দুই ভাই: শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া এবং প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষে। ফাইল চিত্র।
প্রায় দেড় দশক আগেই সাবধানবাণী শুনিয়েছিলেন অর্থনীতিবিদদের একাংশ। জানিয়েছিলেন, তামিল বিদ্রোহীদের নির্মূল করতে মরিয়া শ্রীলঙ্কার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট (বর্তমান প্রধানমন্ত্রী) মাহিন্দা রাজাপক্ষের সামরিক খাতে বিপুল ব্যয়ের সিদ্ধান্ত সে দেশের অর্থনীতির ভিত দুর্বল করে দিতে পারে। ভারত মহাসাগরীয় দ্বীপরাষ্ট্রটির বর্তমান পরিস্থিতি বলছে, সেই আশঙ্কা পুরোপুরি অমূলক ছিল না।
১৯৪৮ সালে ব্রিটিশ শাসকদের থেকে স্বাধীনতা লাভ ইস্তক শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি কখনও এমন খারাপ সময়ের মধ্য দিয়ে যায়নি। অতিমারি পরিস্থিতি থেকেই ধীরে ধীরে আর্থিক বিপর্যয়ের সম্ভাবনা প্রবল হচ্ছিল। ২০১৯-এর শেষপর্বে শ্রীলঙ্কার বিদেশই ঋণের পরিমাণ ছিল মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের (জিডিপি) ৯৪ শতাংশ। ২০২১-এর শেষ পর্বে তা ১১৯ শতাংশে পৌঁছয়। ফলে বিদেশি ঋণ পাওয়ার পথ কার্যত বন্ধ হয়ে যায়।
জানুয়ারির গোড়াতেই সে দেশে মূল্যবৃদ্ধি ২৫ শতাংশ ছুঁয়ে রেকর্ড গড়েছিল। ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ পর্বে তলানিতে ঠেকেছিল বিদেশি মুদ্রার ভান্ডার। প্রাক অতিমারি পরিস্থিতির তুলনায় বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয় কমে যায় প্রায় ৭৫ শতাংশ। তার আগে শ্রীলঙ্কার বাজারে চিনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব বৃদ্ধি নিয়েও অর্থনীতিবিদের একাংশ সাবধানবাণী শুনিয়েছিলেন। বেজিংয়ের ঋণের ফাঁদ আর্থিক বিপর্যয় আনতে পারে বলে ভবিষ্যবাণী করেছিলেন। তা মিলে গিয়েছে।
আন্তর্জাতিক বন্ড, এশীয় উন্নয়ন ব্যাঙ্কের পাশাপাশি কলম্বোর বিদেশি ঋণের বড় অংশ চিনের থেকে নেওয়া। সঙ্কটের সময় শি জিনপিং সরকারকে সে ভাবে শ্রীলঙ্কার পাশে দাঁড়াতে দেখা যায়নি। বরং আগামী দু’বছরের মধ্যে পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য দেওয়া প্রায় ৩৫০ কোটি ডলার (প্রায় ২৬,৫৭৫ কোটি টাকা) পরিশোধের বার্তা দেওয়া হয়েছে চিনের তরফে।
চলতি বছরের মধ্যে আন্তর্জাতিক ঋণ এবং সুদ মেটাতে অন্তত ৬৯০ কোটি ডলার (প্রায় ৫২,৪০০ কোটি টাকা) ব্যয় করতে হবে শ্রীলঙ্কাকে। অথচ সরকারি তথ্য বলছে, বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয় মাত্র ২৩১ কোটি ডলারে (প্রায় ১৭,৫৪০ কোটি টাকা) এসে ঠেকেছে।
বিদেশি মুদ্রার ভাঁড়ারে টান পড়ার প্রভাব পড়ে আমদানিতে। বিশেষত, জ্বালানি তেল কেনা কমে যায় অনেকটাই। আর তার পরিণতিতে আকাশ ছোঁয় মূল্যবৃদ্ধি। শ্রীলঙ্কায় এখন এক কাপ চায়ের দাম ১০০ টাকা! এক কিলোগ্রাম চাল ৫০০ টাকা। চিনির কিলোগ্রাম ৪০০ ছুঁতে চলেছে। এমনকি, শিশুখাদ্যের দামও সাধারণের নাগালের বাইরে। অপ্রতুল জীবনদায়ী ওষুধ। কাগজের অভাবে বন্ধ স্কুল-কলেজের পরীক্ষা।
এই পরিস্থিতিতে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষের সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছে শ্রীলঙ্কার আমজনতার বড় অংশ। নয়াদিল্লির তরফে সঙ্কটের সময় ১০০ কোটি ডলার (প্রায় ৭,৬০০ কোটি টাকা) ঋণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy