মহাকাশ ছোঁয়ার উল্লাস। রিচার্ড ব্র্যানসনের কাঁধে শিরীষা। ছবি পিটিআই।
গোড়াতেই বাদ সেধেছিল আবহাওয়া। তবে আমেরিকার নিউ মেক্সিকোর মরুশহর ট্রুথ অর কনসিকোয়েন্সেসের খানিক দূরে মরুভূমি থেকে নির্দিষ্ট সময়ের ঘণ্টা দুয়েক পরে (স্থানীয় সময় সকাল ৮টা ৪০ মিনিটে) মহাকাশের উদ্দেশে পাড়ি দিল ভার্জিন গ্যালাক্টিকের মহাকাশযান ভিএসএস ইউনিটি বা ইউনিটি-২২। যার অন্যতম যাত্রী ছিলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত এরোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার শিরীষা বান্দলা। কল্পনা চাওলা, সুনীতা উইলিয়ামসের পরে আরও এক ভারতীয় বংশোদ্ভূত মহিলা মহাকাশে পাড়ি দেওয়ার কৃতিত্ব অর্জন করলেন।
শিরীষার সঙ্গে আজ মহাকাশে পাড়ি দেন ভার্জিন গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ব্রিটিশ ধনকুবের রিচার্ড ব্র্যানসন নিজেও। সাইকেলে চড়ে আজ মূল মহাকাশযান পর্যন্ত পৌঁছন ব্র্যানসন। তার পরেই শিরীষা-সহ তাঁর তিন সহযাত্রীকে জড়িয়ে ধরেন তিনি। রিচার্ড নিজে টুইটারে এই ভিডিয়োটি শেয়ার করেছেন। সেই সঙ্গে লিখেছেন, ‘‘মহাকাশে যাওয়ার এক সুন্দর দিন আজ।’’ যে ছ’জন মহাকাশচারী আজ ইউনিটি-২২-এ সফর করলেন, তাঁদের মধ্যে দু’জন পাইলটও রয়েছেন।
মহাকাশে পাড়ি দিলেও শিরীষাদের এই সফর অবশ্য আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন (আইএসএস) পর্যন্ত ছিল না। আকাশের অন্তিম প্রান্তে যেখানে মহাকাশ শুরু হচ্ছে, সেখান থেকে ঘুরে ফিরে আসে তাঁদের মহাকাশযান। পৃথিবীর মাটি ছাড়ার পরে প্রথমে একটি জোড়া ‘মাদারশিপ’ ৫০ হাজার ফুট পর্যন্ত উঠে ইউনিটি-২২-কে মুক্ত করে দেয়। ‘মাদারশিপ’ থেকে ইউনিটি-২২ মুক্ত হওয়ার পরেই তার দু’টি ইঞ্জিন চালু হয়ে যায়।
এর পরেই ঘণ্টায় প্রায় ৩৭০০ কিলোমিটার গতিবেগে ইউনিটি-২২ মহাকাশের প্রান্তে ৮০ কিলোমিটার উচ্চতায় ওঠে। সিট বেল্ট খোলা যায় এই সময়ে। তখনই প্রায় পাঁচ মিনিট ভার-শূন্য অবস্থায় থাকেন শিরীষারা। বিমানের ১৭টি জানলা থেকে পৃথিবীর অর্ধচন্দ্রাকার আকৃতি চাক্ষুষ করেন তাঁরা। এর কিছু ক্ষণের মধ্যেই পৃথিবীতে ফেরার তোড়জোড় শুরু করে ইউনিটি-২২। সব মিলিয়ে ৯০ মিনিটের ছিল এই মহাকাশ সফর।
ইউনিটি-২২-এর এই সফর মহাকাশ পর্যটনের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত খুলে দেবে বলে মনে করা হচ্ছে। এ বছরেই আরও দু’বার মহাকাশে যাত্রী পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে ব্র্যানসনের সংস্থা ভার্জিন গ্যালাক্টিকের। আগামী বছর থেকে পুরোপুরি বাণিজ্যিক ভাবে চালু হবে প্রকল্পটি। তার পর বছরে ৪০০টি মহাকাশ-উড়ানের পরিকল্পনা রয়েছে ব্র্যানসনের।
ইতিমধ্যেই ৬০০টি টিকিট বিক্রি হয়ে গিয়েছে বলে সংস্থা সূত্রে খবর। টিকিটের দাম দুই থেকে আড়াই লক্ষ ডলার। ক্রেতাদের মধ্যে রয়েছেন অন্তত ৬০টি দেশের নাগরিক।
২০০৪ সালে ব্র্যানসন যখন এই সংস্থাটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, তখনই বলেছিলেন, ‘‘ছোটবেলা থেকেই মহাকাশে যাওয়ার স্বপ্ন দেখতাম। আর আমি মনে করি, মহাকাশে যাওয়ার অধিকার সকলের রয়েছে।’’ মহাকাশ সফর সেরে পৃথিবীতে ফিরে আসার পরে তিনি আরও নতুন কিছু ঘোষণা করবেন বলে প্রতিশ্রুতিও দিয়ে রেখেছেন। জানিয়েছেন, আরও বেশি করে মানুষকে মহাকাশে যাওয়ার সুযোগ করে দেবেন তিনি।
এর আগে ২০০০ সালেও আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে পর্যটকেরা গিয়েছেন। তবে সেগুলি ছিল রাশিয়ার বানানো রকেট।
আজ মহাকাশ সফরের আগে টুইটারে স্পেস-এক্স-এর প্রতিষ্ঠাতা ইলন মাস্কের সঙ্গে নিজের একটি ছবি পোস্ট করেন ব্র্যানসন। মাস্কের সংস্থা কিন্তু মহাকাশ পর্যটনে রিচার্ডের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী। সেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা সরিয়ে রেখেই অবশ্য ব্র্যানসনকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন মাস্ক। মহাকাশ দৌড়ে ব্র্যানসনের আর এক প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যামাজ়ন প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজ়োস। আগামী ২০ জুলাই নিজের ‘নিউ শেফার্ড’ যান চালিয়ে তাঁরও মহাকাশে যাওয়ার কথা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy