বিশ্ব জুড়ে স্বাস্থ্যের খাতে গত বছর মোট ১২০০ কোটি ডলার বরাদ্দ করেছিল আমেরিকা। এ বছর থেকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সরকার যদি বছরে সেই পরিমাণ খরচ বরাদ্দ না করে, তা হলে আগামী ১৫ বছরের মধ্যে মৃত্যু হতে পারে অন্তত আড়াই কোটি মানুষের। ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় বার আমেরিকার প্রেসিডেন্টের গদিতে বসার পরেই যখন ইউএসএড (ইউএস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট)-এর দেওয়া অনুদানের অর্থ ৯০ শতাংশ কমিয়ে দেওয়ার কথা ঘোষণা করা নিয়ে দুশ্চিন্তায় নানা মহল, ঠিক তখনই স্বাস্থ্যে বরাদ্দ নিয়েও সিঁদুরে মেঘ দেখছেন বিশেষজ্ঞেরা।
নেচার পত্রিকায় প্রকাশিত একটি রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, আমেরিকা বরাবর বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলির স্বাস্থ্য পরিষেবার জন্য সবচেয়ে বেশি অর্থ বরাদ্দ করে এসেছে। এর ফলে প্রায় এক দশক ধরে নানা ধরনের রোগের চিকিৎসায় গবেষণা চালিয়ে যাওয়াও সম্ভব হয়েছে। এইচআইভি, এডস, যক্ষ্মার চিকিৎসায় কিংবা অন্তঃসত্ত্বা এবং শিশুদের স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য নানা গবেষণা চালানো হয়েছে। এই ধরনের গবেষণার ফলেই ২০১০ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে সারা বিশ্বে এইচআইভির জেরে মৃত্যুর হার ৫১ শতাংশ কমেছে। ২০১৫ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে যক্ষ্মায় মৃত্যুর হারও কমেছে প্রায় ২৩ শতাংশ।
বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, যদি এই বিপুল পরিমাণ আর্থিক সহায়তা ট্রাম্প প্রশাসন বন্ধ করে দেয়, তা হলে সবচেয়ে বেশি হয়তো প্রভাবিত হবেন এইচআইভি-এডস রোগীরা। ২০৪০ সালের মধ্যে এডসেই মৃত্যু হতে পারে দেড় কোটি মানুষের। এঁদের মধ্যে বেশির ভাগই হতে পারেন আফ্রিকার ছ’দেশের বাসিন্দা , যেখানকার স্বাস্থ্য পরিকাঠামো একেবারেই উন্নত নয়। একই ভাবে, যক্ষ্মা, ম্যালেরিয়ার প্রকোপও বাড়তে পারে কয়েক গুণ। ব্যাপক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন অন্তঃসত্ত্বা ও শিশুরা। কারণ, এখনও পর্যন্ত আমেরিকার বিপুল আর্থিক সহায়তার জন্যই অন্তত ২৫টি দেশের শিশুদের স্বাস্থ্য নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে। এই সাহায্য বন্ধ করে দেওয়া হলে উন্নতমানের চিকিৎসার অভাবে ২০৪০ সালের মধ্যে ৮০ লক্ষ শিশুর মৃত্যুও হতে পারে। বহু সংখ্যক অন্তঃসত্ত্বার প্রাণসঙ্কটের আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি ট্রাম্প সরকারের তরফে ঘোষণা করা হয়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করছে তারা। এ ছাড়াও, বেশ কিছু ক্ষেত্রে অনুদান বন্ধ করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। এই আবহে আমেরিকা স্বাস্থ্য খাতেও বরাদ্দ অর্থ সাহায্য বন্ধ করে দিলে বিশ্বে যে ব্যাপক স্বাস্থ্য-সঙ্কট দেখা দিতে পারে, তা নিয়ে আতঙ্কে রয়েছেন বিশেষজ্ঞেরা।
সংবাদ সংস্থা
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)