ দেশে কলাগাছ পাওয়া খুব অসুবিধের নয়। কিন্তু মুশকিল হল, চালককে বোঝানো। অনেক বোঝানোর পরে তিনি বললেন— ‘Esposa de Banana’? পর্তুগিজ ভাষায় ‘Esposa’ মানে বউ। না না, কলাগাছের বউ নয়। কলাবৌ! ফের বোঝানোর পর্ব শুরু হল। বললাম, ‘এস্পোসা দি গণেশা’ আনতে হবে। ভারতীয় পরিবারে কাজ করার সুবাদে তিনি ‘গণেশা’কে ভাল করেই চেনেন। ‘গণেশের বউ’ শুনে আহ্লাদে আটখানা হয়ে চলে গেলেন। ফিরলেন নিজের সমান, ৬ ফুট লম্বা কলাবৌ নিয়ে। আমাদের একচালার ছোট্ট দুর্গাপ্রতিমার গায়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ল সেই কলাবৌ। কী কাণ্ড!

এ ভাবেই আমোদ-প্রমোদ করে কাটিয়ে দিই আমরা দুর্গাপুজোর দিনটা। ভোর পাঁচটায় উঠে ভোগের রান্না করে, নাড়ু পাকিয়ে, কোনও রকমে সেজেগুজেই ছুট। বেলপাতা দিয়ে সাজাই প্রবেশপথ, আলপনা দিই ঠাকুরের সামনে। গাঁদা ফুলের মালাও তৈরি করে রাখি আগের দিন। মিউজ়িক সিস্টেমে শোনানো হয় ঢাকের বাদ্যি। দিন কয়েক পরে একটা ছুটির দিন দেখে বিজয়া সম্মেলনও করি আমরা। সে দিন শুধু একটাই মন্ত্র উচ্চারিত হয়— ‘ভোজন রূপেণ সংস্থিতা’!

অন্য বিষয়গুলি:

São Paulo Durga puja Brazil
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy